নাইট ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম। বাজারের সেরা ৫ টি নাইট ক্রিম।
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে নাইট ক্রিম আসলে কি? নাইট ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম,নাইট ক্রিম ব্যবহারের উপকারিতাই বা কি? আজ আমরা এইসব কিছুর উত্তর জানবো এবং আরো জানবো বাজারের সব থেকে ভাল ৫ টি নাইট ক্রিম কি? চলুন জেনে নেই।
চাকরিজীবী মানুষের সারাদিনের ব্যস্ততার পর রাতের বেলা কি করা হয় ? অবশ্যই বিশ্রাম করা হয় , এরপর শান্তির ঘুম দেওয়া হয় কি ঠিক তাই না ? দিনের শেষে যখন আমরা বিশ্রাম নেই তখন এই শরীর আর মনের ক্লান্তি দূর হয় । ঠিক সেই পরদিন আবার ও সকালে ঘুম থেকে উঠে তখন আবার তরতাজা লাগে।
দিনের সেই প্রখর রোদ, ধুলো,বালি, ময়লা দূষণের এই ঝক্কির পরে ত্বকের জন্য বা ত্বকের যত্নর নেওয়ার একটা ‘মি টাইম’ প্রয়োজন হয় । সূর্যাস্হ সময় থেকে সূর্যোদয় সময় পর্যন্ত যে সময়টুকু আছে, সেই সময় হলো ত্বককে বিশ্রাম দেওয়ার, ত্বককে মেরামত করা এবং ত্বকে তরতাজা করার সবথেকে ভালো ও উপযুক্ত সময়|
আমরা প্রায় সবাই দিনের বেলায় নিজের ত্বকের যত্ন নিলেও রাতের সময় ত্বক পরিচর্যা করতে অলসামি, ঘুম ঘুম ভাব এবং গাফিলতি করে থাকি । তবে এই কাজের ক্ষেত্রে একটু ও গাফিলতি করা চলে না। তাই রাতে ত্বকে সুন্দর উজ্জ্বল ও যত্ন নেওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে ত্বকের নাইট ক্রিমের ব্যবহার। রাতে ত্বক পরিচর্যায় নাইট ক্রিমের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের ত্বক ফর্সা করার সবচেয়ে ভালো উপায়। এবং ছেলেদের ত্বক ফর্সা করার সবচেয়ে ভালো ১০ টি ক্রিম।
আসলে আপনারা কি জানেন রাতের সময়ে নাইট ক্রিম ত্বকের যত্ন নেওয়াটা এতো কেন গুরুত্বপূর্ণ ভেবে দেখেছেন কি ? কারণ রাতে আমরা যখন বিছানার বিশ্রাম নেই, ঠিক তখনই আমাদের ত্বকের ভিতরে থাকা কোষগুলি তার কাজ গুলো করতে শুরু করে দেয়। আমরা বিছানায় শুয়ে পরা মাত্রই ত্বকের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলির কাজ শুরু করে। আর নাইট ক্রিম হলো সারাদিন ধরে ত্বকের সেই হারিয়ে ফেলা আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
তখন ত্বকের উজ্জলতা বাড়ায়। যার কারনে পরেরদিন যখন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে নিজেদের ত্বককে দেখাবে অনেক ঝলমলে উজ্জ্বল, সুন্দর, মসলিন এবং তরতাজা।
বাজারের সবচেয়ে ভাল ৫ টি নাইট ক্রিম ও তার উপকারিতা
নিজের ত্বকে আরো সুন্দর, উজ্জ্বল এবং মসলিন করতে যারা এখন পর্যন্ত এই নাইট ক্রিম ব্যবহার করেননি। দেরি না করে এখনি ত্বকের জন্য নাইট ক্রিম ব্যবহারের অভ্যাস করে ফেলুন । প্রতিদিন সকালে যখন ঘুম থেকে ওঠার পর আয়নায় নিজের উজ্জ্বল আর সুন্দর ত্বক দেখতে কেমন লাগে তা দেখুন। ফলে এই নাইট ক্রিম ব্যবহারের আপনাদের ত্বকের পরিবর্তন বুজতে পারবেন এর মাধ্যমে। তাই অনেকেই জানতে চায় কোন নাইট ক্রিম সবচেয়ে ভাল? তাদের জন্যই নিয়ে এসেছি ত্বকের যত্নে বাজারের সেরা ৫টি নাইট ক্রিম এবং তা ব্যবহারের নিয়ম।
১/ ডার্মালজিকা ওভারনাইট ক্লিয়ারিং জেল
দীর্ঘদিন যাবত আপনি কি অ্যাকনে এবং অন্য নানা রকমের ত্বকের দাগছোপের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে অবশ্যই আপনার জন্য এই ক্রীমটি। কারণ এটি অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান যা সিবাম নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে ত্বককে করে তোলে সুন্দর এবং ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে | যখন রাতে শুতে যাবেন তার আগে মুখে ভালো করে ধুয়ে, পরে ভালো করে এই জেলটি মুখে ভালো ভাবে মাখুন। তার পর সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার পরিবর্তন আপনি নিজের চোখেই দেখবেন।
২/ লেকমে অ্যাবসোলিউট পারফেক্ট রেডিয়ান্স স্কিন ক্রিম
এই ক্রিম গরমে অথবা শীতে সব রকমের ঋতুতে এবং সবরকম ত্বকে ব্যবহার করা যায় এই ল্যাকমের নাইট ক্রিমটি। এটির কাজ শুধু মাত্র ত্বকের শুধু রিপেয়ার করে থাকে না , তার সাথে সাথে ত্বককের ময়েশ্চরাইজ়িংও করে থাকে এবং ত্বককে করে করে তুলে আরও সুন্দর, উজ্জ্বল এবং ঝলমলে | কারন এই ক্রীমটি মাইক্রো ক্রিস্টাল আর লাইটেনিং ভিটামিন ভিটা-রিসোর্সিনলে সমৃদ্ধ, যা ত্বকের রংকে করে তুলে হাল্কা। যার কারনে গায়ের রং হয় ঝলমলে এবং ফর্সা।
৩/ পন্ডস গোল্ড রেডিয়ান্স ইয়ুথফুল
সাধারণত আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বক কোঁচকানো ভাব দেখা দিয়ে থাকে যেমন, বলিরেখা, মেচতা এবং দাগছোপ ইত্যাদি দেখা যায়। পন্ডস গোল্ড রেডিয়ান্স ইয়ুথফুল নাইট ক্রিম,।যা ত্বকের সকল ধরনের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে থাকে । যাতে আছে সোনার রেণু, ভিটামিন এ আর ভিটামিন বি ৩ । এর কারনে নাইট ক্রিমকে বয়স্ক ত্বকের উজ্জ্বলতা ফেরানোর মৃতজিবনি বলে থাকে ।
শুধু যে এই ক্রিম আমাদের ত্বকের কোঁচকানো ভাব দূর করে না, এর সাথে বলিরেখা, মেচতা, দাগছোপ দূর করে থাকে। আবার ত্বকের বিবর্ণভাব এবং শুষ্কতাও কমানর কাজ করে থাকে। যার কারনে আপনার ত্বক হয় আরও সুন্দর আরো আর্দ্র, সুষম এবং মসলিন।
৪/ ল্যাকমে ইয়ুথ ইনফিনিটি স্কিন স্কাল্পটিং
এই ক্রিম সাধারনত ম্যাড়মেড়ে ত্বক সাথে ঝুলে যাওয়া ত্বক আসলে দেখতে কারোরই ভালো লাগে না।এছাড়া এরকম ত্বক মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে । ত্বকের এই সমস্যা সমাধানে জন্য নির্ভর করতে পারেন অ্যান্টি-এজিং নাইট ক্রিমের উপর। এই ক্রিমটি ত্বকের টানটান ভাব বাড়িয়ে থাকে আর ত্বকের বাঁধুনি করে আর ও সুন্দর । তাছাড়া ও এর লুমিনাইজ়িং পার্লস ত্বককে করে তুলে আরো উজ্জ্বল এবং আরো ঝলমলে|
5/ পন্ডস এজ মিরাকল রিঙ্কল কারেক্টর
অল্প বয়স অর্থ্যাৎ কম বয়সে অনেকের ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া এর প্রতিরোধ করতে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ এইসব চিহ্নগুলির মোকাবেলা করার জন্য এই উপযোগী একটি ক্রীম হচ্ছে পন্ডসের রিঙ্কল কারেক্টিং নাইট ক্রিম। এই ক্রিমটি খুব তাড়াতাড়ি ত্বকের ভিতরের কোষের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে থাকে।তাছাড়া ও চোখের সব সূক্ষ্ম বলিরেখা, ডার্ক স্পটস, ব্রন, স্মাইল লাইনস আর ডার্ক সার্কলস ইত্যাদিকে কমাতে সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ক্রিম
নাইট ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম।
আসলে নাইট ক্রিম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ঠিকমতো না মানলে এর বিপরীত হতে পারে। চলুন নাইট ক্রিম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে নেওয়া যাকঃ
নাইট ক্রিমঃ – নাইট ক্রিম ব্যবহারের সময় অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে আপনাদের মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তাছাড়া ও ফেসওয়াশ (শীতে ক্লেনজ়ার) দিয়ে মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে তা পরিষ্কার করে নিতে হবে। এর পর একটি পরিস্কার তোয়ালে দিয়ে হালকা করে মুখ মুছে নিতে হবে।
তার পর স্কিন টোনার লাগাতে হবে। আমরা প্রায় সবাই জানি টোনার আমাদের ত্বকের জন্য খুবই ভালো।আবার যাঁরা ঘন ঘন মুখে মেকআপ করে থাকেন, তাঁরা ‘বুস্টার’ সেরাম লাগাতে পারেন, আর না থাকলে নাই। তারপর হচ্ছে আন্ডার আই ক্রিম। দেখবেন যদি কারো ত্বকের আসে পাশে কোথাও মেচেতা বা ছোপ থেকে থাকে তাহলে সেখানেও আই ক্রিম লাগিয়ে নিতে পারেন। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে চোখের পাতায় যেন এই ক্রিমটি না লাগে।
এই ক্রিম কোনও ভাবেই জেনো ও চোখের ভিতরে না লাগে । তারপর সবশেষে ক্রিম মুখে লাগিয়ে নিন। আঙুলের ডগায় আলতো করে ক্রিম নিয়ে তা গলার নীচ থেকে উপরের লাগিয়ে নিতে হবে এবং গালের নিচে ক্রিমটি লাগিয়ে নিতে হবে।
এই নাইট ক্রিম ব্যবহারের সতর্কতা
যদি আপনার বয়স ২৪ বছরের এর কম হয় তবে এই নাইট ক্রিম ব্যবহার না করাই সবচেয়ে ভালো। এই সকল নাইট ক্রিম মধ্যে থাকে বিভিন্ন ধরনের ক্যেমিকেল যা দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। যার কারনে এগুলো খুবই ভারী হয়ে থাকে। আসলে পাশাপাশি বেশি পরিমান নাইট ক্রিম ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে নাইট ক্রিম তৈরি করার উপায়ঃ
আপনারা ইচ্ছে করলে বাজারের যে নাইট ক্রিম পাওয়া যায় তার পরিবর্তে বাসায় বসে ঘরোয়া উপায়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে এবং সহজ পদ্ধতিতে নাইট ক্রিম বানাতে পারেন।এর কারনে আপনাদের বাড়তি দাম ও গুনতে হবে না। এতে করে স্কিনে সমস্যা বা কোন রকমের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
ঘরোয়া উপায়ে সহজে নাইট ক্রিম তৈরির করার উপকরণঃ
খুব সহজ উপায়ে ঘরে বসেই এই নাইট ক্রিম তৈরি করতে পারেন।এটি বানাতে যা যা লাগবে- অ্যাপেল, গোলাপজল, ৩ চামচ গোলাপজল, ২ চা চামচ অলিভঅয়েল অল্প একচিমটে পরিমান হলুদগুঁড়ো।
আরো পড়ুনঃ মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার ৮ টি ক্রিম ও তার ব্যবহার
নাইট ক্রিম বানানোর পদ্ধতি
প্রথমে একটি ব্লেন্ডার নিবেন, তারপর ব্লেন্ডারের অ্যাপেল দিয়ে তা ভালো করে পেষ্ট করে নিন। এর পর অ্যাপেলের সাথে অলিভ ওয়েল এবং গোলাপজল দিয়ে দিন, এবং ভালো ভাবে তা মিশিয়ে নিন। একচিমটে পরিমান হলুদের গুঁড়ো দিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন এক চিমটের বেশি যেন হলুদ না দিয়ে দেন । এইতো হয়ে গেল খুব সহজে ঘরে বসে নাইট ক্রিম তৈরি। এরপর একটি টাইট কৌটায় ক্রিমটি রেখে ফ্রিজে রাখতে হবে তা সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত এই নাইট ক্রিমটি ব্যবহার করা যাবে।
আপনারা কি জানেন কোথায় নাইট ক্রিম কিনতে পাওয়া যায়?????
আপনি বাজারের সব থেকে ভাল কসমেটিকস এর দোকান থেকে নিতে পারেন।আবার বাংলাদেশে অসংখ্য অনলাইন শপ আছে। যারা কিনা বিভিন্ন কসমেটিক্স বিক্রি করে থাকে। বিশ্বাসযোগ্য কোন অনলাইন শপ থেকে কিংবা ব্রান্ড শপ থেকে কিনাই সবচেয়ে ভালো । তবে কেনার আগে অবশ্যই ভালো করে এর রেটিংস ও রিভিউ দেখে নিতে হবে।
শেষ কথা
চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নাইট ক্রিম সবথেকে ভাল কার্যকরি উপায়। তাই অনেকেই জানতে চায় নাইট ক্রিম কোনটা ভাল বা কম দামে ভাল নাইট ক্রিম কোনটি তাদের জন্যই লেখা আজকের এই আর্টিক্যাল। আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন ধন্যবাদ।
Leave a Reply