জ্বর, সর্দি কাশি এটা যেন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে শুরু হয় আমাদের নানান সমস্যা। এই সময় সবথেকে বেশি যে সমস্যা গুলো দেখা দেয় তা হল জ্বর, সর্দি, কাশি।
বৃদ্ধ থেকে থেকে ছোট বাচ্চা পর্যন্ত এই সমস্যা গুলো প্রায় সময়ই দেখা দেয়। যদিও এই সমস্যা গুলো মারাত্মক না কিন্তু কখনো কখনো এই সমস্যা গুলো বড় কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই অবহেলা করা যাবেনা। সাধারণত ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর সর্দি কাশি ভাল হয়ে যায়। কিন্তু যদি না ভাল হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ নাকের সর্দি দূর করার উপায়।সর্দির ট্যাবলেট এর নাম
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়। জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম।
আজকের এই আর্টিক্যালে আমরা জ্বর সর্দি কাশির লক্ষণ, জ্বর সর্দি কাশির ঘরোয়া পদ্ধতি, জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম এবং জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি সবার উপকারে আসবে।
জ্বর কী?
জ্বর বলতে স্বাভাবিক ভাবে শরীরের তাপমাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন সেই অবস্থাকে জ্বর বলা হয়। অর্থাৎ আমাদের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো (36–37° Centigrade) ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট । হঠাৎ যখন কোনো কারণে এই দেহের তাপমাত্রা যদি বেড়ে যায় এবং গরম অনুভব হয় তবে সেই শারীরিক অবস্থাকে জ্বর বলা হয়। জ্বর পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রকে বলা হয় ‘থার্মোমিটার’।
আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়।পায়খানা হওয়ার ঔষধের নাম
সর্দি কি
সর্দি সাধারণত ভাইরাস জনিত কারণে হয়ে থাকে। বিভিন্ন জীবাণু শ্বাসনালীতে সংক্রমণ করার ফলে সর্দি দেখা দেয় । সর্দির সংক্রমণের জন্য অনেক ভাইরাস রয়েছে। তবে এর জন্য সব থেকে বেশি দায়ী হল রাইনোভাইরাস। এছাড়া ও অনেক গুলো ভাইরাস রয়েছে যা সর্দির কারণ হতে পারে তা হল কোরোনাভাইরাস, রেস্পিরেটোরি সিংসিশিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি।
কাশি কি?
কাশি সাধারণত কোন কিছু গলায় প্রবেশ করলে কাশি দেখা দেয়। কাশি কে বলা হয় শরীরের একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবর্তী ক্রিয়া। কারণ যদি কখনো ধুলাবালি, ধোঁয়া বা অন্য যে কোন কিছু হঠাৎ আমাদের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে, সঙ্গে সঙ্গে কাশি দেখা দেয় । এ কাশির মাধ্যমে যা প্রবেশ করে তা শ্বাসনালি থেকে বের হয়ে যায়।
জ্বর সর্দি কাশির লক্ষণ
জ্বর সর্দি কাশি একটার সাথে আরেকটার সম্পর্কে রয়েছে। তাইতো একটা সমস্যা দেখা দিলে সাথে অন্য গুলো দেখা দেয়। জ্বর সর্দি কাশি সমস্যা শুরু হওয়ার আগে থেকেই শরীর কিছুটা পূর্বাভাস দেয়।তো চলুন জেনে নেই।
জ্বরের লক্ষণ :
- হঠাৎ ঠান্ডায় কাঁপুনি এবং শীত শীত অনুভূত হওয়া।
- মাথা ব্যাথা বা যন্ত্রণা শুরু হওয়া।
- চোখে জ্বালা ভাব লাগা।
- খাওয়ার রুচি কমে যায়।
- তাপমাত্রা বেড়ে ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে।
- হঠাৎ করে শরীর ঘামতে শুরু করলে।
- শরীরে তাপ বা গরম অনুভব হওয়া ।
- চোখ মুখ লাল হয়ে গেলে।
- শরীর দুর্বল অনুভব হওয়া।
- শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা অনুভব হওয়া।
সর্দির লক্ষণ :
- বার বার হাঁচি আসা।
- নাক বন্ধ হয়ে থাকা।
- চোখ, গাল, এবং কপালে চাপ বা ব্যথা অনুভব হওয়া।
- নাক দিয়ে পানি পড়া।
- নাক ভারি ভারি লাগা।
- কোনকিছুর গন্ধ নাকে না লাগা।
কাশির লক্ষণ :
- ঠান্ডা লাগলে।
- গলায় উচ কুচ লাগলে।
- সাধারণত জ্বর বা সর্দি হলে কাশি দেখা দেয়।
জ্বর সর্দি কমানোর ঘরোয়া উপায় :
জ্বর সর্দি কাশি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই সব থেকে বেশি দেখা দেয়। জ্বর দেখা দিলেই সাথে সাথে ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কখনো কখনো জ্বরের আসল কারণ না জানা থাকায় আরো মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। তাই, প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই জ্বর-সর্দি কাশি দ্রুত নিরাময় করতে পারবেন। চলুন জেনে নেই।
১। তুলসী পাতা :
জ্বর, সর্দি,কাশি, গলা ব্যথা আরো বিভিন্ন রোগের নিরাময় হিসেবে তুলসী পাতা খুবই জনপ্রিয়। তুলসী পাতার রস বিভিন্ন রোগের জন্য চমৎকার কাজ করে থাকে। তুলসী পাতাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উপাদান। যেমন, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ইত্যাদি যা জ্বর সর্দি কাশি দ্রুত উপশম করে ।
যেভাবে খাবেনঃ
কয়েকটি তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে গরম পানিতে পাতাগুলো ফুটিয়ে নিবেন। সেই ফোটানো পানি চেকে এক কাপ করে নিয়মিত খাবেন তাহলে দ্রুত জ্বর, সর্দি কাশি ভাল হয়ে যাবে।
২। আদা :
আদা সর্দি কাশির জন্য আদা খুবই উপকারি। অনেক আগে থেকেই মানুষ জ্বর, সর্দি কাশির জন্য আদা খেতো। আদার মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদান আমাদের শরিরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
যেভাবে খাবেনঃ
জ্বর সর্দি কাশির জন্য আদার চা খেতে পারেন অথবা এক কাপ আদার রসে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। শুধু আদা মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারলে সর্দি কাশির জন্য বেশ উপকার হবে।
৩। দারুচিনি :
গলা ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, কফ দূর করতে দারুচিনি খুবই কার্যকরি একটি উপাদান। এই দারুচিনিতে অ্যান্টি ফাংগাল, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ভাইরাল উপাদান বিদ্যমান যা বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
যেভাবে খাবেনঃ
এক চামচ দারুচিনির গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে কমপক্ষে তিন দিন দিনে ২-৩ বার খাবেন। অথবা চায়ের সাথে দারুচিনি দিয়ে দিনে কয়েকবার চা খেতে পারেন। এতে ও সর্দি কাশির জন্য বেশ উপকার হবে।
৪। রসুন :
রসুন যদিও একটা রান্নার উপাদান কিন্তু রসুনে অনেক উপকারিতা রয়েছে। রসুন ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাস জ্বর , ঠাণ্ডায় সর্দি কাশি দূর করার জন্য ও রসুন খুব ভাল কাজ করে। এবং শরীরে বিষ বেদনা দূর করে।
যেভাবে খাবেনঃ-
রসুন বিভিন্ন ভাবে খেতে পারেন। ৫ থেকে ৬ কোয়া রসুন ভাল করে থেঁতো করে নিয়ে সেটা এভাবেই মুখে নিয়ে খেতে পারেন। খাওয়ার পর ভাল করে মুখ ধুয়ে নিবেন না হয় মুখে রসুনের গন্ধ করবে। এভাবে না খেতে পারলে থেঁতো করে স্যুপের সঙ্গে মিক্স করে খেতে পারেন অথবা তরকারি তে বেশি বেশি রসুন দিয়ে সেটা ও ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সেক্সে রসুনের উপকারিতা
৫। ধনে বীজ :
রান্নায় আমরা ধনে বীজ ব্যবহার করে থাকি আমাদের অনেকেই হয়তো জানিনা যে, এই ধনে বীজ শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ানোর জন্যই ব্যবহার হয়না পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময়ে ও কার্যকরি ভূমিকা রাখে।
যেভাবে খাবেনঃ-
ধনে বীজ আপনি যেভাবে ইচ্ছা ওইভাবে খেতে পারেন। তরকারির সাথে অথবা কোন ভর্তার সাথে খেতে পারেন। এটা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।
৬। মধু:
মধুকে বলা হয় সব রোগের ঔষধ। কেননা মধু এমন একটি উপাদান যাতে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এবং সকল ধরনের সমস্যায় মধু কার্যকরি ভূমিকা রাখে।জ্বর কিংবা সর্দি-কাশি দূর করণে মধু খুব ভাল কাজে দেয়।
যেভাবে খাবেন:-
মধু আপনি হাতে নিয়ে খেতে পারেন। বা চায়ের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। কাশির জন্য তুলসীপাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন এতে গলার কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে । সর্দি-কাশি হলে প্রতিদিন সকালে মধু আর তুলসিপাতা একসঙ্গে খেতে পারেন । এতে আরামদায়ক হবে।
আরো পড়ুনঃ মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
৭। আদা চা
আদা সম্পর্কে যদিও বলেছি তারপর ও আবার বলতেছি কারণ সর্দি কাশির জন্য আদা চমৎকার ভাবে কাজ করে। বেশি বেশি আদার চা খেতে পারেন এতে আপনার গলার ব্যাথা, সর্দি কাশি, সব ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে।
যেভাবে খাবেনঃ-
সাভাবিকভাবে চা বানিয়ে তাতে আদা কুচি দিয়ে পান করতে পারেন। চাইলে সাথে লেবুর রস বা মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার মথা ধরা দূর হয়ে যাবে।
৮। ভিটামিন
জ্বর সর্দি কাশি কিংবা অন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে বেশি বেশি ভিটামিনযুক্ত সবুজ শাক সবজি খেতে হবে। শরীরে বিভিন্ন ভিটামিনের অভাব দেখা দিলে শরীর আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন বিভিন্ন রোগজীবাণু সহজেই আক্রমণ করে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে।
যেভাবে খাবেনঃ-
খাবার তালিকায় তিনবারই কিছু সবুজ শাক সবজি রাখুন। সকল মৌসুমে বিভিন্ন শাক সবজি পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন সব ধরনের ভিটামিন আছে এমন শাক সবজি খেতে।
৯। তরল খাবার
জ্বর সর্দি কাশি হলে তরল খাবার খেতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় যে, বুকে কফ জমে যায় তা বের করা সহজ নয় । সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে ইনফেকশন ও হয়ে যেতে পারে। তাই সর্দি কাশি হলে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই বুকে কফ না জমে যায়। তাই এই সময় বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে।
যেভাবে খাবেনঃ-
তরল জাতীয় খাবার যা শরীরের জন্য ভাল এমন খাবার খেতে পারেন। অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানি পানের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ফ্রুট জুস বা স্যুপ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। তরল খাবার কফকে সহজে বুকে জমতে দেয় না।
১০। বিশ্রাম
জ্বর কিংবা অন্য যে কোন অসুস্থতায় শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পরে। এইসময় যথেষ্ট পরিমান বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রাম নিলে শরীরের দূর্বলতা কাটে। তাই অসুস্থতায় যথেষ্ট পরিমান বিশ্রাম নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গলা ব্যাথার ঔষধ কি? দ্রুত গলা ব্যাথা কমানোর উপায়।
জ্বর সর্দি কাশির ঔষধের নাম
জ্বর সর্দি কাশির অনেক ঔষধ রয়েছে। নিচে সবার পরিচিত কিছু ঔষধ আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করছি যা জ্বর সর্দি কাশির জন্য ভাল কাজ করে থাকে।
জ্বরের ট্যাবলেট এর নাম
Napa
Napa Extra
Napa Extend
Napa Rapid
Ace
Ace plus
Fast
Fast Plus
জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম।
Zimex 250 mg
Zimex 500 mg
AZ 250 mg
AZ 500 mg
Adiz 250 mg
Adiz 500 mg
Azin 250 mg
Azin 500mg
সর্দির ট্যাবলেট এর নাম
Histacin
Histalex
Histamin
Histanol
Histin
কাশির ট্যাবলেট/ক্যাপসুল এর নাম
- Ambrox SR 75mg
- Acorex 30mg
- Ambeet 75mg
- Ambozin SR 75mg
- Ambroxol SR 75mg
কাশির সিরাপের নাম
- Ambrox
- Adovas
- Tusca Plus
- Boxol
- Ambolit
- Dexpoten
- Sudocof
- Ocof
নাকের ড্রপ এর নাম
- Afrin
- Azolin NS
- Antazol
- Natazol
- Oxrin
বিশেষ সতর্কতা! আমরা শুধু ঔষধ এর নাম শেয়ার করেছি। তবে উচিৎ হল ডাক্তার দেখিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করবেন না।
শেষ কথা
জ্বর সর্দি কাশি এই গুলো সাধারণ রোগ বলেই আমরা জানি। তবে কখনো কখনো তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই কখনো অবহেলা করা যাবেনা। অসুস্থতা দেখা দিলেই সাথে সাথে ঔষধ খাওয়াবেন না।
বিশেষ করে জ্বরের ক্ষেত্রে প্রথমে ঘরোয়া উপায়ে চেষ্টা করুন সাথে প্যারাসিটামল খেতে পারেন তবে জ্বরের এন্টিবায়োটিক কোন ঔষধ খাবেন না। ৩ দিন পর ও যদি না কমে তাহলে ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে। ধন্যবাদ
Leave a Reply