মাজা ব্যথার ঔষধের নাম: মাজা ব্যাথা এমন একটি সমস্যা জীবনের কোন না কোন সময়ে মানুষ মাজা ব্যথায় ভুগেন। কেউ কেউ প্রায় সময়ই এই ব্যাথায় ভুগেন। অধিকাংশ মানুষের মাজা ব্যাথার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়না। ব্যাথার কারণে তারা কোন কাজ করতে পারেনা। কাজ করতে চাইলে অল্পতেই ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। মাজা ব্যাথার কারণে মানুষ তাদের কাজে উপস্থিত হতে পারে না।
মাজা ব্যাথা কমানোর ট্যাবলেট
কোমর ব্যাথার সমস্যা বেশি হলে সঠিক চিকিৎসা করালে ২ মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। আর ব্যাথা কম হলে ১ মাসের কম সময়ে ভালো হয়ে যায়। ঘরে বসে মাজা ব্যাথা ঔষধ খেয়ে ও ঘরোয়া উপায়ে ও সুস্থ হওয়া যায়। তাই অনেকেই মাজা ব্যাথার ঔষধের নাম জানতে চায়। আজকের আর্টিক্যালটি তাদের জন্য।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভুগেন। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা বা কম্পিউটারে বসে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা বা ভারি জিনিস বহন করার কারণে কখনো বা দীর্ঘক্ষণ ড্রাইবিং করার ফলে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই আজকের আর্টিক্যালে মাজা ব্যাথা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আরো পড়ুনঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট।
মাজা ব্যাথা কি?
কোমরের পেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, জোড়ার আবরণ, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মধ্যে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ব্যাথা। বুক, পেট ও তলপেটের মধ্যকার বিভিন্ন অঙ্গের, হারের সমস্যার জন্য কোমরে যে ব্যাথা হয়ে থাকে।
মাজা ব্যথার কারণ সমূহ :
১. যাঁরা অফিসে বা বাসা বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, মাজার ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে।
২. কখনো কখনো দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে এই ব্যাথা দেখা দেয়।
৩. বসার চেয়ারে ঠিকমতো না বসলে বা সামনে অথবা পেছনে ঝুঁকে বসলে বা চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে দীর্ঘক্ষণ এভাবে বসে থাকার ফল কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
৪. দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভিং করলে বা গাড়ি চালালে এই সমস্যা দেখা দেয়। আবার কখনো বেশি সামনে ঝুঁকে গাড়ি চালালে মাজা ব্যথা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
৫. যাঁরা দীর্ঘক্ষণ শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা মোবাইল টিপেন অথবা অন্য কোন কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাজা ব্যথা শুরু হয়।
৬.কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলার কারণে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যার ফলে মাজা ব্যাথা শুরু হয় ।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
- সব সময় হাটতে বসতে শুইতে এই ব্যথা অনুভূত হলে।
- কোন ভারী জিনিস তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীব্র ব্যথা হলে।
- কোমর থেকে শুরু করে নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের আঙুল পর্যন্ত সব জায়গায় ব্যথা ছড়িয়ে পড়লে ।
- পায়ে দুর্বলতা বা অবশ ভাব হলে, কখনো বা হাটটে কষ্ট হলে ।
- হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে কোমর ব্যথা বেশি অনুভূত হলে।
- প্রস্রাব বা পায়খানার সঠিক ভাবে না হলে বা নিয়ন্ত্রণ না থাকলে।
- শোয়ার সময়, শোয়া অবস্থায় বা শোয়া থেকে ওঠার সময় ব্যথা হলে।
- বসা থেকে দাড়ালে বা দাড়ানো থেকে বসার সময় ব্যাথা অনুভূত হলে।
কোমর ব্যথা থেকে দূরে থাকবেন যেভাবে
- একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না।
- জায়গা ছেড়ে মাঝে মাঝে উঠে পড়ুন এবং হাঁটুন।
- ফোনে কথা বলার সময় বসে কথা না বলে হেঁটে হেঁটে কথা বলুন।
- দিনে যতো বেশি হাঁটবেন, ততো শরীরের অবস্থা ভালো থাকবে।
- কোমর ভাঁজ করে হালকা শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করতে পারেন।
- মাটিতে বসে কখনো কাজ করবেন না। এবং নরম ম্যাট্রেস বা ফোমের বিছানায় কখনোই ঘুমাবেন না।
মাজা ব্যাথার ঔষধের নাম
মাজা ব্যাথা হলে সবাই ঔষধ খুঁজে। দেখা যায় হঠাৎ মাজা ব্যাথা বা কোমর ব্যাথা বেড়ে গেলে মাজা ব্যাথার ট্যাবলেট খেতে চায়। আজকে আপনাদের সাথে যে ঔষধ এর কথা বলবো তা একজন এমবিবিএস ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুয়ায়ী কোমর ব্যাথার ঔষধ যা খেয়ে একজন রোগী সুস্থ হয়েছেন। ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সহ বলবো। যদিও আরো অনেক ঔষধ ছিল কিন্তু আমি শুধু ব্যাথার ট্যাবলেট এর নামটা শেয়ার করছি।
আপনার যদি কোমরে ব্যাথা থাকে তাহলে আপনি দুইটি ঔষধ খেতে পারেন।
১। Naprosyn (500mg) প্রতি পিস – ১৫ টাকা
২। Seclo 40 (40mg) প্রতি পিস – ৯ টাকা
Naprosyn কোমর বা মাজা ব্যাথার জন্য খুবই কার্যকরি ঔষধ। সাথে আপনাকে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেতে হবে। যে কোন গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেলে হবে। আমি ডাক্তার যেটা দিছে সেটাই লিখলাম।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও দাম সহ গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম
কোমরোর ব্যাথা কমানোর ট্যাবলেট
মাজা ব্যাথা আর কোমরের ব্যাথা একই। তাই তার ঔষধ ও এক। কারোর কোমর ব্যাথা হলে এই ঔষধ গুলো খেলেই হবে। উপরে উল্লেখিত ঔষধ ছাড়া ও আরো কয়েকটি কোমর ব্যাথার ট্যাবলেটের নাম দেওয়া হল, সেই গুলো খেলে ও কাজ হবে।
ঔষধের নাম →কোম্পানি →প্রতি পিসের দাম
Naprox (500mg) →এসকেএফ →১১ টাকা
Napro (500mg) → এরিস্টোফার্মা → ৭ টাকা
Diproxen (500mg) →ড্রাগ → ৭ টাকা
Ecless (500mg) →ইনসেপ্টা → ৯ টাকা
Napro A (500mg) →একমি →৮ টাকা
Napryn ( 500mg) →হেল্থ কেয়ার →১১ টাকা
Nuprafen (500mg) →বেক্সিমকো→৭.৮৫ টাকা
Naspro (500mg) →পপুলার →৯ টাকা
Xenapro (500mg) →রেনেটা →৮ টাকা
Sonap ( 500mg) → স্কয়ার →৭ টাকা
উল্লেখ্য: এখানে সব গুলো ট্যাবলেটের পাওয়ার ৫০০ mg ধরে দাম উল্লেখ করা হয়েছে। ২৫০mg পাওয়ারের ও ট্যাবলেট রয়েছে তার দাম আরো কম রয়েছে।
সতর্কতাঃ যে কোন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া উচিত নয়।কখনো হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ আপনার রোগ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ডাক্তার ঔষধ দিবে। কখনো কখনো একাধিক সমস্যা থাকার কারণে ঔষধ ভিন্ন হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া উচিত।alert-warning
ঔষধ খাওয়ার নিয়মঃ
প্রতিদিন দুইটা করে ট্যাবলেট খাবেন সকালে আর রাতে খাওয়ার পর। এভাবে ২১ দিন খেয়ে যেতে পারেন।
কোমর ব্যথায় ঘরোয়া চিকিৎসা
মাজা ব্যাথা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় বলবো যা মেনে চললে আপনার ব্যাথা উপশম হবে এবং আরাম বোধ করবেন।
১। সেঁক দিন:
কোমর বা মাজা ব্যাথা দূর করতে প্রতিদিন সেঁক দিন। যে জায়গায় ব্যথা সেখানে গরম সেঁক দিলে ব্যাথা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
২। আদা:
কোমরের ব্যাথা দূর করতে প্রতিদুন নিয়ম করে আদা খেতে পারেন। আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে । এই পটাশিয়ামের অভাবের ফলে আমাদের নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। তাই প্রতিদিন নিয়ম মেনে আদা খেলে নার্ভের সমস্যা ও মাজার ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
৩। হলুদ:
মাজার ব্যাথা দূর করতে হলুদ খেতে পারেন। দুধের সাথে নিয়ম করে প্রতিদিন হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকাংশে কমে যেতে পারে।
৪। মেথি বীজ:
গুড়াঁ দুধ আর মেথি বীজ একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে যেই জায়গায় ব্যথা উক্ত জায়গায় ম্যাসাজ করলে অনেকটাই উপকার পাবেন।
৫। লেবুর শরবত:
লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি উপাদান রয়েছে । ভিটামিন সি যে কোন ব্যাথা বা যন্ত্রণা উপশমের জন্য খুবই কার্যকারী।
৬। অ্যালোভেরা:
মাজা বা কোমরের ব্যাথা দূর করতে অ্যালোভেরার শরবত খেতে পারেন। প্রতিদিন নিয়ম করে অ্যালোভেরা শরবত খেলে মাজা ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
৭। ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্য:
মাজা বা কোমরের ব্যাথার জন্য ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন, দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিন নিয়মিত খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
শেষ কথা
মাজা ব্যাথার ঔষধের নাম বা কোমরের ব্যাথা কমানোর ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। আশা করি সবাই উপকৃত হবেন। প্রাথমিক ভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করা উচিৎ। যদি না কমে তাহলে পাশাপাশি মাজা ব্যাথার ট্যাবলেট খেতে পারেন। ধন্যবাদ
Leave a Reply