গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ? গুড়া কৃমির ওষুধের নাম: আমাদের শরীরে অস্বস্তিকর সমস্যার মধ্যে একটি সমস্যার নাম হলো কৃমি। গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল নালীর মধ্যে বসবাসকারী আমাদের শরীরে পরজীবীর নাম হলো কৃমি। কৃমি সাধারণত এরা প্রাথমিকভাবে অন্ত্রের প্রাচীরের সঙ্গে লেগে থাকে। এরা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তবে এদের বেশির ভাগ যেমন, সুতাকৃমি বা গুঁড়া কৃমি, কেঁচোকৃমি ইত্যাদি বেশি ক্ষতিকর আমাদের শরীরের জন্য ।
সাধারণত এরা দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে কৃমি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে । তাই আমাদের শরীরে কৃমি দূর করার জন্য বিভিন্ন রকমের কৃমিনাশক ওষুধ গ্রহণ করা হয়। তবে আমাদের ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই ধরনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।তাই আমারা এমন কিছু উপায় নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ? গুড়া কৃমির ওষুধের নাম।
আজকে আমরা এই আর্টিক্যালের মাধ্যমে জানবো গুড়া কৃমি হয় কেন? গুড়া কৃমি হলে আমাদের করণীয় কি?
গুড়া কৃমি হলে সাধারণত কি কি ঔষধ সেবন করতে হবে? ইত্যাদি সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গুড়া কৃমি কি?
গুড়া কৃমি হলো একটি প্যারাসাইট বা পরজীবী, সাধারণত যা সুতা কৃমি নামেই পরিচিত।
এটি সাধারণত মানুষের মলাশয় বা মলদ্বারে থাকে। কৃমির ডিম গুলো আকারে খুবছোট। প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে । কৃমি মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। এই পরজীবী গুলো আমাদের শরীরে সংখ্যা বৃদ্ধি করে, কিন্তু এরা অন্য প্রাণীদের আক্রমণ করে না। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি এই পরজীবী বা গুড়া কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে এই কৃমি গুলো ক্ষুদ্রান্তে অতিদূত বেড়ে ওঠে এবং এরা মলদ্বারে বংশ বৃদ্ধির জন্য ডিম পাড়তে থাকে।
একটা কথা যেনে অবাক হবেন যে, সাধারণত একটি কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে দিনে প্রায় ০.৩ মিলি লিটার রক্ত শুষে নেয়। যার ফলে শিশু থেকে বড়রা ও অপুষ্টি ও রক্ত শূন্যতায় ভোগে। তাই বলা যায় যে, ছোট থেকে বড়রাও প্রতিনিয়তই ভুগে থাকেন এ সমস্যায়।
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ
আসলে বিভিন্ন কারণেই এই কৃমি হয়ে থাকে। যেমন, অস্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবহার করলে। অপরিষ্কার ঘরবাড়ি , ও টয়লেট ব্যবহার করার পর হাত ভালোভাবে না ধোয়ায়। দূষিত পানি ব্যবহার করলে। রান্না করা খাবার রান্না করার পূর্বে ভালোভাবে না ধুয়ে রান্না করলে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করলে।
আমাদের হাতের নখ বড় রাখলে এবং গরুর মাংস অর্ধসেদ্ধ খেলে গুড়া কৃমি হয়ে থাকে। আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে যে, মিষ্টি খেলে কৃমি হয়ে থাকে। আসলে এটি হলো একটি ভুল ধারণা। আমাদের মিষ্টি খাওয়ার সাথে এই কৃমি হওয়ার কোনো সাথে কোন সম্পর্কই নেই বলে চলে।
গুড়া কৃমির লক্ষণ গুলো কি কি?
গুড়া কৃমি বা পরজীবির এই সংক্রমনের সব চাইতে অতি সাধারণ লক্ষণ গুলো হলঃ
১/ চুলকানির জন্য ঘুমের ব্যাঘাত। মলদ্বারে চুলকানি।
২/ মৃদু বমু ভাব।
৩/ মলদ্বারে বা এর আশে পাশে চুলকানি।
৪/ একটু পর পর পেটে ব্যথা অনুভব হওয়া।
৫/ ক্ষুধা কমে যাওয়া বা ক্ষুধা মন্দা।
৬/ কারো প্রতি বিরক্তিভাব হওয়া।
৭/ ওজন কমে যাওয়া
গুড়া কৃমির ওষুধের নাম
গুড়া কৃমির ওষুধের নাম অনেকেই জানতে চান। তাদের জন্য উল্লেখ করা হল :
Solas → Opsonin → 1.67 Taka
Mebendox →Indobangla →1 Taka
Promax →Apollo → 1 Taka
Sermox →Selton →1 taka
Seemox →Seema →1 Taka
গুড়া কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম
গুড়া কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম হল প্রতি ৬ মাস পর পর পরিবারের সবাই একসাথে খেতে হবে। দিনে ২ বার সকালে একটা আর রাতে একটা করে ৩ দিন মোট ৬ টা ট্যাবলেট খেতে হবে প্রত্যেকের। কেউ যদি একা খায় তা ও খেতে পারবে। তবে পরিবারের সবাই একসাথে খেলে সব থেকে ভাল হয়। না হয় পরিবারের অন্য সদস্যদের ও যদি কৃমি থাকে তাহলে তার থেকে আবার ও ছড়াতে পারে।
গুড়া কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়
একাধিক গবেষণায় জানা গেছে যে, শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের পেটে কৃমি হয়ে থাকে । তাই এটিকে অতি সাধারণ সমস্যা বলে অবহেলা করলে আমাদের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আমাদের কিছু খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং এর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই এই কৃমির সমস্যা অতিদ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তাই বেশ কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে কৃমির হতে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।
১। রসুন
আমাদের প্রতিদিন নিয়ম করে রসুন খেতে হবে, নিয়মিত রসুন খেলে কৃমির সংক্রমণ এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে । তাই পুষ্টিবিদদের মতে, রসুনের মধ্যে টিএনটি প্যারাসাইটিক অর্থাৎ পরজীবীনাশক খাবার , আমাদের শরীরে যা কৃমি দূর করতে সাহায্য করে থাকে। কাঁচা রসুনে প্রায় ২৫ ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ৬৫ ধরনের ফাংগাস মেরে ফেলার ক্ষমতা আছে। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খাওয়া। রসুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। শসার বীজ
কৃমি সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে শসার বীজ একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। তাই শসার বীজ বা এর দানা রোদে শুকিয়ে তা গুড়ো করে প্রতিদিন সকালে পানির সাথে খেতে পারলে খুব তারাতাড়ি উপকার পাওয়া যাবে।
৩। লবঙ্গ
প্রতিদিন সকালে দুইটি করে লবঙ্গ খেলে এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান কৃমি মেরে ফেলতে সাহায্য করে।
৪। মিষ্টি কুমড়ার বীজ
আবার দুই চামচ মিষ্টি কুমড়ার বীজ গুড়া ৪ কাপ পানি নিয়ে তা একঘন্টা সিদ্ধ করে তা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলেভালো উপকার পাওয়া যায়। তাছাড়াও দুই চামচ মিষ্টি কুমড়ার বীজের গুড়ারর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতে করে কৃমির সমস্যায় অতি দ্রুত উপকার পাবেন বলে আশা করি।
৫। গাজর
সাধারণত আমাদের কৃমি সমস্যা দূর করতে গাজর অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। গাজর প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি করে খেলে গাজরে থাকা যে ভিটামিন এ সি বিটা ক্যারোটিন এবং জিংক থাকে তা আমাদের শরীরের কৃমি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
৬। অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
আমাদের প্রতিদিন খাওয়ার একঘণ্টা আগে অ্যাপেল সিডার বা ভিনেগার খেতে হবে এটির ফলে আমাদের পেটে থাকা এসিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে এবং ওই অ্যাসিড শরীরে প্যারাসাইট ও ক্ষতিকর জীবনের লার্ভা মারতে সাহায্য করবে
৭। কাঁচা হলুদ
আপনারা কি জানেন, কাঁচা হলুদে আছে এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। যার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে খুবই উপকারি একটি উপাদান।এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে সামান্য পরিমানের হলুদের গুঁড়া এবং লবণ মিশিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে। এই মিশ্রণটি ৪ দিন পর পর খেতে হবে।
৮। আনারস
আনারস ফলে থাকা ব্রোমেলাইন এনজাইম শরীরে বাসা বেঁধে থাকা প্যারাসাইট বা পরজীবী মারতে সাহায্য করে থাকে। তাই তিন থেকে চারদিন শুধু আনারস খেয়ে থাকতে পারলেই কৃমির সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে দূর করা সম্ভব।
শেষ কথা
অপরিষ্কার নোংরা পরিবেশ এবং ময়লা বা দূষিত পানি পান। অস্বাস্থ্যকর খাবার বা খাদ্যাভ্যাস,এবং খালি পায়ে হাটা কৃমি সংক্রমণ এর জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়। তাই আমাদের কৃমি সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে এবং নিরাপদ পানি পান, ও পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা উচিত।
Leave a Reply