পাতলা পায়খানা হলে করণীয়: শীত শেষে গরমের কাল আসার সাথে সাথেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সমস্যা পাতলা পায়খানা, ডায়রিয়া, আমাশয় কিংবা জ্বর সর্দি কাশি শুরু হয়। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা ও বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে থাকে।বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং দূষিত পানি পান করার ফলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। পাতলা পায়খানা হলে আমাদের করণীয় রয়েছে। এই সমস্যা দেখা দিলে আমরা পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম খুঁজে থাকি।কারণ এটা কখনো কখনো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পাতলা পায়খানা জনিত সমস্যার কারণে শরীর হতে প্রচুর পারিমাণে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায় এবং রোগী মারাত্মক পানি শূন্যতায় (Dehydration) ভোগে। এরপর সঠিকমাত্রায় পানি ও লবণের ঘাটতি পূরণ করা না হলে রোগী মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়তে পারে। এর মধ্যে বেশি যেই সমস্যা হয় তা হল কিডনী জনিত সমস্যা। তাই আজকের আর্টিক্যালে আমরা পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং পাতলা পায়খানার ঔষধের নাম জানবো। বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া কি?
পাতলা পায়খানা হল একদম পানির মত নরম পায়খানা হওয়া। আর ডায়রিয়া হল পানির মত বার বার পাতলা পায়খানা হওয়া। সাধারণত ১ দিনে বা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৩ বার অথবা তার বেশি বার পাতলা পায়খানা হলে তাকে ডায়রিয়া বলা হয় । তবে যদি তিনবারের কম হয় তাহলে ভয়ের কিছু নেই সেটা সাভাবিক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর এই পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়ে ৫ লক্ষের ও বেশি শিশু মারা যায়। প্রাপ্ত বয়স্কের তুলনায় বাচ্চাদের মৃত্যুর হার বেশি।গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ১৭০ কোটি শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণে শিশুরা পানি শুন্যতা ও মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগে। সারা বিশ্বেই এর প্রকোপ বেশি তাই আমাদের সর্বদায় সচেতন থাকতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আমাশয় রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা ও আমাশয় রোগের ঔষধের নাম
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার লক্ষণ
- হঠাৎ করে পায়খানার চাপ লাগা।
- পায়খানার চাপ লাগলে দ্রুত টয়লেটে যাওয়া বা অপেক্ষা করতে না পারা।
- পায়খানা অটোমেটিক বের হয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা।প্রায় সময় পোশাকে পায়খানা লেগে যেতে পারে।
- তলপেটে বার বার কাঁমড় দেওয়া বা তীব্র ব্যাথা অনুভব করা।
- বার বার ঢেকুর আসা।
- বমি-বমি ভাব থাকা কখনো বমি হওয়া। আবার অনেক সময় বমি-বমি ভাব নাও হতে পারে।
- শরীর অনেক দুর্বল হয়ে পড়া।
পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হওয়ার কারণ
পাতলা পায়খানা মারাত্মক সমস্যা। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে কযেকটি কারণ উল্লেখ করা হল :
- বিভিন্ন জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রামিত হলে ডায়রিয়া হয়।
- দূষিত বা ময়লা পানি পানের মাধ্যমে ডায়রিয়া হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর খাবার বা পঁচা-বাশি খাবার খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে।
- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করলে বা ব্যক্তিগত যেমন, জামা কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় না রাখলেও ডায়রিয়া হতে পারে।
- কোথাও ভ্রমণের সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হতে খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- আবার কখনো কোন খাবার অনিচ্ছা থাকা সত্বেও জোড় করে খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে।
পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে যতোটা লবণ ও পানি বেরিয়ে যাচ্ছে তা পূরণ করতে হবে। এজন্য রোগীকে প্রতিবার পাতলা পায়খানা হওয়ার পর খাবার স্যালাইনসহ তরল খাবার খাওয়াতে হতে।
যখনই পাতলা পায়খানা বা বমি হবে তখনই খাওয়ার স্যালাইন খাওয়াতে হবে যেন পানি শুন্যতা দেখা না দেয়।
রোগীকে স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবার এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও দাম সহ গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম
পাতলা পায়খানা প্রতিরোধে করণীয়
পাতলা পায়খানা প্রতিরোধরে জন্য নিম্নে উল্লেখিত নির্দেশাবলী মেনে চলতে হবেঃ
- সর্বদায় বিশুদ্ধ পানি পান করুন। দূষিত পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন।
- অধিক পরিমানে পানি পান করুন। রমজানে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন।
- অত্যধিক গরম বা রোদে কাজ করবেন না । যদি করার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পরপর ঠাণ্ডা পরিবেশে বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
- পায়খানা থেকে বের হয়ে এবং খাবার আগে ও পরে হ্যান্ড ওয়াশ/ সাবান দিয়ে হাত ভাল করে ধৌত করতে হবে।
- নিয়মিত নখ কাটা। নখে যেন ময়লা না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- সবসময় পরিষ্কার জামা কাপড় পরিধান করতে হবে এবং নিয়মিত গোসল করতে হবে।
- গরমে তৈলাক্ত ভাজাপোড়া ও পঁচাবাসি খাবার খাবেন না। এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ হতে খাবার গ্রহণ করা কিংবা অস্বাস্থ্যকর জায়গায় খাবার খাওয়া হতে বিরত থাকুন।
- নিরাপদ ও পরিস্কার পানি পান করুন।
- সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
- প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ না হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।
পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে
পানি: পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পাবার প্রথম উপায় হলো প্রচুর পানি পান করা। পাতলা পায়খানার কারণে আমাদের শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায় ফলে শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দেয় এবং শরীর খুবই দূর্বল হয়ে যায়। তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে।
দই: দইয়ের মধ্যে এক ধরনের ভালো ব্যাকটেরিয়া থাকে যা ডায়রিয়া রোধ করতে সহায়তা করে।এই সময়ে দই খেলে পেট ঠাণ্ডা থাকে।
কলা: পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া রোধ করতে কলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । কাচ কলা খেলে পাতলা পায়খানা শক্ত হয়। কলা খেলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি এবং পুষ্টি শূন্যতা পূরণ করে।
খিচুরি: ডায়রিয়া হলে বাহিরের ভাজা-পোড়া না খেয়ে ঘরেই তৈরি মুগ ডালের খিচুরি খেতে পারেন। এতে পেট ঠাণ্ডা হবে এবং শরীরে শক্তি যোগাবে।
আলু: আলু ভর্তা করে খেতে পারেন তাহলে ডায়রিয়া কমে যায়।
ফলের রস: পানির পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার কিংবা কমলা, ডাবের পানি, ডালিম কিংবা তরমুজের জুস খেতে পারেন। এইগুলো শরীরে পানির শূন্যতা পূরণ করবে।
পাতলা পায়খানা হলে যেসব খাবার খাবেন না
দুধ: ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় কোন খাবার খাবেন না। কারণ হল কখনো কখনো দুধ হজমে সমস্যা করে। দুগ্ধ জাতীয় খাবার পনির, দুধ, মাখন ইত্যাদি খাবার এই অবস্থায় খাবেন না। তবে দই খেতে পারেন।
চা বা কফি: পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে চা বা কফি খাবেন না কারণ এইগুলো আরো আপনার পেটের জ্বালা বা ব্যাথা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঝাল বা তৈলাক্ত খাবার: পাতলা পায়খানা হলে ভাজাপোড়া খাবার বা অতিরিক্ত ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন। কারণ ঝাল বা ভাজাপোড়া খাবার খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে ফলে পেটের সমস্যা আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে ।
আরো পড়ুনঃ কোমর বা মাজা ব্যাথার ট্যাবলেটের নাম
পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট এর নাম
Name →Company → Unit Price
- Metryl → Opsonin pharma →1.91 Taka
Amodis →Square → 1.55 Taka
Flagyl 400 →Sanofi →1.58 Taka
Metro 400 →Ziska Pharma →1.05 Taka
Flontin 500 →Renata →15 Taka
Aprocin 500→Aristophsrma →15 Taka
সতর্কতাঃ যে কোন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া উচিত নয়।কখনো হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ আপনার রোগ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ডাক্তার ঔষধ দিবে। কখনো কখনো একাধিক সমস্যা থাকার কারণে ঔষধ ভিন্ন হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া উচিত।alert-warning
পাতলা পায়খানার ঘরোয়া চিকিৎসা
কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলি ব্যবহার করে আপনি পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে পারেন । পাতলা পায়খানা দেখা দিলে আগে ঘরোয়া চিকিৎসা নিন যদি ভাল না হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।চলুন জেনে নেই ঘরো উপায় গুলো।
১.সরিষা বীজ
সরিষা বীজ পাতলা পায়খানা বন্ধ করার খুব ভাল একটি উপাদান। কেননা সরিষা বীজে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সহায়তা করে।
অল্প পরিমান পানিতে ১/৪ চা চামচ সরিষার বীজ মিশিয়ে সেটিকে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। ১ ঘন্টা পরে সেই পানি পান করুন। পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে দিনে দুই থেকে তিনবার করে এই পানি পান করুন।
২.লেবুর জল
লেবু পেটের যে কোন সমস্যার জন্য খুবই উপকারি। কারণ লেবুর রসে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা সহজে পেট পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। এটি অনেক আগে থেকেই পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে ব্যবহার করা হয়।
একটি লেবু থেকে সম্পূর্ণ রস বের করে এতে ১ চা-চামচ লবণ ও এক চামচ চিনি মিশিয়ে নিন । তারপর এই সরবত পান করুন যতক্ষণ না আপনার পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বন্ধ হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়।পায়খানা হওয়ার ঔষধের নাম
৩. ডালিম
ডালিম যদি ও একটি ফল কিন্তু এর মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান পাতলা পায়খানার সমস্যাকে দূর করে দিতে পারে।
পাতলা পায়খানার সময় দিনে অন্তত ২ টি ডালিম খেতে পারেন। চেষ্টা করবেন ডালিমের বীজ সহ খাওয়ার । না হয় ডালিমের বীজ মিক্সারে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে দিনে ২-৩ গ্লাস এই জুস খেতে পারেন। পাতলা পায়খানা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ডালিম বা ডালিমের জুস একটি ভাল ঘরোয়া উপায়।
৪.মেথি বা মেথি বীজ
মেথির মধ্যে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে এবং পাতলা পায়খানা বন্ধ করার জন্য একটি কার্যকরি ঘরোয়া প্রতিকার।
১/২ চা চামচ শুকনো মেথি বীজকে ভালভাবে গুঁড়ো করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে এই গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন। এতে আপনার পাতলা পায়খানার সমস্যা দূর হয়ে যাবে ।
৫. মধু
মধু যে কোন রোগের জন্য একটি প্রাকৃতিক ঔষধ যা স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময় করতে পারে এবং পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া বন্ধ করার জন্য মধু অত্যন্ত কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার ।
এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি নিন এবং এতে এক চা চামচ ফ্রেশ ও খাঁটি মধু ও এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়ো নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর সকালে খালি পেটে এই পানি পান করুন । পাতলা পায়খানার সমস্যা দূর করতে দিনে দুইবার পান করুন।
শেষ কথা
পাতলা পায়খানা বর্তমানে যদিও সাধারণ একটি সমস্যা কিন্তু কখনো কখনো এটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কারণ পাতলা পায়খানা হওয়ার কারণে শরীরে পানি শুন্যতা দেখা দেয় ফলে কখনো তা কিডনিতে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন ও পানি পান করতে হবে পাশাপাশি পাতলা পায়খানার ট্যাবলেট খেতে হবে। তাতে ও যদি না কমে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের সাদাস্রাব দূর করার ঘরোয়া ঔষধ
Leave a Reply