নাকের সর্দি দূর করার উপায়: সর্দি হলে কার ভাল লাগে! বলতে গেলে বিরক্তিকর একটা সমস্যা। বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে আমাদের মধ্যে প্রায় মানুষের জ্বর সর্দি কাশি দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে সর্দিই সব থেকে বোশি। ছোট থেকে বড় সবারই সর্দির সমস্যা হচ্ছে। অনেকেই বলে থাকেন সর্দি হলে আমাদেরই উপকার হয় কিন্তু এটা খুবই বিরক্তিকর।
নাকের সর্দি সব থেকে বিরক্তিকর জিনিসের মধ্যে একটা। কারণ কোন কারণে সর্দি হলে দেখা যায় সারাক্ষণ নাক টানতে হয় নাক মুছতে হয়। কখনো নাক বন্ধ হয়ে যায় নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় কি যে এক অস্বস্তিতে পড়তে হয়। কখনো কখনো দেখা যায় নাক টানতে টানতে নাক লাল হয়ে যায় নাক ব্যাথা করে।
নাকের সর্দি দূর করার উপায়
আমি মনে করি, নাকের এই সর্দি দূর করার উপায় সবারই জানা থাকা উচিত। তাহলে যখনই নিজের কিংবা পরিবারের কারোর সর্দি হলে উপায় গুলোর মাধ্যমে দ্রুত সর্দি থেকো মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তাই আজকের এই আর্টিক্যালে নাকের সর্দি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
সর্দি কি?
প্রথমেই আমাদের জানা উচিত আসলে সর্দি কি?সর্দি সাধারণত ভাইরাস জনিত একটি সমস্যা বা রোগ। যখন বিভিন্ন জীবাণু বা ভাইরাস শ্বাসনালীতে সংক্রমণ করে ফলে আমাদের সর্দি দেখা দেয় । সর্দির সংক্রমণের জন্য বিভিন্ন ভাইরাস দায়ী। এর মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস, রেস্পিরেটোরি সিংসিশিয়াল ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি। তবে এর জন্য সব থেকে বেশি দায়ী হল রাইনোভাইরাস। যা সহজেই আক্রমণ করে সর্দি বাধিয়ে দেয়।
ঠান্ডা বা শীতের মৌসুমে এই ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মত পরিবেশ পায় দ্রুত আক্রমণ করতে পারে। তাই পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে বা শীতের সময় এই ভাইরাস গুলো দ্রুত আক্রমণ করে এবং সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তাই শীত কালে মানুষের বেশি সর্দি হতে দেখা যায়।
সর্দির লক্ষণ :
সর্দির বেশ কিছু লক্ষণ আমরা দেখতে পায় তা হলঃ-
- বার বার হাঁচি দেওয়া।
- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- চোখ, গাল, এবং কপালে চাপ বা ব্যথা অনুভব হওয়া।
- নাক দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়া।
- নাক ভারি ভারি মনে হওয়া ।
- কোনকিছুর গন্ধ নাকে না লাগলে।
ঘন ঘন সর্দি লাগা কিসের লক্ষণ
অনেকের ধারণা যে ঘন ঘন সর্দি হলে হয়তো মারাত্মক কোন সমস্যার কারণে এমন হচ্ছে। তাই অনেকেই জানতে চায় ঘন ঘন সর্দি লাগা কিসের লক্ষণ? বস্তুত ঘন ঘন সর্দি লাগা কোন কিছুরই লক্ষণ নয়। সর্দি এটা সাভাবিক প্রক্রিয়া। বড় কোন রোগের লক্ষণ সর্দি হয়না। তাই ঘন ঘন সর্দি হলে ও চিন্তার কোন কারণ নেই।
সর্দি থেকে মুক্তির উপায়
সর্দি থেকে মুক্তির অনেক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে আছে, সর্দির ট্যাবলেট, সর্দির ড্রপ, সর্দি দূর করার ঘরোয়া উপায়, সর্দি থেকে বেঁচে থাকতে করণীয়। অর্থাৎ সর্দি হলে যে যে উপায়ের মাধ্যমে আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করবো।
নাকের সর্দি দূর করার ঔষধ
নাকের সর্দি এটা সাধারণ অসুখ হলে ও খুবই বিরক্তিকর। যদি হালকা সর্দি হয় তাহলে ঔষধ না খাওয়াই ভাল। ৩-৪ দিনের মধ্যে আপনা আপনি ভাল হয়ে যাবে। আর যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে বিভিন্ন ঔষধের মাধ্যমে দ্রুত নিরাময় লাভ করা যায়। পর্যায়ক্রমে তা উল্লেখ করা হল।
সর্দির ট্যাবলেট এর নাম
Medicine Name → Company → Unit price
Histacin → Jayson Pharma→ 1 Taka
Histalex → Acme →1 Taka
Sinamin →Ibn Sina →1 Taka
Fexo 60 →Square → 4 taka
Deslor → Orion Pharma → 4 Taka
Neocilor →Incepta →3 Taka
সর্দির ড্রপ
Drop Name → Company → Unit price
Afrin → Aristopharma → 45 Taka
Azolin NS → Acme →45 Taka
Antazol → Square →20 Taka
Natazol → Ibn Sina → 45 Taka
Oxrin → Globe Pharma →45 Taka
সর্দিতে নাক বন্ধ হলে করণীয়
সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে যায়। তখন শ্বাস নিতে খুবই কষ্ট হয়। শ্বাস নেওয়া যায়না মুখ দিয়ে হা করে শ্বাস নিতে হয়। যা খুবই বিরক্তিকর। এইরকম অবস্থা হলে নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন। অথবা নিচের এই নিয়মগুলো মেনে চললে উপকার পেতে পারেন।
১। নাক সবসময় পরিস্কার রাখুন।
২। নাকে সর্দি আসতেই ঝেড়ে ফেলুন, সর্দি নাকে আটকে রাখবেন না।
৩। নাক পরিষ্কার করার জন্য স্যালাইনের ড্রপ ব্যবহার করতে পারেন।
৪। প্রচুর পানি পান করুন।
৫। সর্দি আটকে গেলে নাক এবং কপালে হালকা গরম সেঁক দিন।
৬। গরম চা পান করতে পারেন।
৭। ঝাঁঝালো মেনথল মলম ব্যবহার করতে পারেন বা শ্বাস নিতে পারেন।
৮। মাঝে মধ্যে গরম পানিতে গরগর করুন।
৯। ঠান্ডা লাগলে কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন।
১০। আপনার নাক যদি সর্দি ছাড়া অ্যালার্জির কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন।
সর্দি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
সর্দি দ্রুত ভাল হওয়ার জন্য ঘরোয়া উপায় বেশ কার্যকর। তাই চাইলে নিচের উপায় গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন আশা করি কাজে আসবে।
লেবু ও মধুর চা
লেবু ও মধুর চা পান করতে পারেন।
লেবু ও মধুর চা ও আদা চায়ের মত খুবই উপকারী। এক গ্লাস গরম পানিতে দুই চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন এতে আপনার সর্দি-কাশির জন্য খুবই উপকারি হবে।
তুলসী পাতা ও আদা
এক গ্লাস পানিতে কয়েকটা তুলসী পাতা ও কিছু আদা কুচি কুচি করে কেটে দিয়ে ভালভাবে ফোটাতে হবে। তারপর এই ফোটানো পানি চায়ের মত করে দিনে অন্তত দুইবার পান করুন। এতে সর্দি-কাশি অনেকটা কমে আসবে।
রসুন
রসুন যদি ও মসলা হিসেবে ব্যবহার করি কিন্তু এতে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সর্দি-কাশি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘি এর সাথে চার-পাঁচ কোয়া রসুন ভেজে নিয়ে গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নিন। এতে আরামবোধ করবেন।
আদা ও চা
সর্দি কাশিতে সব থেকে বেশি উপকার করে হল আদার চা। ঠান্ডার সমস্যা নিরাময়ে আদা চায়ের বিকল্প নেই বললেই চলে। আদা নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লির প্রদাহকে কমিয়ে দেয় যা নাকের ভেতর এবং সাইনাস গহ্বরকে বন্ধ করে রাখে। আদার চা পানে সর্দি কাশি দ্রুত ভাল হয়।
গরম পানির ভাপ
নাক বন্ধ হয়ে গেলে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।এতে চমৎকার উপকার পাবেন।ইউক্যালিপটাস বা টি ট্রি অয়েলের কয়েক ফোঁটা বা দুটি একসাথে পানিতে মিশিয়ে গরম ভাপ নিতে পারেন। এতে আপনার নিলে বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করে। তাই নাক বন্ধ হয়ে গেলে গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।
ভিটামিন সি গ্রহন করা
সর্দি সাধারণত কোন ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। আর ভিটামিন সি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভিটামিন সি যুক্ত প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খেতে হবে। তাই বেশি করে লেবুপানি, কমলা, শাকসবজি, কাঁচা মরিচ এবং অন্যান্য ফল এবং শাকসবজি ভিটামিন সি যুক্ত ফল ও সবজি বেশি খাওয়া চেষ্টা করুন।
শেষ কথা
সর্দি বিরক্তিকর একটি সমস্যা তাই সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সতর্ক থাকতে হবে। সর্দি যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে ডাক্তার দেখাতে হবে। আশা করি আজকের ‘নাকের সর্দি দূর করার উপায়’ আর্টিক্যালটি ভাল লেগেছে। ভাল লাগলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ
Leave a Reply