তারাবির নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

তারাবির নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত: শুরু হল রমজানুল মোবারক। দীর্ঘ একটি বছর পর সেই বরকতময় মাসের আগমন। এইমাসের ইবাদাত অন্যান্য মাসের তুলনায় সওয়াব বেশি। এই মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলের কিছু আমল হল সেহরি খাওয়া,ইফতার করা, দিনে রোজা রাখা আর রাতে তারাবিহ এর নামাজ পড়া। দিনে রোজা রাখার পর রাতে মুসলমানরা প্রতিদিন রাতে ইশার নামাজের পর তারাবির নামাজ আদায় করে থাকেন।

তারাবির নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ

তারাবির নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। এশার নামাজের পর সুন্নত পরে তারপর শুরু হয় ২০ রাকাত তারাবিহ এর নামাজ। ছোট বা লম্বা কেরাতে ২ রাকাত করে প্রতি ৪ রাকাআত নামাজ পড়ার পর পর একটু বিশ্রাম গ্রহণ করার মাধ্যমে রাত জেগে এই তারাবির নামাজ আদায় করা হয় । এই রমজানে যত বেশি নামাজ পড়া যায় তত বেশি সওয়াব।

তারাবি নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত বাংলা অর্থসহ

তারাবিহ নামাজে প্রতি ৪ রাকাত পর পর যখন বিশ্রাম নেওয়া হয় তখন বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ, দরুদ শরীফ ও অন্যান্য দোয়া কালাম পাঠ করা হয়।  আমাদের দেশে একটি দোয়া প্রচলিত রয়েছে যা প্রতি ৪ রাকাত পর পর পড়া হয়। এবং ২০ রাকাত নামাজ শেষে একটি মোনাজাত রয়েছে যা আমরা পড়ে থাকি।

এই দোয়া ও মোনাজাত আমরা শুধু রমজান মাস আসলেই পড়ে থাকি তাই দেখা যায় যে অনেকেই এই দোয়া ভুলে যায়। কেউ বা মুখস্থ করতে পারেনা। তাই তাদের জন্য আজকের এই আর্টিক্যাল এর মাধ্যমে আমরা  তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ শিখবো। তাই মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি পড়ুন।

তারাবির নামাজ কি?

তারাবিহ শব্দটি আরবি ভাষার শব্দ।  আরবি ভাষায় তারাবিহ (تَرَاوِيْح) শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিশ্রাম করা’। শরিয়তের পরিভাষায় মাহে রমজানের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত যে সুন্নত নামাজ আদায় করা হয় তাই হল তারাবির নামাজ। তারাবিহ এর নামাজ দীর্ঘ রাকাত হওয়ার কারণে  কষ্ট না হয় সেজন্য বিশ্রাম নিয়ে পড়া হয়। আর  তারাবি নামাজ পড়াকালীন প্রতি  চার রাকাত পরপর একটু বিশ্রাম করা হয় তাই তার  নাম দেওয়া হয় তারাবিহ।

আরো পড়ুনঃ রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ 

তারাবির নামাজের ফজিলত


তারাবিহ নামাজের ফজিলত
অনেক বিভিন্ন হাদিসে রাসুল সাঃ এর ফজিলত উল্লেখ করেন। নিচে তারাবিহ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে ২টি হাদিস উল্লেখ করা হল।

১। তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করেন, তাঁর অতীতকৃত পাপগুলো ক্ষমা করা হয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

২। আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে সওয়াব প্রাপ্তির আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের আগের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

তারাবির নামাজের নিয়ত:

نويت ان اصلى لله تعالى ركعتى صلوة التراويح سنة رسول الله تعالى متوجها الى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

বাংলা অর্থ: আমি কিবলামুখী হয়ে ( যদি জামাআ’তের সহিত হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত। )দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার।

তারাবির নামাজের বাংলা নিয়ত

কেউ যদি আরবিতে নিয়ত না পারে বা তার অর্থ অনুযায়ী বাংলাতে বলতে না পাররে অন্তত এই টুকু বলতে পারলেই হবে যে, “আমি ইমামের পিছনে সুন্নত তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম” তাহলেই হবে।

তারাবির নামাজের দোয়া:

তারাবিহ নামাজের দোয়া প্রতি ৪ রাকাত পড়ার পর পর যে কোন দোয়া, দুরুদ, ইস্তেগফার বেশি বেশি পড়া উত্তম। তবে প্রসিদ্ধ একটা দোয়া আছে যা আমাদের দেশে পড়া হয়। নিচে তার আরবি এবং বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ দেওয়া হল।

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’

সুবহানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি বাংলা অর্থ


অর্থ :
আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্তা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজাধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্তা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিবরাইলের (আ.) প্রতিপালক।

আরো পড়ুনঃ রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি এবং রোজার মাকরূহ সমূহ 

তারাবির নামাজের মুনাজাত:

তারাবি নামাজের শেষে প্রসিদ্ধ একটি মোনাজাত রয়েছে যা চার রাকাত পর পর মোনাজাত করা যায়, আবার একেবারে তারাবিহ নামাজ শেষ করেও একবারেই মোনাজাত করা যায়। নিচে দেওয়া তারাবির নামাজের মোনাজাত উল্লেখ করা হল।

اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’

বিঃদ্রঃ তারাবিহ নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দোয়া বা মোনাজাত নেই। আমরা সব সময় নামাজের ক্ষেত্রে যে সব দোয়া পড়ে থাকি এগুলো পড়লে ও হবে। তবে বর্তমানে যে দোয়া ও মোনাজাত প্রচলিত রয়েছে তা কুরআন হাদিসে বর্ণিত কোন দোয়া নয়। তা  পূর্বে কোনো এক বুজূর্গ দোয়া ও মোনাজাত টি পড়েছেন এবং তার সাগরেদদের শিক্ষা দিয়েছেন। যার অর্থ ভাল এবং উত্তম বিধায় সবার মাঝে পরিচিতি পায়। তাই আমরাও তারাবিহ নামাজে এই দোয়া ও মোনাজাত পড়ে থাকি।

তারাবি নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাতের ছবি

তারাবির নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ


তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন

তারাবির নামাজ সুন্নত। তারাবি নামাজের কিছু নিয়ম রয়েছে। সাধারণত তারাবি নামাজ আমাদের দেশে ২ ভাবে পড়া হয়। 
১. খতম তারাবি 
২. সূরা তারাবি

খতম তারাবি পড়ার নিয়ম

খতম তারাবি পড়ার নিয়ম হল এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজের পর ২ রাকাত সুন্নত পড়বে।  তারপর ২ রাকাত করে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়বে। প্রতি রাকাতে নিয়ম অনুযায়ী প্রথম ৬ তারাবিতে দেড় পারা করে ৯পারা এবং পরের তারাবি নামাজে ১ পারা করে ২৭ রমজানে সবে ক্বদরে খতম দিবে। প্রত্যেক ৪ রাকাত পড়ার পর একটু সময় বিরতি নিবে। আর ২০ রাকাত নামাজ পড়ার পর বিতরের নামাজ পড়বে।

সূরা তারাবি পড়ার নিয়ম 

সূরা তারাবি পড়ার নিয়ম হল এশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজের পর ২ রাকাত সুন্নত পড়বে।  তারপর ২ রাকাত করে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়বে। প্রত্যেক রাকাতে যে কোন সূরা বা আয়াত তেলাওয়াত করতে পারবে। এভাবেই প্রতিদিন ২০ রাকাত নামাজ আদায় করবে।  এরপর বিতরের ৩ রাকাত নামাজ পড়বে।

তারাবি নামাজ কত রাকাত?

তারাবি নামাজ কত রাকাত তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তারাবি নামাজের রাকাত নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি একেকজনের মতে একেক রাকাত। তবে হানাফি, শাফিয়ি এবং হাম্বলী ফিকহ অনুসারে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত। অন্যদিকে মালিকি ফিকহ অনুযায়ী তারাবি নামাজ ৩৬ রাকাত এবং আহলে হাদিসদের মতে তারাবি নামাজ ৮ রাকাত। তবে প্রসিদ্ধ হল ২০ রাকাত। আমরা ২০ রাকাতই পড়বো।

যেহেতু রমজান মাস যত বেশি ইবাদাত করা যায় ততই লাভ। তবে কেউ যদি অসুস্থ বা অন্য কোন সমস্যা থাকে তাহলে ৮ রাকাত বা ১২ রাকাত পড়তে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করবো ২০ রাকাতই পড়তে।

সৌদি আরবে তারাবির নামাজ কত রাকাত?

সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনায় সবসময় ২০ রাকাত তারাবি পড়া হয়। মক্কা ও মদিনার বাহিরে অন্যান্য মসজিদে বেশিরভাগ মসজিদে ৮ রাকাত তারাবি পড়া হয় বেতর সহ ১১ রাকাত।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

তারাবি নামাজ সুন্নত নাকি নফল এটা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তারাবি নামাজ পড়ার জন্য দাড়ালে তখন মনে হয় কিসের নিয়ত করবো সুন্নত নাকি নফল। সহিহ মত অনুযায়ী তারাবি নামাজ হল সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তাই তারাবি নামাজ আদায় করতে হবে।

শেষ কথা

রমজানের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হচ্ছে তারাবিহ। রমজানে ৩০ টা রোজার পাশাপাশি তারাবি পড়তে হয়।তাই তারাবি নামাজের নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত আমাদের শিখা উচিত। এবং রমজানে বেশি বেশি নামাজ কুরআন তেলাওয়াত ও নেক আমল করা।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *