অপটিক্যাল ফাইবার কি? অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে (A to Z)

অপটিক্যাল ফাইবার কি | অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে: অনেকের মনে প্রশ্ন আসে– অপটিক্যাল ফাইবার কি বা অপটিক্যাল ফাইবার বলতে আসলে কি বোঝায়? কেননা এই শব্দটির সাথে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে বিস্তারিত খুব কম সংখ্যক মানুষই জানি। আপনি কি অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে এ টু জেড জানতে চান? আপনি কি অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে এর সুবিধা বা অসুবিধা কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত অবগত হতে চান? 

অপটিক্যাল ফাইবার কি | অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে (A to Z)

যদি আপনার উত্তর হয়ে থাকে হ্যাঁ, তাহলে বলবো আপনি একেবারে সঠিক জায়গায় এসেছেন। কেননা আজকের এই প্রবন্ধে আমরা অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে এবং অপটিক্যাল ফাইবারের বৈশিষ্ট্য ও আরো বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই অপটিক্যাল ফাইবার কি | অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে। 

অপটিক্যাল ফাইবার কি | অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে

অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে কাজ বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি একটি স্বচ্ছ ও নমনীয় ফাইবার। যেটা আলোর মাধ্যমে একটি তথ্য বা ডেটা প্রেরণ করে যেখানে আলোক সংকেত ডেটা হিসেবে ডিকোড করা হয়। তাই অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে বলতে গেলে বলা যায়– এক ধরনের পাতলা তার যেটাকে কাজ বা প্লাস্টিকের দ্বারা তৈরি করা হয়েছে তাই হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার। 

অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে ট্রান্সমিশন কেবল প্রযুক্তির নতুন একটি রূপ। কেননা এই অপটিক্যাল ফাইবারগুলো কতগুলো একত্রে সমন্বয় ঘটিয়ে ফাইবার অপটিক ক্যাবল গঠিত হয়। এটি মানুষের চুলের চেয়ে কিছুটা পুরো ব্যাসের ফাইবার, যা ইন্টারনেট এবং গিটার ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যবহৃত হয়। 

অপটিক্যাল ফাইবারের কয়টি অংশ এবং কি কি?

বেশিরভাগ মানুষের প্রশ্ন অপটিক্যাল ফাইবার সাধারণত কয়টি অংশ থাকে? তাদের সেই প্রশ্নের সমাধানে বলছি– অপটিক্যাল ফাইবারের প্রধান অংশ তিনটি। সেগুলো হলো:

  • কোর 
  • ক্ল্যাডিং
  • প্লাস্টিক জ্যাকেট

অপটিক্যাল ফাইবার কত প্রকার ও কি কি?

অপটিক্যাল ফাইবারের নির্দিষ্ট কোন প্রকারভেদ নেই। কেননা এটি মূলত বিভিন্নভাবে বিভক্ত। যা এ পর্যায়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আপনাদেরকে জানাবো। মূলত অপটিক্যাল ফাইবারের প্রকার নিম্ন বর্ণিত বিষয় এর উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। যথা:

  • প্রতিসরণ সূচক
  • ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান
  • আলোর বিচ্ছুরণ

প্রতিসরণ সূচকের উপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা:

  • Mono Mode Optical Fibre- কোর অংশ সরু, ব্যাস প্রায় 5µm বা তার কম, ক্ল্যাডিং তুলনামূলকভাবে বড়।
  • Multi-mode Optical Fiber

আবার এই মাল্টি মোড অপটিক্যাল ফাইবার পুনরায় দুইভাগে বিভক্ত। যথা:

  • Step Index Multi-Mode Fiber
  • Graded Index Multi-Mode Fiber

ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের উপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই ভাগে বিভক্ত। যথা: 

  • Plastic Optical Fibers – Polymethylmethacrylate নামক উপাদান দিয়ে তৈরি।
  • Glass Fibers – অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাচের ফাইবার দিয়ে গঠিত।

আবার আলোর বিচ্ছুরণের উপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলো:

  • Single-Mode Fibers – এই ফাইবারগুলি তুলনামূলক দীর্ঘ দূরত্বে সংকেত প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • Multimode Fibers – এই ফাইবারগুলি স্বল্প-দূরত্বের সংকেত প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলস কি | অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এর অংশ কয়টি ও কি কি?

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল হলো, অত্যন্ত সরু এক ধরনের কাঁচের তন্তু। এর মূলত প্রধান কয়েকটি অংশ রয়েছে। সেগুলো হলো:

  • কোর
  • ক্ল্যাডিং
  • বাফার এবং
  • জ্যাকেট

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এর প্রকারভেদ মূলত দুইটি। সেগুলো হলো:

  • সিঙ্গেল মোড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল
  • মাল্টিমোড অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল।

এদের মধ্যে মাল্টিমোড অপটিক্যাল ফাইবার আবার দুই প্রকার। যথা:

  • স্টেপ ইনডেক্স মাল্টিমোড
  • গ্রেডেড ইনডেক্স মাল্টিমোড

অপটিক্যাল ফাইবার কিভাবে কাজ করে?

অপটিক্যাল ফাইবার মূলত একটি নির্দিষ্ট নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এখানে আলোর রশনি গুলোকে ব্যবহার করে ভারী পরিমাণে তথ্য প্রেরণ করা হয়। সম্পূর্ণ কেবলে শুধুমাত্র আলোর ভ্রমণ একটি পয়েন্ট অন্য একটি পয়েন্টে পর্যন্ত চলতে থাকে আর তারের মধ্যে আলোর ভ্রমণ সমান্তরাল ভাবে হতে থাকে। 

যেহেতু ফাইবার তার আকারে সমান নয় আর তাই আলোর রশ্নি গুলো তারের ভেতরে বারবার ব্রাউন্স খেয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। অপটিক্যাল ফাইবার দ্বারা যেখানে ডাটা গুলোকে গ্রহণ করা হয় এবং সেখানে ট্রান্সমিটার লাগানো থাকে। ট্রান্সমিটারের সাথে সংযুক্ত ফাইবার তারের মাধ্যমে ডাটা গুলোকে আলোর মাধ্যমে পাঠায় এবং ট্রান্সমিটার ইলেকট্রিক পাল ইনফরমেশন গুলোর সমাধান করে অপটিক্যাল ফাইবার লাইনে প্রেরণ করে।

মূলত যেই ডিজিটাল ডাটা গুলোকে লাইটপলস এররূপে অপটিক্যাল ক্যাবলের ভেতর প্রেরণ করা হয় সেগুলোকে গ্রহণ করার পরে বাইনারি ভ্যালুতে পরিবর্তন করে আনা হয় যার ফলে কম্পিউটার ডাটা বা তথ্যগুলোকে পরবর্তীতে সেই লাইট পলস গুলোকে বাইনারি ভাষায় রূপান্তরের মাধ্যমে কম্পিউটারের / ল্যাপটপের তথ্য আকারে প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো, ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য ল্যাপটপ

অপটিক্যাল ফাইবার এর ব্যবহার

অপটিক্যাল ফাইবারগুলো টেলিযোগাযোগ এবং নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং, মেডিকেল স্ক্যানিং এবং সামরিক সরঞ্জাম হিসেবেও অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার হয়। মূলত ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে হাজার হাজার মাইল বহু দূরের তথ্য ভূগর্ভস্থ নানা তত্ত্ব সম্পর্কে জানা যায় অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে। অপটিক্যাল ফাইবার মূলত দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে থাকে পাশাপাশি নিম্নবর্ণিত কাজেও এটি ব্যবহৃত হয়। যথা:

  • আলোকসজ্জা
  • মিলিটারি
  • স্পেস এপ্লিকেশন
  • মেকানিক্যাল পরিদর্শন
  • মোটর গাড়ি শিল্প
  • সার্জারি
  • দন্ত চিকিৎসা প্রভৃতি।

অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা | অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এর প্রয়োজনীয়তা

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের প্রয়োজনীয়তা ও সুযোগ সুবিধা গুলো মূলত অনেক। আর তাইতো এ পর্যায়ে আমরা অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধা গুলো উল্লেখ করব। তাহলে আসুন জেনে নেই অপটিক্যাল ফাইবারের সুবিধাসমূহ সম্পর্কে। 

  • অপটিক্যাল ফাইবার উচ্চ ব্যান্ডউইথ সুবিধা প্রদান করে
  • এক দেশ থেকে অন্য দেশে ডেটা ট্রান্সফার করা যায়
  • অধিক দূরত্বে উচ্চ গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট করা সম্ভব হয়
  • শক্তির অপচয় কম হয় অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহারে
  • এটি সহজে পরিবহনযোগ্য এবং ওজনে হালকা
  • অপটিক্যাল ফাইবার বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত
  • পরিবেশের তাপ চাপ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয় না এটি
  • অপটিক্যাল ফাইবার ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রাখে
  • এতে সংকেতের কম অবক্ষয় হয়
  • অপটিক্যাল ফাইবার অত্যন্ত নমনীয় এবং হালকা সেই সাথে সাশ্রয়ী।

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের অসুবিধা সমূহ

অপটিক্যাল ফাইবারের যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক একইভাবে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের কিছু অসুবিধা রয়েছে। আর তাই এ পর্যায়ে আমরা অপটিক্যাল ফাইবারের কিছু অসুবিধাসমূহ সম্পর্কে জানব। যথা: 

  • অপটিক্যাল ফাইবার কেবল অত্যন্ত দামি অর্থাৎ ব্যয়বহুল।
  • ফাইবার অপটিক কেবলগুলো ইউ আকারে বাঁকানো যায় না।
  • এটি ইন্সটল করা অন্যান্য ক্যাবলের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন।
  • অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল প্রয়োজন। 

যেহেতু প্রায় সকল বস্তুর খারাপ ভালো সুবিধা অসুবিধা দুই দিক থেকে থাকে, তাই অপটিক্যাল ফাইবার মূলত আমাদের মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ সড়ক এবং এটি আমাদের জন্য বেশ উপকারী। 

অপটিক্যাল ফাইবারের অন্যান্য ব্যবহার

অপটিক্যাল ফাইবারের মূলত আরো অন্যান্য কিছু ব্যবহার রয়েছে। সেগুলো হলো:

  • শেয়ারিং
  • ইন্টারনেট এবং
  • কেবল ডিশ

এটি এমন একটি জিনিস যা বালি থেকে তৈরি করা হয়েছে। অপটিক্যাল ফাইবারের উপাদান সমূহের অন্যতম উপকরণ হলো বালি। 

আরও পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কথাটা সত্যি নাকি মিথ্যা

পরিশেষে

অপটিক্যাল ফাইবার কি?  অপটিক্যাল ফাইবার কাকে বলে–এ সম্পর্কিত আমাদের আলোচনা পর্বের এখানেই ইতি টানছি। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আপনাদের মতামত এবং সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *