পাইলস কি পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়ঃ পাইলস রোগটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। প্রাচীন কাল থেকেই এই রোগটার কথা শুনা যায়। বর্তমানে এখনো এই রোগে আক্রান্ত হয় অনেক মানুষ। রোগটার ভয়াবহতা মারাত্মক। কেননা এটা পায়ুপথের এমন জায়গায় হয় যা খুবই কষ্টকর।
তাই আজকে আমরা পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো
আজকের আর্টিক্যালে যা যা আলোচনা করবো। তা হলঃ
- পাইলস কি?
- পাইলস কেন হয়?
- পাইলস এর প্রকার।
- অভ্যন্তরীণ পাইলস।
- বাহ্যিক পাইলস।
- বাহ্যিক পাইলস হওয়ার কারণ।
- পাইলস হওয়ার লক্ষণ।
- পাইলস এর ছবি।
- কখন অপারেশন করা প্রয়োজন?
- পাইলস অপারেশনে খরচ কত হয়।
- পাইলস সারানোর উপায়।
- পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়।
- পাইলস হলে যেসব খাবার খাবেন না।
- পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা।
- পাইলস এর ঔষধ।
- পাইলস এর হোমিও ঔষধ এর নাম।
তো প্রিয় পাঠক চলুন আজকে পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
পাইলস কি (what is Hemorrhoid)
পাইলস একটি মারাত্মক ব্যাধি। আমরা জানি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় পাইলসকে হেমরোয়েডস বলা হয়। মলদ্বারের নিচের অংশে ভিতরে বা বাহিরে এক ধরনের রক্তের গুচ্ছ যা জমাট বেধে শক্ত হয়ে যায়। যা ফুলে আঙ্গুরের মতো বড় হয়ে যায় , ফলে মল ত্যাগ করার সময় বা মল ত্যাগ না করলেও সেখান থেকে প্রায়ই রক্তপাত হয়। এটিই হচ্ছে হেমরোয়েডস বা পাইলস।
আরো পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায় এবং দাম সহ এলার্জির ঔষধের নাম।
পাইলস কেন হয়
পাইলস হওয়ার জন্য বিভিন্ন কারণ হতে পারে তবে যেসব কারণকে ডাক্তাররা মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সেগুলো হলো-
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া ,
- স্থূলতা,
- বেশি সময় বসে থাকা,
- দীর্ঘসময় টয়লেটে বসে থাকা,
- হেমোরয়েড শিরায় কপাটিকার অনুপস্থিতি ও বার্ধক্য ,
- পুষ্টিকর খাবার কম খাওয়া , দৈনন্দিন ব্যায়াম না করা ,
- পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি ,
- জন্মগত,
- গর্ভাবস্থায় জরায়ু বড় হতে থাকে।
- কোলনের শিরায় অতিরিক্ত চাপ পড়ে বলে শিরা স্ফীত হয়।
এছাড়া ও বিভিন্ন কারণে পাইলস হতে পারে।
পাইলস এর প্রকার
সাধারণত আমরা জানি দু’রকমের পাইলস কথা, যথা-
- অভ্যন্তরীণ পাইলস
- বাহ্যিক পাইলস
অভ্যন্তরীণ পাইলস (internal hemorrhoids)
অভ্যন্তরীণ পাইলস মলদ্বারের ভেতরে হয়ে থাকে যার ফলে তা দেখা যায়না বুঝা যায়না । এগুলো সাধারনত অন্য গুলোর থেকে খুব কমই অস্বস্তির কারণ হয়ে থাকে । এবং অন্য গুলোর থেকে কষ্ট কম হয়।
বাহ্যিক পাইলস (external hemorrhoid)
সবথেকে কষ্টকর পাইলস হল বাহ্যিক পাইলস। রক্তের জমাট মলত্যাগের সময় বাহিরে চলে আসে আঙুল দিয়ে আবার ভিতরে ঢুকাতে হয়। অন্ত্রের নড়াচড়ার সময় ব্যথাহীন রক্তক্ষরণ ও মলদ্বার খুব ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া হয়।
বাহ্যিক পাইলস হওয়ার কারণ
অন্ত্রের গতিবিধি চলাচলের সময় যখন অত্যাধিক মাত্রায় চাপ পড়ে তখন সেই চাপের কারণে মলদ্বারের চারপাশের যে শিরাগুলি থাকে তা প্রসারিত হয়ে ফুলে যায়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়ারিয়া হওয়ার কারণে এই সমস্যা দেখা যায় । কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হলে ,
- মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেয়া,
- মিলনের সময় মলদ্বারের নিচে অত্যাধিক চাপ দেওয়া,
- অতিরিক্ত ওজন,
- কম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া,
- নিয়মিত ভারী বস্তু বহন করা, ইত্যাদি
এইসব কারণে বাহ্যিক পাইলস হওয়া বা পাইলস হলে আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। বাহ্যিক পাইলস মলদ্বার থেকে বেরিয়ে পড়ে এবং অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয় কারণ মলদ্বারের বাইরের অংশ খুব সংবেদনশীল এবং নরম হয়ে থাকে।
আরো পড়ুনঃ মুখের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করার ৮ টি ক্রিম ও তার ব্যবহার
পাইলস এর লক্ষণ (Symptoms of hemorrhoids)
পাইলস হলে সাধারণত যে যে লক্ষণ দেখে বোঝা যায় তা নিম্নরূপঃ
ক) পাইলস এর সব থেকে বড় ও প্রধান সমস্যা হচ্ছে মল বা পায়খানার সাথে রক্ত পড়া। এটা পাইলসের প্রধান লক্ষণ। এক্ষেত্রে যখনই দেখবেন হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই আপনার মলের সাথে রক্ত বের হচ্ছে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
খ) মলদ্ধারে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া। ফলে, বসতে, হাটতে অসুবিধা হওয়া।
গ) মলদ্বারের চারপাশের জায়গা ফুলে যায় ও চুলকানি দেখা দেয় ।
ঘ) পাইলস এ আক্রান্ত হলে মলদ্বারের রক্তনালীতে চাপ বৃদ্ধি পায় এবং রক্তনালী ফুলে যায় যার ফলে মল নির্গমনের সময় ব্যথা হয়।
পাইলস এর ছবি (Picture of hemorrhoid)
অনেকেই পাইলস এর ছবি দেখতে চায়। পাইলস দেখতে কেমন হয় তাদের জন্য নিচে পাইলসের ছবি দেওয়া হলঃ
কখন অপারেশন করা উচিৎ?
যদিও রোগ টা জটিল তাই অনেকেই মনে করেন পাইলস হলেই অস্ত্রোপচার করতে হবে। আর এ জন্য অনেকে ডাক্তার এর কাছে যেতে ভয় পান।আবার অনেক রোগী জানতে চান যে, অপারেশন ছাড়া এই সমস্যা ভাল হবে কিনা, অপারেশন করার পরে সেটি আবার হবে কিনা।আসলে বিষয়টি এমন নয়। আসলে অপারেশন ছাড়া ও এই রোগ থেকে নিরাময় লাভ করা যায়।
সাধারণ ফার্স্ট ডিগ্রি পাইলস যখন থাকে, মানে যখন রোগটা প্রাথমিক অবস্থায় থাকে এবং মারাত্মক আকার ধারণ না করে থাকে , তখন সাধারণত ডাক্তাররা সার্জারির জন্য পরামর্শ দেয় না। তখন ডাক্তাররা ওষুধ দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করে।
এই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মারাত্মক বিষয়ে হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য। কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে পাইলস সম্পর্ক রয়েছে অনেক । অ্যানাল ফিশারের জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য দায়ী এবং এর জন্য পাইলস দিন দিন বাড়তে থাকে।
তাই পাইলস হলেই অপারেশন করাতে হবেনা আগে ভালভাবে চিকিৎসা গ্রহন করুন। আর যদি অবস্থা মারাত্মক হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন, ডাক্তার যখন বলবে তখন অপারেশন করাবেন।
আরো পড়ুনঃ কিটো ডায়েট কি? কিটো ডায়েট কিভাবে করবেন। ডা জাহাঙ্গীর কবির কিটো ডায়েট চার্ট
পাইলসের অপারেশনে খরচ কত হয়
পাইলস এর অপারেশন করা যায় ২ ভাবে।
যথাঃ
- লংগু
- ডায়াথারমি পদ্ধতি।
এই দুটি পদ্ধতির মধ্যে একটি অনেক ব্যয়বহুল সেটা হল লংগু পদ্ধতি । এ পদ্ধতিতে অপারেশন করালে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে । অন্যদিকে আরেকটি হল ডায়াথারমি পদ্ধতি, এটা কম ব্যয় হয়। এটার অপারেশন এর জন্য ১০-১২ হাজার টাকার মতো খরচ হয় । বর্তমানে এই দুটি পদ্ধতিতেই সারা বিশ্বে ডাক্তাররা অপারেশন করে থাকে ।
বর্তমানে দুটি পদ্ধতিই আধুনিক ও মানসম্মত যার ফলে এ সকল আধুনিক পদ্ধতিতে রোগীকে এক দিনের বেশি হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়।
তবে যারা এসব আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে সক্ষম নয় তারা পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বন করে ইঞ্জেকশনের সাহায্যে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিয়ে থাকে।
পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তির উপায়
যদিও রোগটা মারাত্মক তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এবং সঠিক ট্রিটমেন্ট করলে কোনও অপারেশন ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই পাইলস থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।
নিয়মিত কিছু পদ্ধতি সঠিকভাবে মেনে চললে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে –
ক) পায়ুপথ সর্বদায় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
খ) উষ্ণ গরম পানিতে দিনে কয়েকবার উক্ত জায়গাটা ভিজিয়ে নিন।
গ) যদি বেশি ফুলে যায় ও ব্যাথা অনুভব হয় তাহলে তাতে বরফ দিতে পারেন। ফুলা কমে যাবে।
ঙ) চিকিৎসকের পরামর্শ মতো নিয়মিত ঔষধ ও মলম ব্যবহার করুন এবং পাইলস দূর করতে ঘরোয়া চিকিৎসা নিতে পারেন। তাহলে দ্রুত সেরে যাবে।
চ) যদি অবস্থা মারাত্মক হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
ছ) প্রতিদিন নিয়মিত প্রচুর আঁশযুক্ত সবজি,বিভিন্ন ফলমূল ও খাবার গ্রহণ করুন ।
জ) বেশি চর্বিযুক্ত খাবার, গোশত, কম আঁশ যুক্ত খাবার ও কড়া মশলা,ভাজাপোঁড়া খাবার, ফাস্টফুড ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
ঝ) প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৭ লিটার পানি পান করুন।
ঞ) কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য আলাদা চিকিৎসা করুন, মলত্যাগের সময় কখনো বেশি চাপ প্রয়োগ করবেন না,জোর করে মল ত্যাগ করবেন না এবং কখনো আটকে রাখবেন না।
ত) ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করুন । এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন কেননা নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে যায় । তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
পাইলস হলে যেসব খাবার খাবেন না
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে,খাদ্যাভ্যাস পাইলস এর উপর অনেক প্রভাব পরে। তাই এই রোগ দেখা দিলে নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। তাহলে সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে কিছু খাবার আছে যা খাওয়া যেতে পারে এবং কিছু খাবার আছে যা খেলে আরো মারাত্মক সমস্যা হতে পারে তাই তা পরিত্যাগ করতে হবে। নিম্নে বর্ননা করা হলঃ
১. স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পাইলসে আক্রান্ত হলে মসলাযুক্ত এবং অতিরিক্ত ঝাল যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার হজমশক্তি কে দুর্বল করে ফেলে যার জন্য পাইলসের ব্যথা বেড়ে যায়।
২. পাইলসে আক্রান্ত হলে কফি ও চা জাতীয় পানীয় খাবেন না। এসব খাবার পাইলসের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিবে। তবে সুস্থ থাকতে গ্রিন টি পান করতে পারেন।
৩. বেকারি খাবার অস্বাস্থ্যকর এবং অপরিশোধিত ময়দা ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। এগুলো সহজে হজম হতে চায়না । আর পাচনতন্ত্রের জন্য এই গুলো খুবই খারাপ প্রভাব পরে । কারণ বেকারিতে তৈরী খাবারে ফাইবার একেবারেই থাকে না, যা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে দেয়। যার জন্য পাইলস এর সমস্যা ও বেড়ে যায়।
৪. প্যাকেটজাত ও তেলেভাজা খাবার অনেকের পছন্দ যখনই বাহিরে যায় রাস্তার পাশে দোকান গুলোতে এইসব খাবার খেতে চাই। চিকিৎসকদের মতে, পাইলসে আক্রান্ত রোগীদের অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাওয়া একদমই উচিত নয়। এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ এবং হজম ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় ফলে পাইলসের সমস্যা বেড়ে যায়।
৫. বিশেষজ্ঞদের মতে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে ও রক্তক্ষরণ হলে মাংস খাওয়া যাবেনা । বিশেষ করে, রেডমিট খাবেন না।এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার ও এড়িয়ে চলতে হবে। এ ছাড়া দোকান থেকে কেনা মাংসজাতীয় যে কোন খাবার বা ফাস্টফুড এড়িয়ে চলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা কি? এবং কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা (hemorrhoids treatment)
পাইলস এর রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ডাক্তাররা যেভাবে করে তার নমুনা দেওয়া হলোঃ
কারোর পাইলস ধরা পড়লে ডাক্তাররা প্রাথমিক পর্যায়ে ২ধাপে চিকিৎসা করে থাকে । প্রথমত রোগীর জীবনযাপন বা চলাফেরা পরিবর্তন করা ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া।
এ জন্য প্রথমে রোগীর যা করতে হবে তা হল পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে , সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন এবং পাশাপাশি আরেকটা জিনিস খেতে পারেন তা হল ইসপগুলের ভুসি।
এর পর যখন রোগীর অবস্থা সেকেন্ড ডিগ্রিতে চলে আসে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তাররা ওষুধপত্র ও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকে । এরপরেও যদি রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয় তখনও কাটাছেঁড়া ছাড়া এই রোগের চিকিৎসা করতে থাকে। কেননা তখনও কাটাছেঁড়া ছাড়া ভাল হওয়ার সম্ভবনা থাকে ।
তারপর ডাক্তার একটা প্রসিডিউর করে, যেটাকে বলা হয় ব্যান্ডিং।যেটা দেখতে একটা রাবার ব্যান্ডের মতো, যেই রাবার টা রক্তনালির টিউমারের মুখে লাগিয়ে দেয়া হয়। তখন পাইলস অটোমেটিক্যালি আস্তে আস্তে শুকিয়ে ঝরে যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো কাটাছেঁড়া করতে হয় না সহজে ভাল হয়ে যায়।
তারপর যদি দেখা যায় যে, আগের চেয়েও বেড়ে গেছে , এবং সেটা থার্ড বা ফোর ডিগ্রির দিকে চলে আসে, তখন সার্জারি করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।তখন সার্জারি বা অপারেশন করতে হবে।
তবে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি মেশিনের সাহায্যে অপারেশন করা হয় তাই মলদ্বারের কাছে খুব বেশি কাটাছেঁড়ার করতে হয় না। অল্প সময়ে খুব দ্রুত সার্জারি করা যায় এবং অস্ত্রোপচারের এক থেকে দুদিনের মধ্যে রোগী সাভাবিক অবস্থায় ফিরতে থাকে তখন এক থেকে দুইদিনের মধ্যেই রোগী বাসায় চলে যেতে পারে।
পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা (home remedies for hemorrhoids)
পাইলস থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া পদ্ধতি অনেক কাজে আসে অনেক। কেননা বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলেন ঘরোয়া কিছু সহজ পদ্ধতিগুলিকে কাজে লাগিয়ে পাইলসের একাধিক লক্ষণকে নিমেষে নষ্ট করা যায়। এবং অনেক সময় সম্পূর্ণরূপে সুস্থ্য হয়ে যায়।
তাই আপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এ ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি বাড়িতে বসে চেষ্টা করুন, অনেক উপকার পাবেন আশা করি।
১. বরফ: পাইলস থেকে মুক্তি পেতে বরফ চমৎকার কাজ করে। পাইলসের ব্যাথা কমানোর পাশাপাশি রক্তপাত বন্ধ করতে বরফ দারুণ ভাবে কাজ করে।
ব্যবহারের নিয়মঃ একটা কাপড়ে কয়েকটি বরফের টুকরো নিন তারপর কাপড় দিয়ে পেছিয়ে ওইটা ক্ষতস্থানে কমপক্ষে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। প্রতিদিন কয়েকবার এমনটা করলেই দেখবেন পাইলসের সমস্যা রক্ত পড়া, ফুলে যাওয়া আস্তে আস্তে কমে যাবে।
২. অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ উপাদান। এটি পাইলসের যন্ত্রণা বা ব্যাথা কমাতে খুব ভাল কাজ করে।
ব্যবহারের নিয়মঃ যখন বেশি ব্যাথা অনুভব হয় তখন অল্প করে অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ক্ষত স্থানে ধিরে ধিরে লাগিয়ে রাখুন ।কিছুক্ষণ এভাবে রাখলেই দেখবেন জ্বালা আস্তে আস্তে কমে গেছে ।
৩. লেবুর রস: লেবুর রসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা ব্লাড ভেসেলের দেয়ালকে শক্ত করে এবং পাইলসের কষ্ট কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
ব্যবহারের নিয়মঃ প্রথমে একটা লেবু নিন এবং তার থেকে রস বের করে নিন । এরপর এতে তুলা চুবিয়ে পাইলসে আক্রান্ত স্থানে লাগান। তবে যখন লাগাবেন তখন একটু জ্বালা হতে পারে। তবে কিছুক্ষণ পরে দেখবেন যন্ত্রণা একেবারে কমে যাবে।
৪. বাদাম তেল: বাদাম পাইলস থেকে মুক্তি দিতে ভাল কাজ করে। একটা বাটিতে অল্প করে বাদাম তেল নিয়ে তা তুলায় লাগিয়ে পাইলসের ওপর লাগালে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
৫. অলিভ অয়েল: পাইলস এর ব্যাথা কমাতে অলিভ অয়েল খেতে পারেন। প্রতিদিন এক চামুচ করে অলিভ অয়েল খেলে চমৎকার উপকার পাওয়া যায় কেননা এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ব্লাড ভেসেলের ইলাসট্রিসিটি বাড়িয়ে দেয়। ফলে পাইলসের ব্যাথা এবং কষ্ট ধীরে ধীরে কমে যায় ।
৬. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: তাছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যেসব খাবারে ফাইবার বেশি থাকে যেমন, শস্য দানা, বাদাম, সবজু শাকসবজি, ব্রাউন রাইস ইত্যাদি খাবার বেশি করে খেতে হবে। কারণ পাইলস সারাতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার দারুণভাবে কাজ করে।
পাইলস এর ঔষধ
পাইলস এর ঔষধ ডাক্তাররা অবস্থা বুঝে প্রাথমিক কিছু ঔষধ দেয় এবং পাশাপাশি ঘরোয়া চিকিৎসার কথা বলে দেয়। তাতে যদি কোন উন্নতি না হয় তাহলে অপারেশন করাতে হয়। রিং অপারেশন ও লংগো অপারেশন ছাড়া অনেকেই পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এ চিকিৎসা বিভিন্ন ভাবে নেওয়া যায়। ঘরোয়া চিকিৎসা কিভাবে নিবেন তা উপরে বলা হয়েছে।
বর্তমানে পাইলস এর চিকিৎসার জন্য একটি স্প্রে বের হয়েছে নাম হল পাইলোস্প্রে।
পাইলোস্প্রে হল পাইলস এবং ফিশার জন্য একটি চমৎকার, টাচ-ফ্রি স্প্রে ট্রিটমেন্ট।পাইলোস্প্রে ব্যবহার করা খুবই সহজ, এবং এটি প্রয়োগে কোনও অস্বস্তি বা কষ্ট নেই। এটির মাধ্যমেও পাইলস থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
পাইলস এর হোমিও ঔষধ এর নাম
অনেকেই হোমিওপ্যাথিক ঔষধ পছন্দ করেন।
হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারগণ পাইলসের রোগীদের জন্য সকালে সালফুর এবং সন্ধ্যায় নাক্স ভোমিকা এই ঔষধ দুটি দিয়ে থাকেন আর এই দু’টিই বেশি প্রসিদ্ধ। সাধারণ ক্ষেত্রে ৩০ পাওয়ারের এই ঔষধ দুটি খেলে পাইলস সহজেই ভালো হয়ে যায় অন্য ঔষধের দরকার পড়ে না। এই দুটো ঔষধ মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ভাল করে। এবং কোষ্টকাঠিন্য সরানোর দ্বারা পাইলস থেকে চিরতরে মুক্তি দেয়।
শেষ কথা
পাইলস হলে ভয় পাবেন না আগে ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিন এবং ডাক্তার এর পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। খুব দ্রুত সুস্থ্য হয়ে যাবে।
পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিকোনত বলার চেষ্টা করেছি। এরপর ও যদি কোন প্রশ্ন থাকে কারোর তাহলে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ
Leave a Reply