হজম শক্তি বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। হজম শক্তি দুর্বল থাকলে খাবার খাওয়ার পরে ঠিক মত হজম হয়না। হজম প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে না হলে পেটে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। আবার এই হজম প্রক্রিয়া ঠিক ভাবে না হয় এর থেকে কখনো কখনো বড় ধরনের সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। তাই খাবার সঠিক ভাবে হজম হওয়া অতীব জরুরী একটা বিষয়। তাই আজকের এই আর্টিক্যালে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট।
আমাদের দেশে হজমের সমস্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। কেননা আমরা ভাজাপোড়া খাবার বা বাহিরের অপুষ্টিকর খাবার বেশি খেয়ে থাকি যার ফলে আমাদের হজমের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।তাই এই হজমের সমস্যা দূর করা খুবই প্রয়োজন। তাই খাবার সঠিকভাবে হজম হওয়ার জন্য আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
আর খাবার যদি সঠিকভাবে হজম না হয়, তাহলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা । হজম প্রক্রিয়া সঠিক ভাবে না হলে বিভিন্ন সমস্যা যেমন, ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্থূলতা, অপুষ্টিসহ আরো নানা সমস্যা দেখা দিতে পারো । তাই সুস্থ থাকতে হলে সঠিকভাবে খাবার হজম হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও দাম সহ গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম
হজমের সমস্যা কেন হয় বা খাবার হজম না হওয়ার কারণ কি?
খাবার হজম না হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু বদ অভ্যাস ও কিছু খাদ্যাভ্যাস আমাদের খাবার হজম হতে বাধা সৃষ্টি করে। যার ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার হজম না হওয়ার কারণ নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১/ পানি কম পান করা: খাবার হজম হওয়ার জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন হল পানি।আমরা দৈনন্দিন জীবনে পানি কম পান করলে খাবার হজম হতে সমস্যা হয়।যারা ফলে বদ-হজমের সৃষ্টি হয়।
২/ খুব দ্রুত খাবার গ্রহণ: আমরা অনেক খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করি যা একদমই উচিত নয়।কেননা দ্রুত খাবার গ্রহণ করার ফলে খাবারকে খুব ভালোভাবে চিবুতে পারেন না। ফলে খাবার অনেকটা আস্ত ও শক্ত অবস্থাতেই তার পাকস্থলীতে চলে যায়। যা পরবর্তীতে হজম হতে সমস্যা হয়।
৩/ খাওয়ার পর ভরপেটে ব্যায়াম: ব্যায়াম করা শরীরের জন্য খুব উপকারি সেটা সবাই জানি। কিন্তু সেটা যদি আমরা খাওয়ার পর ভরপেটে করি তাহলে পেটে থাকা খাবার বদ হজম সৃষ্টি করে।
৪/ মাত্রাধিক পরিমাণে ওষুধ খাওয়া: অতিরিক্তি ওষুধ গ্রহণ করা শরীরের উপর খুবই খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অতিমাত্রায় ওষুধ খেলে শরীরে থাকা এসিডের মাত্রার তারতম্য ঘটে । যা হজম ছাড়াও আরো বিভিন্ন সমস্যা তৈরী করে।
৫/ তৈলাক্ত ভাজা-পোড়া: খাবার হজম না হওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ হল তৈলাক্ত ভাজাপোড়া খাওয়া। আমরা সবাই ভাজাপোড়া খাবার খেতে পছন্দ করি। রাস্তার পাশে দোকানে ভাজাপোড়া খাবার যে অস্বাস্থ্যকর। কত ধুলাবালি পরে যা খেলে আমাদের হজম এর সমস্যা হয় এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকার কারনে যা গ্যাস্ট্রিকে রূপ নেয়।
৬/ ধূমপান: ধুমপান করা কতটা ক্ষতি তা তার প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে যে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, ধুমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ক্যান্সার হয়। এই ধুমপানের কারণে বদ-হজমের সৃষ্টি হতে পারে। যারা ধুমপান করে তবে স্বাভাবিক একজন মানুষের তুলনায় তাদের খাবার হজম হতে অনেক টাইম নেয় আবার হঠাৎ বদ হজম সৃষ্টি করে।
৭/ অতিরিক্ত মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপানে বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। কারণ, অতিরিক্ত মদ্যপান আপনার শরীর থেকে পানি সরিয়ে শরীরে কোষকে সংকুচিত করে তুলে। এতে করে পানি স্বল্পতার কারণে বদহজম সৃষ্টি করে।
উপরে উল্লেখিত খারাপ অভ্যাস ছাড়াও আরো বিভিন্ন বদ অভ্যাস রয়েছে যা আমাদের খাবার হজম হতে বাধা সৃষ্টি করে। তাই আপনার যদি এই বদ-হজমের সমস্যা থাকে তাহলে আগে এসব ক্ষতিকর অভ্যাস গুলো পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করুন।
আরো পড়ুনঃ ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায়
খাবার হজম না হওয়ার লক্ষণ বা হজম না হলে যেসব সমস্যা দেখা দেয়
খাবার হজম না হলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় নিচে কয়েকটি লক্ষণ উল্লেখ করা হলঃ
- পেটে ব্যথা হওয়া
- পেটে গ্যাস এবং ঢেঁকুর ওঠা
- পেটে অথবা তলপেটের ওপরে জ্বালা করা
- পেট ফেঁপে ওঠা
- বমি হওয়া বা না হওয়া স্বত্বেও গা গোলানো
- পেটে গজরানি বা গোঁ গোঁ শব্দ ও অস্বস্তি ভাব
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
- খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাওয়া
হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়
সুস্থ ও সাভাবিক জীবনের জন্য সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়াটা জরুরি। আর সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হলে হজম শক্তি ঠিক রাখা কিংবা বৃদ্ধি করা খুবই প্রয়োজন। হজম ঠিক মত না হলে পুরো দেহই যেনো দূর্বল হয়ে পরে। আর তাই দেহে হজম শক্তি বৃদ্ধি করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আমাদের কিছু বদ অভ্যাসের কারণে যেমন হজম শক্তি কমে যায় তেমনি কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে সেই হজম শক্তি কে বৃদ্ধি করা যায়। আসুন জেনে নেই হজম শক্তি বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায়।
★ খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। খাবার যত ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন , তাঁর পাচকরস নিঃসরণ তত ভালো ভাবে হবে। আর এসব পাচকরস খাবারকে সঠিকভাবে হজম করতে সাহায্য করে।
★ খাবার হজম করতে লেবু খুব উপকারী। তাই খাবার খাওয়ার সময় সাথে লেবু রাখতে পারেন। লেবু খুব সহজে খাবার গুলোকে হজম করতে সাহায্য করে। হজমের সমস্যা থাকলে চাইলে খাওয়ার পর লেবুপানি খেতে পারেন।
★ হজম শক্তি বাড়াতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। ক্যালসিয়াম আমাদের হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারি।
★ অনেকেই দুধ খেতে পারে না দুধ খেলে হজমের সমস্যা করো তাই দুধের বিকল্প হিসেবে দই খেতে পারেন। দই হজমশক্তি বৃদ্ধিতে খুব কার্যকর।দই আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম ও প্রোটনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি খাবার হজম হতে ও সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার উপায়।পায়খানা হওয়ার ঔষধের নাম
★ খাবারের হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য গ্রিন টি বা পুদিনাপাতার চা পান করতে পারেন। দিনে দুইবার এই চা পান করলে এতে বিদ্যামান অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট খাবার হজম করতে সহায়তা করে।
★ হজম শক্তি বাড়াতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার বেশি রাখতে পারেন। আঁশযুক্ত খাবার খুব সহজে পানি শোষণ করে, হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার শাকসবজি, ফল, সালাদ, চিয়া সিড, ইসবগুল খেতে পারেন। আবার যেসব শবজি বা ফলে পানির পরিমাণ বেশি রয়েছে, এমন ফল ও সবজি, যেমন তরমুজ, বাঙ্গি, শসা, টমেটো, লাউ ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় নিয়মিত রাখুন।
★ খাবার হজম হওয়ার জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পানি। পানি ছাড়া আমরা কোনো খাবারই সঠিকভাবে হজম করতে পারিনা । পানি পান করলে শরীরের কো ক্ষতি নেই। তাই দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। তবে খাওয়ার আগে এবং খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে পানি পান করুন । কিন্তু খাওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত পানি পান করবেন না এতে বদহজম হয়।
★ খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া উচিত। বিশেষ করে রাতের খাবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিৎ। গভীর রাতে খাবার খাবেন না এবং খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমানো যাবে না। ঘুমনোর ২ ঘণ্টা পূর্বে রাতের খাবার খাওয়া উচিত ।
★নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। নিয়মিত ব্যায়াম করলে খাবার সঠিকভাবে হজম হতে সহায়তা করে। চেষ্টা করুন সারা দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে। তা ছাড়া হাঁটাহাঁটি, জগিং ও সাইক্লিং করতে পারেন। তবে খাওয়ার পর ভরা পেটে ব্যায়াম করবেন না এতে উল্টো খাবার হজম হতে সমস্যা হয়।
★ দিনে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমনোর চেষ্টা করুন এবং ভোরবেলা আগে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
★ টেনশন ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্ট করুন। কেননা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হজম প্রক্রিয়া বেঘাত ঘটায়।
আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি এর অভাব হলে কিভাবে বুঝবেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট নাম
মাত্রতিরিক্ত হজমের সমস্যা দেখা দিলে প্রাকৃতিক উপায়ের পাশাপাশি হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট খেতে পারেন। অনেকেই হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট এর নাম জানতে চায় তাদের জন্য নিচে হজমশক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেটের দাম সহ নাম উল্লেখ করা হলঃ
ঔষধের নাম ( সিরাপ/ট্যাবলেট)→ কম্পানির নাম →দাম
Lysivin (Tablet) → Square → 120/-- Neuro-B (Tablet) → Square → 240/-
- Bicozin (Tablet) → Square → 90/-
- Megenox (Syrup) → Acme → 500/-
- Neural gin (Tablet) → Ibn-Sina → 5/-
- Neobion (Tablet) →Aristopharma →8/-
- Neucos-B (Tablet) → Radiant → 11/-
- TPC (Tablet) → Acme → 8/-
- Bost (Syrup) → General → 8/-
- B126 (Tablet) → Popular → 8/-
- Serobion (Syrup) → Leon → 5/-
- I-vita (Syrup) → Opsonin → 10/-
শেষ কথা
হজম শক্তি আমাদের সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজন। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান এবং হজম না হওয়ার কারণ সমূহ এড়িয়ে চলুন। হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেটের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন আশা করি সবাই উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ
Leave a Reply