ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

 

ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

বর্তমান সময়ে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া এটা একটি কমন সমস্যা। প্রায়ই দেখা যায় এই সমস্যায় ভোগতে। তাই আমর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনের সাথে কমবেশী সবাই পরিচিত।দুদিন পর পর এই সমস্যা দেখা দেয়।  প্রায় প্রত্যেক ফ্যামিলিতেই দেখা যায় কেউ না কেউ এই সমস্যা আক্রান্ত। এই সমস্যা  নারী হোক পুরুষ হোক সকলেরই দেখা দেয় । 

তবে পুরুষের চেয়ে  নারীদের মাঝেই এটি বেশী দেখা দেয়। প্রসাবে জ্বালাপোড়া এটি বড় ধরনের কোন সমস্যা বা রোগ না এটি  মূলত একটি উপসর্গ। সাধারণত প্রস্রাবের রাস্তায়  ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে এটি হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো  ছত্রাক বা ফাঙ্গাস দ্বারা আক্রান্ত হলেও এই সমস্যা দেখা যায়। তাই আজকে আমরা এই আর্টিক্যালের মাধ্যমে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের মুখের ব্রন ও কালো দাগ দূর কনার উপায় 

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার 


প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনের  কারণঃ

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হওয়ার কারণ রয়েছে।
নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই তবে  একেকজনের একেক কারণে এই ইনফেকশনটি হয়ে থাকে ।তো বন্ধুরা  চলুন  প্রস্রাবের  জ্বালাপোড়া করার  বিভিন্ন কারণগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

১) প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে এর মধ্যে  মূল কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করা। পানি হল আমাদের দেহের জন্য সব থেকে দরকারি বস্তু। কেননা  পানি আমাদের দেহ কে সুস্থ ও  দেহের বেশীর ভাগ রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। 

পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান না করলে দেহের নানাবিধ রোগের লক্ষণ দেখা দেয় ।শরিরে পর্যাপ্ত পানির অভাবে প্রস্রাবের জ্বলাপোড়া হয়। যারা পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান না করে তাদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।


২) নারীদের ক্ষেত্রে এই উপর্সগটি সব থেকে বেশি দেখা যায়। তাদের জন্য এই উপসর্গটি খুবই কষ্টদায়ক। নারীদের পায়ুপথের খুব কাছেই মূত্রনালী অবস্থিত। যার ফলে অনেক সময়  পায়ুপথের মাধ্যমে অনেক ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস মূত্রনালীতে প্রবেশ করে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে যা নারীদের অনেক ভোগায়।


৩) নারীদের প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে মাসিক বা পিরিয়ড। প্রতি মাসেই মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড হয়ে থাকে । সকল মেয়েই সেই সময় বাজারে পাওয়া ন্যাপকিন কিংবা বিভিন্ন কাপড় ব্যবহার করে। সেই ন্যাপকিন বা কাপড়ের সাথেও জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া বা পাঙ্গাশ  মূত্রনালিতে প্রবেশ করে এবং প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া  সৃষ্টি করে।

৪) আবার সঙ্গীর সাথে সহবাস করার ফলেও প্রসাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই প্রস্রাবের এইসব জ্বালাপোড়ার  কারণগুলো খুঁজে খুঁজে  বের করে এর প্রতিকার করা খুবই জরুরি।

আরো পড়ুনঃ মাসিক না হলে কি করবেন?  দাম সহ মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম 

ইউরিন ইনফেকশন বা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হওয়ার লক্ষণঃ 

ইউরিন ইনফেকশন হলে কিভাবে বুঝবেন?
তা বুঝার জন্য  কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। এসব লক্ষণ যদি দেখা যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে যে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সমস্যাটি হচ্ছে।

  •  প্রথমত প্রস্রাব করার সময় প্রচন্ড পেট ব্যথা এবং পিঠে ব্যথা হওয়া
  •  প্রস্রাবের প্রবল বেগ আসা স্বত্বেও পর্যাপ্ত পরিমানে প্রস্রাব না হওয়া।
  •  প্রস্রাবের রঙ পরিবর্তন হওয়া এবং প্রস্রাব দেখতে  সাভাবিক না  হওয়া ।
  •  প্রস্রাবের সময় মূত্রনালি জ্বলা।

প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বড় কোন রোগ না হলে ও তা বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া  অতি মাত্রায় বেড়ে গেলে জীবাণু দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পরে এবং কিডনিতে গিয়ে পাথর তৈরি  করে ফেলার সম্ভবনা থাকে । তাই এই সমস্যাকে অবহেলা করা উচিৎ নয়।যখনি এই সমস্যা দেখা দিবে সাথে সাথে এর প্রতিকার করা উচিৎ। কখনো তা  বাড়তে দেয়া উচিৎ নয়। 

যদি লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে প্রাথমিক অবস্থাতেই এর চিকিৎসা করা প্রয়োজন। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার সাধারণ যেসব  লক্ষণ রয়েছে তা  দেখা দিলে ঘরে বসেই এর প্রতিকার বা এর থেকে মুক্তি পাওয়া  সম্ভব।
তো, চলুন জেনে নেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে বা ঘরে বসেই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন দূর করার ঘরোয়া ৫টি  উপায়।

আরো পড়ুনঃ পাইলস বা অর্শ রোগ কি? পাইলস এর লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা

১) পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা

প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন রোধে সব থেকে জরুরি হল পর্যাপ্ত পানি পান করা  । পর্যাপ্ত পানি পান  বা তরল জাতীয় খাবার দৈনিক প্রস্রাবের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় যা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া রোধে খুবই প্রয়োজন । বেশি বেশি প্রস্রাবের কারণে  প্রসাবের সাথে ইউরিন ইনফেকশন তৈরি করা  ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস বের হয়ে যায়। তাছাড়া দেহের ক্ষতিকর বিভিন্ন জীবাণু সমূহও প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। ফলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া খুব দ্রুত দূর হয়ে যায়। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া  দ্রুত নিরাময়ের জন্য  হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়া উত্তম ।


২) বেশি বেশি শাক-সবজি খাওয়া

প্রসাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন  দূর করতে সবুজ শাক-সবজি খুবই দরকারি । কেননা  শাক-সবজির মাঝে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পানির শূন্যতা পূরণ করে। প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া হলে দৈনিক খাদ্য তালিকায় আমিষের পরিমাণ কমিয়ে বেশি বেশি শাক সবজি খাওয়া উচিত । তাছাড়া শাক সবজি দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন  এবং  কিছুকিছু শাক সবজি দেহের শর্করার চাহিদাও মেটায়। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থেকে বাঁচতে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি খেতে হবে।


আরো পড়ুনঃ মুখের দূর্গন্ধ দূর করার কার্যকরি উপায়


৩) গরম শেক দেওয়া

গরম শেক প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা  ইউরিন ইনফেকশন দূর করতে এবং পেট ব্যথা কমাতে খুবই সাহায্য করে । হট ওয়াটার ব্যাগ কিংবা কাপড় গরম করে তলপেটে ও এর আশেপাশে এবং পিঠের নিচের অংশে শেক দিকে পারেন। এটা খুবই উপকারি  এতে ব্লাডারের উপরের অতিরিক্ত চাপ কমে যাবে এবং ব্যথাও অনেকটা উপশম হবে । তাছাড়া বর্তমানে  বাজারে হিটিং প্যাড পাওয়া যায়, যা ব্যবহারে মাসিকের সময় তলপেটের ব্যথা দূর করে এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয় না। তাই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ায় আক্রান্ত নারীরা মাসিক বা পিরিয়ডের সময় হিটিং প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। এতে পিরিয়ডের ব্যথা দূর হওয়ার পাশাপাশি প্রসাবে জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশনও দূর হয়ে যাবে।


আরো পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায় এবং দাম সহ এলার্জির ঔষধের নাম।

৪) পানিশূন্যতা দূরিভূত করা

প্রসাবে জ্বালাপোড়ার জন্য প্রধান সমস্যা  হচ্ছে দেহের পানিশূন্যতা। প্রতিদিন দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান না করলে খুব দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন হয়ে যায়। একজন সুস্থ সাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ৪-৫ লিটার পানি পান করা উচিৎ।  । দৈনিক কমপক্ষে  ৭-৮ গ্লাস পানি পান করলে খুব সহজেই প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হবে। তাছাড়া প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বেশি হলে  পানি জাতীয় ফল যেমনঃ তরমুজ, আম, আপেল, আঙ্গুর, আনার, নাশপাতি, ডাব ইত্যাদি খেলে পানিশূন্যতা কমে যায় এবং ইউরিন ইনফেকশন এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে । আবার  স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি খেলেও প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন অনেকটা উপশম হয়।


৫) দই খাওয়া

প্রসাবের জ্বালাপোড়া বা ইউরিন ইনফেকশন  দূর করতে দই খুবই কার্যকরী একটি খাবার । আমরা জানি ব্যাকটেরিয়া দুই ধরনের হয়ে থাকে আর  মিষ্টি দই এবং টকদই উভয়ই রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। তাছাড়া প্রতিদিন দই খাওয়ার অভ্যাস দেহের পিএইচ (ph) এর মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই দইয়ে থাকা স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া ইউরিন ইনফেকশন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়  দই রাখার চেষ্টা করতে হবে।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক! প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া মারাত্নক সমস্যা না হলেও এটা আপনার অন্যান্য সমস্যা কে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং আপনার কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।তাই আমাদের সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। ইউরিন ইনফেকশন হলে  সামান্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে ঘরে বসেই  খুব সহজেই প্রসাবের জ্বালাপোড়া দূর করা সম্ভব। তাই এই সমস্যাটি দেখা দিলে চিন্তিত না হয়ে উপরোক্ত উপায়গুলো মেনে চলতে থাকুন । আস্তে আস্তে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *