ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম: বর্তমানে ডায়াবেটিস জাতীয় রোগ হিসেবেই ধরা হয়। দিন দিন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের সুগার বেড়ে গেলে পড়তে হয় নানান সমস্যায়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য নিয়মিত রক্তের সুগার পরিমাপ করা এবং সুগারের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। তাই নিয়মিত সুগারের লেভেল পর্যবেক্ষণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে রক্তের সুগার মাপার যন্ত্রটি সবসময় বাসায় নিজের হাতের কাছে রাখা জরুরি। আমরা জানি ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্রের নাম হচ্ছে গ্লুকোমিটার। এই যন্ত্রের সাহায্যে আপনি ঘরে বসেই রক্তের সুগারের পরিমাপ অর্থাৎ, ডায়াবেটিসের মাত্রা কত পয়েন্ট আছে তা সহজেই নির্ণয় করতে পারবেন।
ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম। ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত?
ডায়াবেটিস পরিক্ষা করার সময় ল্যানসেট নামের একটি সূক্ষ্ম সুঁইয়ের সাহায্যে আঙুলের ডগায় হালকা খোঁচা দেওয়া হয়। তারপর রক্ত বেরিয়ে আসলে টেস্টিং স্ট্রিপে এক ফোঁটা রক্ত নিয়ে সেটি গ্লুকোমবটার মেশিনে ঢুকিয়ে খুব সহজেই ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কোমর ব্যাথার কারণ, প্রতিকার ও কোমর বা মাজা ব্যাথার ট্যাবলেটের নাম
ডায়াবেটিস পরিক্ষা কখন করতে হয়?
ডায়াবেটিস পরিক্ষা কখন করবেন এটা অনেকেই জানতে চায়। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত দিনে ৪ বার অর্থাৎ খালিপেটে ও প্রতিবার আহারের দুই ঘণ্টা পরে এভাবে দৈনিক মোট চারবার রক্তের সুগার পরিমাপ করার জন্য ডাক্তাররা বলে থাকেন । তবে কখনো কখনো রোগীভেদে স্বাস্থ্য ও জীবনধারা বিবেচনা করে ডায়াবেটিস মাপার পরিমান কম বেশি হতে পারে। তাই আপনার ডায়াবেটিস এর অবস্থা ডাক্তার কে জানিয়ে আপনার জন্য সঠিক পরামর্শটি জেনে নিন।
ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপতে যা যা প্রয়োজন
- রক্তের সুগার মাপার মেশিন বা গ্লুকোমিটার।
- জীবাণুমুক্ত ও পরিস্কার ল্যানসেট।
- ল্যানসেট বসানোর প্লাস্টিকের কলম।
- টেস্ট স্ট্রিপ।
- সব গুলোই আপনি ফার্মেসিতে পাবেন। যখন গ্লুকোমিটার কিনবেন সব গুলো একসাথে কিনে আনতে পারবেন।
ঘরে বসে ডায়াবেটিস পরীক্ষার নিয়ম
ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপার জন্য আপনাকে ৭ টি উপায় অবলম্বন করতে হবে। সব গুলো ধাপ নিচে উল্লেখ করা হল—
১. প্রথমে আপনাকে ভালভাবে হাত ধৌত করতে হবে। এক্ষেত্রে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ভালো করে ধুয়ে নিবেন তারপর ভাল করে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। সাবানের পরিবর্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েও হাত জীবাণুমুক্ত করে নিলে ও চলবে। তবে আঙুল পুরোপুরি শুকানোর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
২. একটি টেস্ট স্ট্রিপ নিয়ে সেটা গ্লুকোমিটারের নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করাতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের গ্লুকোমিটার পাওয়া যায়। একেক গ্লুকোমিটারের স্ট্রিপ একেক রকম হয়ে থাকে । তাই গ্লুকোমিটারের মডেল অনুযায়ী সঠিক স্ট্রিপ বেছে নিতে হবে। বাজারে নকল অথবা মেয়াদোত্তীর্ন স্ট্রিপ পাওয়া যায় তাই কিনার সময় ভালভাবে দেখে বুঝে কিনতে হবে।
৩. তারপর প্লাস্টিকের কলমের ভেতরে একটি ল্যানসেট ভাল করে সংযুক্ত করে ল্যানসেটের ঢাকনা সরিয়ে দিতে হবে । যদি আপনি কলমটি কিভাবে লাগাতে হয় বা এর ব্যবহার না বুঝেন তাহলে গ্লুকোমিটারের প্যাকেটের ভেতরে থাকা লিফলেটের নির্দেশনা বা তার মোড়কে এর ব্যবহারবিধি দেখে নিন। প্রত্যেকবার ডায়াবেটিস মাপার সময়ে নতুন সুঁই ব্যবহার করতে হবে এবং একবার ব্যাবহার করা সুই দ্বিতীয় বা ব্যবহার করা যাবে না।
৪. এবার কলমটি আঙুলের যে কোন একপাশে ধরে সুঁই দিয়ে আঙুলের অগ্রভাগে ছিদ্র করতে হবে।সাধারণভাবে করলে ব্যাথা বেশি লাগতে পারে তাই কলমটি আঙুলের একপাশে ধরবেন তাহলে ব্যথা কম লাগবে। প্রত্যেকবার রক্তের সুগার মাপার সময় ভিন্ন আঙুল ব্যবহার করতে হবে। আঙুলের অগ্রভাগ ছিদ্র হলে স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসা এক ফোঁটা রক্তই গ্লুকোমিটারে রক্তের সুগার বা ডায়াবেটিস পরিমাপের জন্য যথেষ্ট।
৫. তারপর গ্লুকোমিটারে লাগানো টেস্ট স্ট্রিপে রক্তের ফোঁটা দিতে হবে। আঙুলটি খুব ভালভাবে ধরতে হবে যেন রক্তের ফোঁটা বের হয়ে টেস্ট স্ট্রিপের নির্ধারিত অংশকে পূর্ণ করতে পারে। রক্তের পরিমাণ খুব কম হলে ভুল রেজাল্ট আসতে পারে অথবা গ্লুকোমিটারের পর্দায় (ERROR) এরর দেখাতে পারে।
৬. টেস্ট স্ট্রিপে রক্ত পূর্ণ করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গ্লুকোমিটারের পর্দায় রক্তের সুগারে তথা ডায়াবেটিসের পয়েন্ট কত আছে তে ভেসে উঠবে। গ্লুকোমিটারের পর্দায় হিসাবটি সাধারণত mmol/l (মিলিমোল/লিটার) এককে দেখানো হয়। গ্লুকোমিটারের পর্দায় যদি কারও পয়েন্ট 6 mmol/l আসে তাহলে সেই সময়ে ডায়াবেটিস বা রক্তের সুগারের লেভেল ৬ পয়েন্ট ধরা হয়।
তবে কিছু ভিন্ন গ্লুকোমিটার রয়েছে যারমধ্যে হিসাবটি mg/dL (মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার) এককে দেখানো হয়। এতে হিসাবে একটু সমস্যা মনে হতে পারে।তবে চিন্তার কিছু নেই। mg/dL এককে ফলাফল আসলে সেটাকে ১৮ দিয়ে ভাগ করলে mmol/l এককে ফলাফল বেরিয়ে আসবে।
ডায়াবেটিসের মাত্রা বা রক্তে সুগার এর পরিমাপ খেয়াল রাখতে একটি নির্দিষ্ট ডায়েরি বা খাতায় প্রত্যেকবার টেস্ট করার পর তারিখ ও সময় দিয়ে ফলাফল নোট করে রাখা উত্তম।
৭. অবশেষে গ্লুকোমিটার ভাল করে পরিস্কার করুন এবং ব্যবহৃত সুঁই ও স্ট্রিপ ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে। সুই ও স্ট্রিপ একবার ব্যবহার হলে সেটা দিয়ে দ্বিতীয় বার ব্যবহার এর চেষ্টা করবেন না। নিয়মিত টেস্ট করার পর গ্লুকোমিটারের যত্ন নিন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে রাখুন।
আরো পড়ুনঃ অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ। অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
সুস্থ মানুষ ও ডায়াবেটিস এর রুগীর ক্ষেত্রে রক্তের সুগারের পরিমাপ ভিন্ন হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাক্তার তাদের বর্তমান অবস্থা ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে রক্তের সুগারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেন।
একজন সুস্থ মানুষ ও ডায়াবেটিস রোগীভেদে রক্তে সুগারের পরিমাপ কত হলে নরমাল সেটি নিচে উল্লেখ করা হলো—
সুস্থ মানুষের জন্য রক্তের সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা
একজন সুস্থ মানুষের রক্তের সুগার খালি পেটে ৪ থেকে ৬ পয়েন্ট এবং খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৮ পয়েন্ট এর নিচে থাকা উচিত।
ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য রক্তের সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা—
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খালি পেটে ৪ থেকে ৭ পয়েন্ট এবং খাবার খাওয়ার ২ ঘণ্টা পরে ৮ থেকে ৯ পয়েন্ট থাকা উচিত। এটা হল স্বাভাবিক মাত্রা।
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়
ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় সেটা নির্দ্বিষ্ট করে বলা কঠিন। বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে অল্প বেড়ে গেলেই সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তবে সামগ্রিক ভাবে সাভাবিক এর তুলনায় অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাক বা স্টোক করে মারা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম কত
ডায়াবেটিস মাপার মেশিনের দাম মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। সর্বনিম্ন ৬০০ টাকা থেকে শুরু ৩০০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। কিনার সময় কলম স্ট্রিপ এইসব ভাল করে দেখে কিনবেন।
শেষ কথা
ডায়াবেটিস বর্তমান সময়ে মারাত্মক একটা রোগ। এই রোগ থেকে বাঁচতে সব থেকে বেশি যেটা প্রযোজন তা হল সতর্কতা। চলাফেরা ও খাবারের মধ্যে সতর্ক থাকলে ডায়াবেটিস থেকে বেঁচে থাকা ও তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
Leave a Reply