গলা ব্যাথার ঔষধ ও গলা ব্যাথা দূর করার উপায়: গলায় ব্যথা সাধারণ ও কমন একটি সমস্যা। প্রায় মানুষেরই মাঝে মধ্যে এই গলা ব্যাথার সমস্যা দেখা দেয়। যদি ও এটা মারাত্মক কোন সমস্যা না তবে এটা মারাত্মক কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে।গলা ব্যাথার কষ্ট ও অনেক। এই সমস্যা বেশিরভাগই বর্ষায় দেখা যায়। ছোট বড় সবারই এই গলা ব্যাথার সমস্যা দেখা যায়। হঠাৎ ঠান্ডা, সর্দি কাশি দেখা দিলে গলা ব্যাথা শুরু হয়। আবার গলায় টনসিল বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়।
তাই আজকের এই আর্টিক্যালে আমরা গলা ব্যাথার সমস্যাটির বিভিন্ন লক্ষণ, উপসর্গ, গলা ব্যাথার ঔষধ ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।।
গলা ব্যথা কি?
গলা ব্যথা যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ফ্যারিঞ্জাইটিস (Pharyngitis)। এই সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ হল ঠান্ডা ও ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) এর জীবাণু। সাধারণত এই জীবাণু গুলো সংক্রমণে গলায় এ ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। বেশিরভাগই বর্ষায় কিংবা শীতে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। প্রায় সময় গলা ব্যথার জন্য গলায় শুষ্ক চুলকানি, টনসিল সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় ফলে ঢোক গিলতে, কিংবা খাবার গিলতেও সমস্যা হয়ে থাকে।
গলা ব্যথার কারণ সমূহ
গলা ব্যথার কারণ অনেক রয়েছে। একেক সময় একেক কারণে গলা ব্যাথা হয়ে থাকে। নিচে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হল:
১। ভাইরাসজনিত অসু্স্থ্যতা যেমন ঠান্ডা, ফ্লু, মনোনিউক্লিওসিস (Mononucleosis) এর কারণে গলা ব্যাথা বেশি হয়ে থাকে।
২। তাছাড়া অন্যান্য ভাইরাসজনিত অসু্স্থ্যতা যেমন- হাম, চিকেনপক্স এর সংক্রমনেও গলা ব্যাথা দেখা যায়।
৩। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের জন্য ও গলা ব্যাথা দেখা যায়। যেমন গলায় টনসিলের সমস্যা ও ডিপথেরিয়ার কারণেও গলা ব্যাথা হয়ে থাকে।
৪। এছাড়া ও আরো বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার কারণে মাঝে মধ্যে গলা ব্যাথার প্রবণতা দেখা দেয়। মধ্যে এলার্জি জনিত সমস্যা, ঠান্ডা আবহাওয়া, বা শীত কালে আবহাওয়া , অতিরিক্ত ধূমপান করা, অধিক মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া, গলার মাংসপেশীতে কোন কারণে চাপ লাগা, এইচআইভি’র সংক্রমণ, ও মদপানের কারণে গলায় টিউমার হওয়া, অতিরিক্ত জোরে জোরে কথা বলা বা চিল্লানো ইত্যাদি কারণে গলা ব্যাথা হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি এবং পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটের নাম
গলা ব্যথার লক্ষণ সমূহ
গলা ব্যথা হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। গলা ব্যাথার বেশ কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ রয়েছে। নিচে উল্লেখ করা হল । যেমন-
গলা ব্যাথা হলে গলায় খসখসে ভাব, চুলকানো এমনকি গলা ফুলেও যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
গলা ব্যাথা হলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, ঢোক গিলা কিংবা কথা বলার সময় গলায় ব্যথা করা ।
ঠান্ডার জন্য গলা ব্যথার সমস্যা দেখা দিলে এর সাথে আরো সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে ব্যথা সহ সর্দি, কাশি, হাঁচি ও জ্বর ও দেখা দিতে পারে।
গলা ব্যথার বিভিন্ন উপসর্গ
গলা ব্যাথার উপসর্গ অনেক। গলা ব্যথা যদি বেড়ে গিয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে গলায় টনসিল ফুলে যেতে পারে সাথে আরো বিভিন্ন উপসর্গ ও দেখা দিতে পারে । নিম্নের উপসর্গগুলো যদি দেখা দেয় তাহলে দ্রুত ডাক্তার এর সাথে যোগাযোগ করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
- যে কোন খাবার খেতে ও ঢোক গিলতে কষ্ট হওয়া।
- গলা ব্যথা বেড়ে যাওয়া।
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি, বা চুলকানি দেখা দেওয়া।
- মাথা ব্যথার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।
- গলা ব্যথা বেড়ে গিয়ে মরাত্মক আকার ধারণ করা।
- গলায় টনসিল হওয়া এবং টনসিল ফুলে লালচে হয়ে যাওয়া।
- কখনো কখনো জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করা। ৬ মাসের নীচে বয়সী শিশুদের জ্বর ১০১ ফারেনহাইট এবং বড়দের ক্ষেত্রে তা ১০৩ ফারেনহাইট পর্যন্ত বেড়ে যাওয়া।
- অনেক সময় গলায় বা টনসিলে পুঁজ হওয়ার সম্ভবনা থাকে ।
গলা ব্যাথা থেকে বেঁচে থাকতে করণীয়
গলা ব্যাথা হলে আমরা খুবই অশান্তি তে থাকি। তাই চেষ্টা করি যেন কখনো গলা ব্যাথা না হয় ঐ ভাবে থাকতে। নিচে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে খুব সহজেই আমরা এই গলা ব্যাথার সমস্যা হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারি বা বেঁচে থাকতে পারি । যেমন-
অন্যের ব্যাবহার করা যে কোন জিনিস খাবার ও জিনিসপত্র যেমন গ্লাস, প্লেট,গামছা,ত,কিংবা তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। নিজের জিনিস নিজে একা ব্যবহার করুন।
একই জগ বা গ্লাস অন্যের ব্যবহার করা নিজে ব্যবহার করবেন না। নিজের টা ও অন্য কাউকে দিবেন না।
নিয়মিত নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
অসুস্থ ব্যক্তির কাছে যাওয়া যাবে না। যতটুকু সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
বাড়ির আবহাওয়া যদি শুষ্ক বা ঠান্ডা থাকে তাহলে তা আদ্র রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করুন এবং সেই রুমাল সবসময় পরিষ্কার করে রাখতে হবে।
ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন এবং ধূমপায়ী ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন।
প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে যেমন- গরম চা,কফি, পানি ও ফলের রস ইত্যাদি
ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারণে গলায় ব্যাথা হলে এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে তা দিয়ে গড়গড়া কুলি করলে আরাম পাওয়া যায়।
কখনো জোরে জোরে কথা বলা বা চিল্লানো যাবে না এবং যতটুকু সম্ভব কথা কম বলার চেষ্টা করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট।
গলা ব্যাথার ঔষধ
গলা ব্যাথা দূর করার জন্য যে কোন ঔষধ খান না কেন ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত। কারণ ডাক্তার আপনাকে অবস্থা বুঝে এবং কারণ বুঝে ঔষধ দিবে। গলা ব্যাথা বিভিন্ন কারণে হতে পরে। তাই এর কারণ অনুযায়ী ঔষধ বা ট্যাবলেট ও ভিন্ন হতে পারে।
গলা ব্যাথার ট্যাবলেট এর নাম
গলা ব্যাথা মারাত্মক হলে ঔষধ খাওয়া উচিৎ। গলা ব্যাথা দূর করতে প্রথমে আপনাদের ভিন্ন একটি ঔষধ এর কথা বলবো সেটা হল, নেপচুন ফার্মাসিটিক্যালস কর্তৃক উৎপাদিত ঔষধ এর নাম Sualex (সুয়ালেক্স)। এই ঔষধ টি ২ টা ট্যাবলেট এক কাপ কুসুম পানিতে মিশিয়ে নিন। দিনে অন্তত ৩ বার পান করুন। এই প্রক্রিয়ায় ১০ দিন নিয়মিত পান করুন।
যদি শুধু গলা ব্যাথা করে তাহলে আপনি ব্যাথার জন্য রোলাক (Rolac) ট্যাবলেট খেতে পারেন। এই ট্যাবলেট টি খেলে দ্রুত ব্যাথা দূর হবে। তবে ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
যদি গলা ব্যাথার সাথে জ্বর ও থাকে তাহলে আপনি নাপা এক্সটেন্ড ( Napa Extend) খেতে পারেন। তাহলে জ্বর ও গলা ব্যাথা দুটোই ভাল হবে। অতিরিক্ত নাপা খাবেন না, কারণ অতিরিক্ত খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বমি হলে করণীয়। বমির ট্যাবলেট এর নাম
গলা ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায়
গলা দূর করার জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। গলা ব্যাথা দূর করার জন্য ঔষধ খাওয়ার আগে ঘরোয়া উপায়ে গলা ব্যাথা দূর করার চেষ্টা করতে পারেন। অথবা মারাত্মক সমস্যা হলে ঔষধের পাশাপাশি ঘরোয়া উপায়ে ও চেষ্টা করুন তাহলে দ্রুত গলা ব্যাথা দূর হবে। নিচে গলা ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলঃ
১. কিসমিস
কিসমিস গলা ব্যথা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরি একটি উপাদান। গলা ব্যাথা দেখা দিলে ভাল হওয়ার আগ পর্যন্ত কিসমিস খেতে পারেন।গলা ব্যাথা দ্রুত ভাল হবে।
২. আদা / আদার রস
কাচা আদা বা আদার রস গলার সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে । কাচা আদা ছোট ছোট টুকরো করে অথবা আদা বেটে রস করে সেবনে গলার সমস্যা দ্রুত ভাল হয় এবং আরাম পাওয়া যায়।
৩. কুসুম গরম পানি, চা-পাতি, আদা ও তুলসি পাতা
অল্প পানি সাথে ১/২ চা চামচ টুকরো করা আদা, ১/২ চা চামচ চা-পাতি, ২-৩ টি তুলসি পাতা দিয়ে মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট চুলায় গরম করে ফুটিয়ে নিন। তারপর এটি নামিয়ে রেখে দিন। কিছুক্ষন পর যখন হালকা গরমে পরিণত হবে তখন আস্তে আস্তে এই পানি পান করুন। এটি নিয়মিত পান করলে গলা ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায় এবং গলা ব্যথা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
৪. পানি, তুলসি পাতা ও মধু
অল্প পরিমান পরিষ্কার পানিতে ৪-৫ টি তুলসি পাতা নিয়ে ৫ মিনিট ভালভাবে ফুটিয়ে নিন । ফুটানো হয়ে গেলে এটি নামিয়ে ২ থেকে ৩ ফোঁটা মধু মিশিয়ে তা পান করুন। এটি গলা ব্যথা কমাতে বেশ চমৎকার কাজ করে।
৫. পানি, মধু ও লেবুর রস
গলার যে কোন সমস্যা বা ব্যাথা হলে প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস মৃদু গরম পানিতে ১ চা চামচ লেবুর রস ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে সকালের নাস্তার আগে পান করতে হবে। প্রতিদিন এটি পান করলে গলা ব্যথা ও খুশখুশে কাশি দ্রুত ভাল করে।
৬. গুঁড় ও আদা
হঠাৎ গলায় যে কোন সমস্যা দেখা দিলেই একটি গুঁড়ের টুকরার সাথে ১ চা চামচ আদার রস বা আদা টুকরা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে বেশ উপকার রয়েছে। সকালে নাস্তার আগে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
৭. মেথি ও পানি
এক গ্লাস পানিতে আস্ত মেথি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করুন। অথবা মেথি গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে তা পান করতে পারেন । এতে গলা ব্যথা দ্রুত দূর হবে।
শেষ কথা
দৈনন্দিন জীবনের কমন একটি সমস্যা হল গলা ব্যাথা। এটা খুবই কষ্টদায়ক ব্যাথা। তাই এই ব্যাথা দূর করতে নিয়মিত গলা ব্যাথার ঔষধ এর পাশাপাশি কিছু বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে হবে। এবং দ্রুত গলা ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করলে আরো দ্রুত ঠিক হবে। উপরে সব গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি সবার ভাল লাগবে। ধন্যবাদ
Leave a Reply