কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা। কান পাকা রোগের ঔষধের নাম

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা: কান পাকা সমস্যা ছোট থেকে বড় সবারই হয়ে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেটা বেশিই দেখা যায়। কান পাকার ব্যাথা খুবই যন্ত্রণাদায়ক।  কান পাকলে কানের ছিদ্র পথে পানি বের হয়, পুঁজ হয়। যা খুবই ভোগান্তিতে ফেলে আমাদের।

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা। কান পাকা রোগের ঔষধের নাম

সাধারণত এমনটা হওয়ার কারণ হল অনেক সময় গোসল করতে গেলে কানের ভিতর পানি চলে যায়। পানি না বের করলে জমে থাকলে অথবা গোসলের পর ভাল করে কান ভিতরে না মোছলে পানি জমে তাতে সংক্রমণ দেখা দেয়। শুরু হয় কান ব্যাথা, কানে পুঁজ হওয়া

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা

তবে এই সমস্যা যারা পুকুর বা সুইমিংপুলে গোসল করেন তাদের বেশি হতে পারে। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে গোসলের সময় সতর্ক না থাকলে পানি চলে যেতে পারে। শুধু পানি যাওয়ার কারণে নয় তাছাড়া ও বিভিন্ন কারণে কান পাকতে পারে। হঠাৎ করে কানের ভিতরে কিছু প্রবেশ করলে সেটা বের না হলে ও কান পাকতে পারে। তাই সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।

আরো পড়ুনঃ কান ব্যাথা দূর করার উপায়।কানের ব্যাথার ঔষধের নাম বাংলাদেশ

তাই এই আর্টিক্যালে আমরা কান পাকার সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো তা হলঃ-


  • কান কেন পাকে?

  • কান পাকার লক্ষণ।

  • কান পাকা থেকে বাঁচতে করণীয়।

  • কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা।

  • কান পাকা রোগের ঔষধ।

আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি পড়লে আপনি খুবই উপকৃত হবেন। তো চলুন জেনে নেই।

কান কেন পাকে?

কান পাকার অনেক কারণ রয়েছে। বেশিরভাগ এই সমস্যা দেখা দেয় কানে পানি গেলে এবং গোসলের পর কান ভাল করে না মোছলে কানে পানি জমে কান পাকে। তা ছাড়া ও ব্যাকটেরিয়া কিংবা ফাঙ্গাসের সংক্রমনে কান পাকতে দেখা যায়। তা ছাড়া ও  অযথা বারবার কান পরিষ্কার করলে এবং কানের ভিতরে একজিমা হলেও কান পাকতে পারে। একবার কান পাকলে অল্প কোন কারণে আবার কান পাকতে পারে।

কান পাকার লক্ষণ:

কান পাকলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। নিচে কয়েকটি উল্লেখ করেছিঃ-

  • কান চুলকাবে।
  • কান ব্যাথা করবে।
  • কান থেকে পুঁজ বের হবে।
  • কান ফুলে যেতে পারে।
  • কখনো কখনো কানে কম শুনতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম।জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম

কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা।

১. গরম সেক দিতে হবে:

কান পাকার কারণে পুঁজ বের হতে দেখলে তাহলে কানে গরম সেক দিন। গরম সেক দেওয়ার কারণে ভিতরে থাকা পুঁজ আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসবে এবং ব্যাথা ও কমে যাবে।

যেভাবে সেক দিবেনঃ-

গরম পানিতে একটি সুতির কাপড় চুবিয়ে ভালো করে নিংড়ে হবে। তারপর সেটা ২-৩ মিনিট কানের উপরে ধরে  রাখুন। তারপর মাথাটা একটু ঝুঁকিয়ে যে কানে পুঁজ ওই কানটা নিচে রেখে শুয়ে থাকুন আস্তে আস্তে পুঁজটা বের হতে থাকবে। বার বার করথে থাকুন।

২. সাদা ভিনেগার:

কান পাকা রোধে সাদা ভিনিগার দারুন কাজ করে। এই ধরনের ভিনেগারের মধ্যে অ্যাসিডিক এলিমেন্ট থাকায় এটি কানের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কে মারতে কাজে আসে।

যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ-

একটি ছোট পাত্রে অল্প অ্যালকোহল নিয়ে সাথে অল্প এই ভিনিগার ভালভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর সেখান থেকে কয়েক ড্রপ নিয়ে কানে দিন। অল্প সময়ের মধ্যে দেখবেন আরামবোধ করবেন।

৩. রসুন:

কান পাকা ভাল করতে রসুন ভাল কাজ করে। কেননা এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ থাকায় কান পাকার জন্য দায়ী জীবানুগুলিকে মারতে এটি দারুন কাজে করে।

যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ-

কয়েকটি রসুনের কোয়া দু চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে তেলটিকে কিছুক্ষণ গরম করুন।গরম হলে তা উঠিয়ে ঠান্ডা করুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে কয়েক ফোটা রসুন মিশ্রিত অলিভ অয়েল কানে দিন। এতে কান পাকা সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

৪. পেঁয়াজ:

পেঁয়াজ শুধু রান্নার কাজেই ব্যবহার হয় তা নয় এই পেঁয়াজ কখনো রোগ সারাতে কাজে আসে।পেঁয়াজ ডিসইনফেকটেন্ট হওয়ায় কান পাকা রোগ সারাতে দারুন কাজে আসে। এবং কানের পুঁজ বের করতে সাহায্য করে।

যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ-

পেঁয়াজ কে থেঁতো করে তার থেকে রস বার করে কয়েক মিনিট গরম করুন। তারপর পেঁয়াজের রস কয়েক ফুটা কানে দিলে দেখবেন জমে থাকা পুঁজ আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসবে । আর পুঁজ বের হলেই ব্যাথা কমে যাবে।

৫.পুদিনা

পুদিনার পাতা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং যে কোন ব্যাথা দূর করতে ও সহায়তা করে। কান পাকা ও কানের ব্যাথা দূর করতে পুদিনা পাতা ভাল কাজ করে।

যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ-

কয়েকটি পুদিনা পাতা নিয়ে ভাল করে ধুয়ে তা  থেঁতো করে রস বের করুন। তারপর দুই-তিন ফোঁটা রস কানে দিন। কান পাকা প্রতিরোধের জন্য এটি খুব প্রচলিত একটি ঘরোয়া উপায়।

৫. হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড:

কানের সমস্যা এড়াতে কার্যকরী ঘরোয়া চিকিৎসা হল হাইেড্রাজেন পারঅক্সাইড। এটি কানের ভিতরে জমে থাকা পুঁজ আস্তে আস্তে শুকিয়ে দেয়। কান পাকা রোধ করতে সাহায্য করে।

যেভাবে ব্যবহার করবেনঃ-

যে কান পেকেছে তাতে ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিন। তারপর যে কানে সমস্যা তা নিচে দিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন। তাহলে আস্তে আস্তে কান থেকে পুঁজ বের হয়ে যাবে । দিনে কয়েকবার এমন করতে পারেন এতে কানের পুঁজ বের হয়ে দ্রুত কান পাকা ভাল হয়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ গলা ব্যাথার ঔষধ কি? দ্রুত গলা ব্যাথা কমানোর উপায়।

কান পাকা রোগের ঔষধের নাম

 ১।শরীরে জ্বর বা ব্যাথা থাকলে PARACITAMOL  জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন।
যেমনঃ-


  1. Ace-500mg,

  2. Napa-500mg,

  3. Fast-500mg.

খাওয়ার নিয়মঃ-

প্রতিদিন তিন বেলা ১+১+১ করে ভরা পেটে ৩/৫ দিন খাবেন।
অথবা,  শিরাপ খেতে পারেন

  1. Napa,

  2. Ace,

  3. Fast,

  4. Xpa

প্রতিদিন ১/২ চা চামচ করে ২/৩বার সেব্য।জ্বর/ব্যাথা অনুভুত হওয়া পর্যন্ত।

২।ব্যাথা তীব্র থেকে তীব্রতর হলে DICLOFENAC POTASSIUM  জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন।
যেমনঃ


  1. A-fenac-k 25/50mg.

  2. Cataflam 50mg


খাওয়ার নিয়মঃ-

প্রতিদিন ১+১+১ করে ভরা পেটে ৩/৫ দিন খেতে হবে।

৩।কানের মধ্যে পুঁজ হলে CLOXACILLIN জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন।
যেমনঃ-


  1. A-clox-500mg,

  2. Fluclox-500mg.


খাওয়ার নিয়মঃ 

প্রতিদিন ১+১+১+১ করে ভরা পেটে ৭/১৪ দিন খাবেন। ৬ ঘন্টা পরপর খাবেন।

৪।কানের মধ্যে ব্যাবহারের জন্য CLORAMPHENICOL জাতীয় ড্রপ ব্যবহার করা যায়।
যেমনঃ-


  1. Otophenicol

  2. A-phenicol.

প্রতিদিন ২/৩ ফোঁটা করে দিনে ২/৩ বার কানের মধ্যে ব্যাবহার করবেন।

৫।প্রচুর পরিমান VITAMIN-C খাবে।
যেমনঃ-


  1. Ceevit,

  2. Ascobex,

  3. Ceecon.


খাওয়ার নিয়মঃ-

১+১+১ করে চুষে ৭/১০ দিন খাবেন।

৬।পেটে গ্যাস হলে ESEMOPRAZOL জাতীয় ঔষধ খেতে পারেন।
যেমনঃ-

  1. Nexam-20/40mg,
  2. Esotid-20/40mg.


খাওয়ার নিয়মঃ-

প্রতিদিন ১+১+১ করে খাওয়ার ২০মিনিট পূর্বে। ব্যাথার ঔষধ চলাকালীন পর্যন্ত খাবেন।

আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়।পায়খানা হওয়ার ঔষধের নাম

কান পাকা থেকে বাঁচতে করণীয়ঃ

  • কান পাকা থেকে বাঁচতে সব থেকে বেশি দরকার হলো  সর্তক থাকা।
  • গোসল এর সময় কোনভাবেই যেন কানে পানি না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পারলে কানে তুলা দিয়ে গোসল করতে পরেন।
  • সবসময় কান শুকনো রাখা। অজু করে বা মুখ ধুয়ে ভাল করে কান মুছে নেওয়া।
  • শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় সতর্ক থাকা। শুইয়ে না খাওয়াইয়ে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন।
  • বাচ্চারা কান চুলকাইলে  সাথে সাথে চিকিৎসা করা।
  • কখনো কখনো কোন কিছু দিয়ে কান পরিস্কার করবেন না। হঠাৎ আঘাত লাগতে পারে।
  • অনেক সময় কানে আঘাতের কারণে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। তাই কান খোচানো বা কান পরিস্কার থেকে বিরত থাকা।
  • যদি কোনো কারণে কানের পর্দা ছিদ্র হয়ে যায় তাহলে বিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

শেষ কথা

কান পাকা সমস্যা খুবই মারাত্মক। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। তাই কান পাকলে অবহেলা করা যাবেনা। প্রাথমিকভাবে কান পাকা রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা করে ভাল না হলে কান পাকা রোগের ঔষধ খেতে হবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন। ধন্যবাদ