আমাদের দেশে বর্তমানে সব থেকে জনপ্রিয় সম্মানিত একটি পেশার নাম হচ্ছে বিসিএস ক্যাডার। যত গুলো চাকরির রয়েছে বাংলাদেশে এর মধ্যে সরকারি ও সবথেকে উচ্চ লেবেলের পদ হল বিসিএস। বিসিএস সম্পর্কে সবারই আগ্রহ রয়েছে।
বিসিএস কি? বিসিএস ক্যাডার কেন হবেন?
বিসিএস সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত অনেকেই জানিনা। বিসিএস কি? বিসিএস ক্যাডারের পদ সংখ্যা কয়টি? বিসিএস পরিক্ষা সহ সব কিছু বিস্তারিত আজকের এই আর্টিক্যালে জানতে পারবেন। বিসিএস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিক্যালটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন।
BCS -বিসিএস কি?
বিসিএস হল বাংলাদেশের যত পেশা তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় সম্মানিত একটা পেশা। আমাদের অনেকেরই স্বপ্ন থাকে যে পড়া লেখা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবো। আমাদের আলোচনা শুধু তাদের জন্য যারা ছোট থেকেই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কারণ, সবাই ক্যাডার হতে চায় না বা হওয়ার দরকারও নেই অথবা সুযোগও নেই।
BCS এর পূর্ণরূপ কি?
BCS এর পূর্নরূপ অনেকেই জানেনা।
BCS (বিসিএস) এর পূর্ণরূপ হল = Bangladesh Civil Service (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস)
বিসিএস ক্যাডারের সংখ্যা বা পদ কয়টি?
বিসিএস ক্যাডারের পদ সংখ্যা অনেক রয়েছে। যে কোন পদে ক্যাডার হতে পরবে। বর্তমানে আমাদের দেশে জেনারেল ও টেকনিক্যাল বা পেশাগত ক্যাডার মিলিয়ে মোট ২৭টি ক্যাডার পদ আছে।
জেনারেল ক্যাডারগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত যে কেউ বিসিএস পরিক্ষা দিয়ে এই ক্যাডারের চাকরি করতে পারবে।তবে টেকনিক্যাল ক্যাডার হল ভিন্ন, যে কেউ চাইলে এই পেশা গ্রহন করতে পারবে না। টেকনিক্যাল ও পেশাগত ক্যাডার হতে চাইলে নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হবে।
একটা কথা বলা খুবই প্রয়োজন, বিসিএস ক্যাডার পছন্দের ক্ষেত্রে আপনার যা ভালো লাগে আপনার মন যেটাকে বেশি প্রাধান্য দেয় আপনি সেটাই ঠিক করুন। কারণ, চাকরিটা আপনি করবেন। আপনার পছন্দেরও একটা দাম আছে।নিজের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরি করতে আপনার ভাল লাগবেনা। তাই এক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে।
যাই হোক প্রতিনিয়ত ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বিসিএস ক্যাডারের এই সংখ্যা ছিলো ৩০ টি। গত ২৮ বছরে ৩টি ক্যাডার অন্য ক্যাডারে বিলিন করে দেওয়া হয়, অথবা ক্যাডার বাতিল করা হয়।
বর্তমানে বিসিএস এর ২৭ টি ক্যাডার পদ রয়েছে সব গোলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. বিসিএস (প্রশাসন)
২. বিসিএস (পররাষ্ট্র)
৩. বিসিএস (পুলিশ)
৪. বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী)
৫. বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব)
৬. বিসিএস (ইকোনমিক)
৭. বিসিএস (কর)
৮. বিসিএস (বানিজ্য)
৯. বিসিএস (সমবায়)
১০. বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)
১১. বিসিএস (কৃষি)
১২. বিসিএস (আনসার)
১৩. বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)
১৪. বিসিএস (মৎস্য)
১৫. বিসিএস (খাদ্য)
১৬. বিসিএস (স্বাস্থ্য)
১৭. বিসিএস (বন)
১৮. বিসিএস (তথ্য)
১৯. বিসিএস (পশুপালন)
২০. বিসিএস (ডাক)
২১. বিসিএস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল)
২২. বিসিএস (গণপূর্ত)
২৩. বিসিএস (রেলপথ প্রকৌশল)
২৪. বিসিএস (রেলপথ ও বানিজ্যিক)
২৫. বিসিএস (পরিসংখ্যান)
২৬. বিসিএস (কারিগরি শিক্ষা)
২৭. বিসিএস (সড়ক ও জনপথ)
বিসিএস ক্যাডার কেন হবেন?
বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় পেশা হচ্ছে বিসিএস ক্যাডার। এর বিশেষ অনেক গুলো সুযোগ সুবিধা রয়েছে যা অন্য পেশায় নেই। তাই দিন দিন ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি শিক্ষিত মানুষের চাহিদা বেড়েই চলেছে । এর কয়েকটা কারণও আছে নিচে উল্লেখ করা হল। যথা—
ক) এই পেশায় মানুষের সেবা করা দেশ ও দশের সেবা করার সুযোগ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য পেশা থেকে বেশি।
খ) চাকরির সম্পূর্ণ নিরাপত্তা আছে। বিশেষ কিছু কারণ ছাড়া চাকরি হারানোর কোন ভয় নেই।
গ) উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। কেউ এই পেশায় থাকা অবস্থায় উচ্চশিক্ষার জন্য যে কোন দেশে যেতে পারবে এবং ৫ বছরের শিক্ষা ছুটি পর্যন্ত নেওয়া যায়।
ঘ) এই পেশায় বেতন নিয়ে কোন চিন্তা নেই। অন্যান্য পেশা থেকে এই পেশায় বেতন ও সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি । চাকরি শেষে রয়েছে বিশাল পেনশন।
ঙ) খুব সহজেই ৫ বছরের জন্য লিয়েন নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
চ) প্রশিক্ষণ বা দাপ্তরিক কাজে বিদেশ সফর করার সুযোগ আছে। যখন ইচ্ছা বিদেশে সফর করতে পারবে।
ছ) বর্তমান সমাজব্যবস্থায় সামাজিক মর্যাদাও আছে।সকলের কাছে সম্মানিত।
জ) রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে কোন সময় সরকারের সঙ্গে সরাসরি অংশ নেওয়ার সুযোগ আছে।
ঝ) গণ্যমান্য ও সকলের পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়।
এক কথায় বলতে গেলে বিসিএস ক্যাডারের পেশায় সব থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা থাকার কারনে সবাই এই পেশায় আসতে চায়।
বিসিএস পরিক্ষার প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি
“বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস” বা বিসিএস পরীক্ষার প্রক্রিয়া পদ্ধতি ৩ টি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়।
০১. প্রিলিমিনারি পরীক্ষা:
এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রাথমিক যোগ্যতা বাছাই পর্ব। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এমসিকিউ ধরনের হয়ে থাকে। প্রাথমিক প্রিলি পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হয়। ১০ টি বিষয়ের উপর নৈর্বক্তিক প্রশ্ন থাকে। সময় 2 ঘণ্টা।
০২. লিখিত পরীক্ষা:
এটি বিসিএস পরীক্ষার প্রধান বা মৌলিক অংশ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা কেবল লিখিত পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকে। লিখিত পরিক্ষা হয় মোট ৯ টি বিষয়ে ৯০০ নম্বরে হয়ে থাকে। বিসিএস নীতিমালা ২০১৪ অনুযায়ী লিখিত পরিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
০৩. মৌখিক পরীক্ষা:
এটি বিসিএস পরীক্ষার চুড়ান্ত ধাপ। মৌখিক পরিক্ষাকেই সাধারণত ইন্টারভিউ ভাইভা নামেই আমাদের নিকট বেশি পরিচিত । যারা প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তারাই মৌখিক পরীক্ষা বা চূড়ান্ত পরিক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকে ।
বিসিএস পরিক্ষার জন্য কয়টি বিষয় ও কত নম্বরের পরিক্ষা হবে?
বিসিএস ক্যাডারদের ২ টি ভাগ রয়েছে:
১. সাধারণ ক্যাডার
২.প্রফেশনাল ক্যাডার
#”বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা ২০১৪” অনুযায়ী প্রত্যেক ক্যাডারের জন্য ৯ টি বাধ্যতামূলক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
- বাংলা প্রথম = ১০০ নম্বর
- বাংলা দ্বিতীয় =১০০ নম্বর
- General English 1st part = ১০০ নম্বর
- General English 2nd part = ১০০ নম্বর
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথম পত্র = ১০০ নম্বর
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি দ্বিতীয় পত্র = ১০০ নম্বর
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি = ১০০ নম্বর
- গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা = ১০০ নম্বর
- সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি = ১০০ নম্বর
প্রফেশনাল ক্যাডার
- সাধারণ বাংলা = ১০০ নম্বর
- General English 1st part = ১০০ নম্বর
- General English 2nd part = ১০০ নম্বর
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি প্রথম = ১০০ নম্বর
- বাংলাদেশ বিষয়াবলি দ্বিতীয় পত্র= ১০০ নম্বর
- আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি = ১০০ নম্বর
- গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা = ১০০ নম্বর
- দুটি কাগজপত্র জন্য পোস্ট সম্পর্কিত বিষয় = ২০০ নম্বর
উভয় ক্যাডার
এক জন আবেদনকারী ইচ্ছা করলে উভয় ক্যাডারের পদে আবেদন করতে পারবে। উভয় ক্যাডারে আবেদন করলে নয়টি আবশ্যক বিষয় এবং দুইটি পদ সম্পর্কিত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।
বিসিএস পরিক্ষার যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতা : অনেকে একটা টেনশনে থাকেন যে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন কলেজে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস পরিক্ষা দিতে পারবে কিনা। আসলে বিসিএস পরিক্ষার জন্য কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই যে কোন স্বীকৃত কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে অনার্স অথবা মাস্টার্স ডিগ্রী অথবা তার সমমান ডিগ্রি থাকতে হবে, দুটির কোন একটিতে ও তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য নয়।
শারিরীক যোগ্যতা :মেডিকেল রিপোর্ট ভালো আসতে হবে। তবে পুলিশ ও আনসার এ উচ্চতার ব্যাপার থাকে অন্যগুলোতে থাকেনা।
শেষ কথা
আশা করি তোমরা বিসিএস সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পেয়েছো। তারপর ও তোমাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারো। ধন্যবাদ
Leave a Reply