পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়: পিরিয়ড মেয়েদের নিত্যদিনের সঙ্গী। পিরিয়ড মেয়েদের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে পিরিয়ড নারীদের গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে আর পিরিয়ড না হলে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু পিরিয়ডের সময় নারীদের নানান সমস্যায় ভোগতে হয়। এই যেমন, পেটব্যথা, কোমড়ব্যথা, হাত জ্বালা-পোড়া করা, বমি বমিভাবও মাথাব্যথা, পেটে অস্বস্তি সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

বেশির ভাগ নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় ব্যথা দেখা দেয়।ব্যাথা অনেকের কম আবার অনেকের মারাত্মক ব্যাথা দেখা দেয় যা অসহনীয়। যেহেতু এটা প্রতি মাসে সাভাবিক প্রক্রিয়া তাই ব্যাথা হলেই কোন ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ, যে কোন হালকা ব্যাথায় কোন ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয় এতে ঔষধের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই পিরিয়ডের সময় ব্যাথা অনুভব হলে কিছু ঘরোয়া প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়। পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ।

তাই আজকের এই আর্টিক্যালে নারীদের পিরিয়ডের ব্যাথা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কেন ব্যাথা হয়। পিরিয়ডের ব্যাথা কমানোর উপায় কি? পিরিয়ডের ব্যাথা কমানোর ঔষধ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

পিরিয়ড কি?

সাধারণত মেয়েদের প্রত্যেক এক মাস পরপর শরিরের বিশেষ  এক হরমোনের কারনে  মেয়েদের যে  জরায়ুতে পরিবর্তন  হয়ে থাকে এবং জরায়ু নিঃসৃত অংশ   দিয়ে তথা  রক্ত মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে বের  হয়ে আসে তাকেই  সাধারণ ভাষায় ঋতুচক্র বা মাসিক বলে থাকে, আবার কেউ কেউ এইটিকে পিরিয়ড ও বলে থাকে।

পিরিয়ড হওয়ার লক্ষণ?

১/  এই সময় মেয়েদের বেশি করে ক্ষুদা লাগবে।

২/ কখনো কখনো মন আর মেজাজ ভালো থাকবে না। সারা ক্ষণ মুখ ভারি হয়ে থাকবে।

৩/ দিনের অনেকটা সময় মাথাব্যথা বা হাত পায়ের বিশেষ অংশ গুলো ব্যথা থাকে।

৪/ এই সময় পানি বেশি পরিমান না খাওয়ায় কারনে  মুখের বিভিন্ন জায়গায় ব্রণ হয়ে থাকে।

৫/ সারা দিন পেটে ব্যথার কারনে দিনে বা রাতের বেলায়  পর্যাপ্ত সময়  ঘুম না হওয়া।

৬/ কখনো কখনো বমি বমি ভাব হওয়া।

৭/ হাচি বা কাশি দেওয়ার সময় তলপেটে ব্যথার অনুভব হওয়া।

মাসিকের সময় অস্বাভাবিক লক্ষণ: 

পরিমানের চেয়ে  অতিরিক্ত রক্তপাত  হওয়া। আবার পিরিয়ড সাধারণত ৬ দিনের বেশি থাকে না। কিন্তু যখন ৬-৯ দিনের বেশি সময় ধরে যদি
রক্তপাত হয়ে থাকে বা এক মাসে এক এর অধিকবার  পিরিয়ড বা মাসিক হওয়া।

পিরিয়ডের ব্যথা কেন হয়?

আসলে মেয়েদের  বাচ্চা  বা প্রজননের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িত হরমোনগুলোর মাত্রা যখন  একটি নিদিষ্ট সময়ে হঠাৎ করেই যখন কম যায়   তখন মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয়। আর এই সময় একটি মেয়ের শারিরীক পরিবর্তন হয়ে থাকে। মেয়েদের শরিরে  হরমোনগুলোর প্রভাবেই  তাদের জরায়ুর ভিতরের আস্তরনের অংশটি আস্তে আস্তে খসে তা  মাসিকের রক্তের সাথে বের হয়ে আসে। আর এই আস্তরণটি খসিয়ে তা ঠিকমতো বের করে দেওয়ার করে দেওয়ার কারনেই মেয়েদের  জরায়ুর  তার দেয়াল জোরালোভাবে সংকুচিত করে দেয়।

তাই এমন  হওয়ার জন্য  আমাদের জরায়ুর গায়ে লেগে  থাকা রক্তনালী গুলো সংকির্ন  হতে থাকে। তার ফলে  মেয়েদের শরিরে কিছুখনের জন্য  তাদের  জরায়ুতে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহ করা  বন্ধ থাকে।

সাধারণত  শরিরের অক্সিজেনের অভাবের কারনে জরায়ু ভিতর থেকে  রাসায়নিক পদার্থ বের  হয়। আর এর কারনেই  এইসব পদার্থের প্রভাবেই  পিরিয়ডের বা মাসিকের  ব্যথা হয়ে থাকে।
পিরিয়ড চলা কালিন একটা মেয়েকে প্রচুর পরিমাণের অসয্য ব্যথা সয্য করতে হয়।এই সময় অধিক বিশ্রামের প্রয়োজন হয়। এবং প্রচুর পরিমাণের পানি পান করতে হয়

যেসব রোগের কারণে পিরিয়ডের ব্যথা হয়

অনেক  রোগের কারণেই মেয়েদের পিরিয়ডের বা মাসিকের  ব্যথা হয়ে থাকে বা হতে পারে বলে মনে করা যায়।আর এই  কারণেই ধারণা করা হয় যে  মাসিকের ব্যথার মতো ঘটনা তুলনামূলক  ভাবে অনেক কম। আর তাই জেনে নেওয়া যাক যেসব রোগের কারণে  মেয়েদের পিরিয়ডের বা মাসিকের  ব্যথা হয়ে থাকে । চলুন যেনে নেওয়া যাক।

1. Endometriosis

এই রোগের কারনে মেয়েদের জরায়ুর বাইরে,  সাধারণত তাদের  ডিম্বনালীতে  বা জরায়ুর ভেতরের আবরনের  মতো অংশ  হয়ে থাকে।  আর তাই পিরিয়ড হওয়ার  সময়ে জরায়ুর বাইরে এইসব  আবরন সরে যায়। আর তাই এই সময় পেটে  ব্যথা অনুভব হতে  পারে।  আবার এই ব্যথার সাথে মাসিকের সময়  মাত্রারিক্ত  রক্ত বের  হতে শুরু করে।

2. Fibroid 

এটি জরায়ুর  পেশিতে বেড়ে ওঠা একটি  টিউমার।  যেটি জরায়ুর ভিতরে   সৃষ্টি  হয়ে থাকে।আর  এসব টিউমার অনেক সময় ক্যান্সারের  রূপ নিতে পারে না। এই রোগের কারণে অনেক সময় পেট ব্যথা হতে পারে আবার   রক্তক্ষরণের  মতো সমস্যা ও হয়ে থাকে।

3. Pelvic Inflammatory Disease

এই রোগেটি হলো  স্ত্রী-প্রজননতন্ত্রের। যা  মেয়েদের জরায়ু, ডিম্বনালী ও ডিম্বাশয়ে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে  ছড়ায়। এর  ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে  জ্বালাপোড়া হয়।

4. Adenomyosis  

এই রোগের কারনে  মাসিকের সময়ে  মেয়েদের জরায়ুর  পাশে বিভিন্ন ধরনের দেয়ালের সৃষ্টি করে যার কারনে রক্ত গুলো বের হয়ে আস্তে পারে না। আর তাই বেশি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এই রক্ত কোন ভাবেই বের হওয়ার কোনো  উপায়   পায় না  । যার কারনে রক্ত বের না হওয়াতে  পিরিয়ডের দিন গুলোতে পেটে ব্যথা হয় এবং তার সাথে রক্ত ও বের হতে  পারে।

সাধারণত ৩৫-৫০ বছর বয়সী মহিলাদের  মধ্যে এই রোগ  গুলোর জন্য  মাসিকের  ব্যথা  অনেক হয়ে থাকে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কারণে মাসিককালীন ব্যথা

ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস বা আইইউডি (IUD) হলো  একটি দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। যা একে কপার-টি নামে পরিচিত। এটি সাধারণত তৈরি হয়ে থাকে তামা ও প্লাস্টিকের মাধ্যমে। এর প্রধান উদ্দেশ্য  হলো জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধমে মেয়েদের জরায়ুতে প্রবেশ করানোর বিশেষ প্রক্রিয়া।

তা ছাড়া ও এর কিছু স্বাস্থ্য জনিত সমস্যা হতে পারে, যেমন,

১/ নিয়মিত মাসিক না হওয়া।
২/ মাসিকেত আগে বা এর  মধ্যবর্তী সময়ে বেশি  রক্তক্ষরণ হওয়া।
৩/ মাসিকের সময় যোনিপথ দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হওয়া।
৪/ সহবাসের সময়ে ব্যথা  অনুভব হওয়া
৫/ উঠা বা বসার সময় পেটে ব্যথা হওয়া ইত্যাদি 

পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়

সাধারণত  মসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা  অনেক হয়ে থাকে।  আর তাই এই এই ব্যথা  পেট  থেকে আস্তে আস্তে কোমরে আর  ঊরুতে ছড়িয়ে  পারে।

অনেক সময় দেখা যায় মাসিকের ব্যথা সয্য করার মতো হয়ে  উঠে  না। হাচি কাশি দেওয়ার সময় অনেক রক্তপাত হয়ে থাকে।অনেক সময় দেখা যায়, উঠলে আর বসতে মন চায় না। শুয়ে বা বসে থাকলে ভালো লাগে এই সময়।

কখনো কখনো  মাসিকের ব্যথা এক এক রকমের হতে পারে। কোনো কোনো মাসে একবারে  মাসিকের ব্যথা  একবারি  হয় না।আবার অনেক সময় এই মাসিকের ব্যথা  এমন ভাবে হয় মনে হয় পেট একবারে ছিড়ে যাবে।
কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, মাসিক না থাকলে ও এমন ব্যথা অনুভব হয়।

পিরিয়ডের ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হয়

অনেক সময় দেখা যায় যে, মাসিক শুরু হওয়া আগেই বুঝতে পারা যায় যে এটি  পিরিয়ডের ব্যথা। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে এক না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে  বা মানুষেরা বুঝতে পারে এটি মাসিক শুরু  হওয়ার ব্যথা।

সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা  ৪৭ থেকে ৭৩ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে এই ব্যথস অধিক  সময় নিয়ে  হতে পারে। সাধারণত মাসিকের প্রথম দিনেই ব্যথাটা অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং রক্তক্ষরণ বেশি হয়।

সাধারণত যাদের  প্রথমবার  পিরিয়ড  হয় তাদের ক্ষেত্রে এটি খুব যন্রা দায়েক হয় এবং  তাদের পিরিয়ডের শুরু হওয়ার আগেই   ব্যথা হতে থাকে।

অনেকর ধারনা  পিরিয়ডের ব্যথার বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। কিন্তু এর  পিছনে তেমন কোন  গভির রোগ থাকে না। তবে  নারীদের  আস্তে আস্তে যতো বয়স বাড়বে  ততোই  পিরিয়ডের ব্যথা  সময়ের সাথে সাথে কমে যাবে ।  অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তান হলে তখন হওয়ার পরেই অনেকেরি  মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা  একবারেই কমে যায়।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ঔষধের নাম

১/ আইবুপ্রোফেন
২/ অ্যাসপিরিন

আসলে আইবুপ্রোফেন  হলো মাসিক বা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে থাকে। আমারা বেশির ভাগ মানুষ জানি না যে আই ব্যথা আমাদের কেন হয়ে থাকে?
সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা প্রধানত হয়ে থাকে ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন’ নামের একটি কেমিক্যালের কারনে।
আর তাই  আইবুপ্রোফেন নামের এই  ঔষধটি সেবনের ফলে পিরিয়ডের ব্যথাকে থামিয়ে দেয় এবং এর কারনে  ব্যথা  অনেক অংশে কমে যায়।

আবার দেখা যায় যে, এই ঔষধটি খাওয়া পরে ১০–৩০ মিনিট পরেই  ব্যথা আস্তে আস্তে  কমে যায়।

আইবুপ্রোফেন ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট পিরিয়ডের সময় ২- থেকে ৩ টা  খেতে হবে। ৩ – ৫ ঘন্টা পর পর ঔষধটি খেতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যে,   ১২ বছরের  উপরে বা এর বেশি হলে কিন্তু  ঔষধটি খেতে পারবে।

আইবুপ্রোফেন ‘এনএসএআইডি’  গ্রুপের ঔষধ।  এই ঔষটি শুধু মাত্র ভরা পেটে খেতে হবে।খালি পেটে খেলে  পেটের  বা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা করতে পারে।ঘরে থাকা যে কোন খাবার খাওয়ার পরেই ঔষধটি খেতে পারবেন, যেমন দুধ খাওয়ার পরে ও খাওয়া যায়। তবে ঔষধ  বেশি দিন লাগিয়ে খাওয়ার কোন দরকার নেই। এতে সমস্যা হতে পারে।

আবার মাসিকের  ব্যথা কমাতে আইবুপ্রোফেন নামের ঔষধ এর চাইতে  প্যারাসিটামল  অনেক  বেশি কাজ করে। তবে এই   ঔষধ না খাওয়া থেকে   আমাদের  বিরত থাকতে হবে। কারন এর ফলে

১/  কোন নারীর যদি অ্যাজমা বা হাঁপানির রোগ থাকে তবে, তাদের না খাওয়াই ভালো।

২/  আবার যাদের পাকস্থলী, লিভার, কিডনির মতো বিভিন্ন ধরনের রোগ বা যাদের  হার্টের সমস্যা আছে।

৩/ অনেকেরই পেটে  সমস্যা থাকে বা যাদের আলসার অথবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তাদের।

উপরের  উল্লেখিত   সমস্যা যাদের আছে তাদের ক্ষেত্রে  যখন পিরিয়ডের ব্যথা হবে তখন  আইবুপ্রোফেন ঔষধের পরিবর্তে ‘এনএসএআইডি’ গ্রুপের অন্য  ঔষধ খেতে পারেন। ঔষটির নাম হলো অ্যাসপিরিন। এই ঔষটি  ভরা পেটে খেতে হবে । এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে  ১৫ বছরের নিচে যারা আছে  তাদের ক্ষেত্রে এটি সেবন না করাই  উচিত হবে।

এই সব ঔষধ খাওয়ার আগেই অবশ্যই গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ’ (ওমিপ্রাজল) খেতে হবে যা ডাক্তাররা  খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।।

প্যারাসিটামল

১২ বছর  বা এর  বেশি যাদের বয়স তারা ৫০০ – ১০০০ মিলিগ্রাম করে প্যারাসিটামল খেতে পারবে এতে কোন সমস্যা হবে নাম

আর যদি ৫০০ মিলিগ্রামের ট্যাবলেট হয় তবে, ৩-৪ ঘন্টা পরে ১ টি অথবা ২টি৷ খেতে পারবেন। তবে  মনে রাখতে হবে যে,২৪ ঘন্টায় ৫০০ মিলিগ্রামের ৭ টা ঔষধের বেশি খাওয়া যাবে না।

আমরা অনেকেই আছি ঔষধ কেনার  সময় ঔষধের  প্যাকেটের গায়ের  লেখা পরে নেই না।কিন্তু এটি   নেওয়ার আগে অবশ্যই  লেখা ভালো ভাবে পরে নিতে হবে। এতে  করে বয়স অনুযায়ী ডোজ মনে রাখতে পারবেন।

অনেক সময় দেখা যায় যে, ঔষধ খেলে ও পিরিয়ডের   ব্যথা কমে না।  আর তাই  তখনই  আইবুপ্রোফেন আর প্যারাসিটামল এই  দুটো ঔষধ  একসাথে খেতে পারেন।

আর যদি এসব ঔষধ খাওয়ার পরে ও কোন প্রকার কাজ না হয় ,  ব্যথা কোন ভাবেই না কমে তখন ডাক্তারের কাছে  গিয়ে আপনার সমস্যা কথা বলতে পারেন। তখন  তিনি ‘এনএসএআইডি’ গ্রুপের অন্য  যে কোনো ঔষধ, হরমোনাল ঔষধ কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়ার পরামর্শ দিতে  পারেন।  তবে এক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা বুঝে  সঠিক ঔষধ ও ডোজ দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর খাবার

আসলে   আমাদের মধ্যে এমন অনেক নারীদের পিরিয়ডের সময় পেটে  প্রচুর পরিমান ব্যথা হয়ে থাকে।এর ফলে যেমন কোন কাজ করতে মন চায় না আবার অন্য দিকে কোন কিছুতেই ভালো লাগে না।তবে আমরা অনেকেই ঔষধ  খেয়ে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে ফেলি। এটি কিছু সময়ের জন্য আরাম দায়ক হয় তবে বেশি পরিমাণ সেবনের ফলে অনেক সমস্যা হতে পারে।
তাই ঔষধ সেবন থেকে বিরত  হয়ে আমরা কিছু  ঘরোয়া প্রদ্ধতি  ব্যবহার করে এর সমাধান করতে পারি । এমন অনেক খাবার আছে যা খেলে আমাদেরকে  পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে  দিতে পারে। পিরিয়ডের সময়  যেসব খাবার  খেলে আমাদের পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে সেগুলো হলেো,

পিরিয়ডের সময় প্রচুর পরিমানের পানি পান করা

অন্যান্য সময়ের চাইতে পিরিয়ডের সময় আমাদের প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে।  এতে  করে পেটের ব্যথা অনেকঅনেকটা  কমে যায় এবং আরাম লাগে। তাছাড়া  অধিক  পানি পানের  কারণে পেটের  নানা রকমের গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে ।  আর তাই আমাদের খেতে হবে সেই সকল খাবারের মধ্যে বেশি পানি থাকে।

যেমন- পানিফল, আনারস, বাঙ্গি, তরমুজ, দেশি শসা, লেটুস পাতা , নাশপাতি ইত্যাদি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে পারেন।  তাছাড়া পাতলা  স্যুপ এবং   গরম পানি ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে থাকে।

কলা

কলা হলো খুব উপকারী একটি ফল। কলা সাধারণত প্রায় সব সময়  আমাদের হাতের কাছেই   পাওয়া যায়। কলাতে আছে ভিটামিন বি৬ এবং পটাসিয়াম।  আর এই দুই উপাদান  আমাদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা  ও  পেটের সমস্যা দূর করতে   সাহায্য করে।  আর তাই পিরিয়ডের সময়ে যদি  পেটে ব্যথা  হয় তাহলে একটি কলা খেতে পারেন।

ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার

সাধারণত পিরিয়ডের সময় ক্যালসিয়াম আছে এমন সব খাবার খেলে  পেটে ব্যথা কমে যায় বলে প্রমানিত। এই সময় মন খারাপ থাকে, শারিরীক ক্লান্তি লাগে। কিছু খেতে মন চায় না। কোন কাজে মন বসে না
বিভিন্ন ধরনের  সমস্যা থাকে।আর তাই  এই সময় ক্যালসিয়াম  জাতীয় খাবার খেলে মন সব কিছু ভালো থাকে।  আর তাই আমাদের প্রতিদিনের খাবারে   কলা আর ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ   এমন খাবার  আমাদের খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।

আর  ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার  হলো
যেমন পনির,  মাঠা, দই,  তফু, চিজ,  এবং সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি।

সবুজ শাক-সবজি

সবুজ শাক-সবজির উপকারিতা অনেক। আর তাই  পিরিয়ডের সময়  আমাদের শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায়। আর তাই  আমাদের শরীরের সেই ক্ষতি পূরণ করার জন্য  আমাদের প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে অবশ্যই  আয়রন  ও ক্যালসিয়াম  সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। তাই এইসময়  আমাদের প্রচুর  পরিমানের সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে । আর এই শাক- সবজিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি  আছে। যা আমাদের  মাসিকের সময় পেটে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

ওটস

ওটস হলো খুব উপকারী একটি খাবারের নাম। যাতে আছে  ফাইবার, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামে মতো পুষ্টি । দীর্ঘ সময় ওটস খেলে এটি  আমাদের পেট  ভরিয়ে রাখে।  ওটস খেলে আমাদের  হজম শক্তি  ভালো থাকে। আবার পিরিয়ডের সময় আমাদের পেটের ব্যথা কমতে সাহায্য করে। আর তাই এই সময় ওটস  চাইলে আপনারা খেতে পারেন।

লেবু

আমরা জানি লেবুতে আছে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন সি।  আর তাই লেবু হলো ভিটামিন এর অন্যতম উৎস। ভিটামিন  সি  হলো আমাদের  শরীরর থেকে  খাবার এর আয়রন শোষণ করে থাকে।  তাছাড়া প্রচুর ফাইবার আছে লেবুতে।এটি আবার  পেশীর খিঁচুনি প্রতিরোধ করতে এ সাহায্য করে থাকে।

পিরিয়ডের সময় ৫ টি খাবার এড়িয়ে চলবেন

পিরিয়ডের সময় এমন অনেক খাবার আছে যা খেলে পেটের  ব্যথা বেরে যেতে পারে।আর  তাই যেসব খাবার খেলে পেটের ব্যথা বেরে যায়, সেসকল খাবার আমাদের খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে । 

চলুন যেনে নেওয়া যাক কোন খাবার আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে হবে

চা ও কফি এড়িয়ে চলুন

চা এবং কফি আমাদের শরীরের জন্য  এমনিতে উপকারী। তবে অনেকের ক্ষেত্রে চা এবং কফি খাওয়ার পরে পিরিয়ডের  সময় এর ব্যথা বাড়তে পারে। তাই এই সময় যাদের চা এবং কফি খেলে ব্যথা হয় তাদের এটি এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে চাইলে এটি  একবারে বাদ না দিয়ে ও  দিনে অন্তত ১ বার খেতে পারেন। তবে এর বেশি যাতে না হয়। এই সময় সব ধরনের কোমল পানি খাওয়া বাদ দিতে হবে ।

ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন

আমাদের শরীরের জন্য খুবিই ক্ষতিকর খাবার হলো ফাস্টফুড।  এটি আমাদের শরীরের অপকার ছাড়া উপকার করে কম। তাই এই সময় এইসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো ।  এ ধরনের খাবার শরীরের অনেক ক্ষতি করে । যেমন, শরীরের  অস্বস্তি করে, আবার পেটে ব্যথা অনেক  বেরে যায়। তাই  ভাজা পুরা,  পিজ্জা, বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি জাতীয় খাবার  খাবার আমাদের এড়িয়ে চলাই ভালো।  এই খাবার গুলো না খেয়ে আমাদের উচিত   স্বাস্থ্যকর  সুষম খাবার খাওয়া। এতে শুধু পিরিয়ডের সময় নয় বরং সব সময় ভালো থাকতে পারবেন।

লবণ থেকে দূরে থাকুন

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যে খাবারের মধ্যে লবন নেয় না বললেই চলে তাই খাবারের তালিকার মধ্যে  থেকে লবণ বাদ দেওয়া একেবারেই যাবে না। তাছাড়া ও লবন ছাড়া খাবার একদমি ভালো লাগে না।আর তাই চেষ্টা করুন  পিরিয়ডের সময় লবণ একটু কম খাওয়া। খাবারের মধ্যে অল্প  লবণ নিয়ে খেতে হবে।  অতিরিক্ত  লবন শরীরের জন্য খাওয়া উপকারি না। 

পিরিয়ডের সময় লবন বেশি খেলে পেটের ব্যথা বেরে যেতে পারে।  তাই আমাদের উচিত খাবারের মধ্যে  অতিরিক্ত লবণ খাওয়া  বাদ দিতে হবে

দুধ পান থেকে বিরত থাকুন

দুধের মধ্যে আছে  উপকারিতা। তবে মাসিকের সময় দুধ খেলে পেটে ব্যথা ff পারে। তাই এই সময়  দুধ খাওয়া থেকে বিরতি থাকতে হবে।আর তাই  দুধ জাতীয় খাবার এই সময়   ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।তাই দুধ জাতীয় খাবার  এড়িয়ে চলাই ভালো।

চিনির অপকারিতা

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য  চিনি তেমন  উপকারী খাবার নয় এই কথা সবাই কম বেশি জানে। পিরিয়ডের সময় চিনি খেলে  আমাদের  পেটে ব্যথার সমস্যা হতে পারে। তাই  এই সময় চিনি না খাওয়াই ভালো। দেখা গেছে যে, এই সময়ে মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো আর উত্তম।-

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

অনেক সময় দেখা যায় যে, পিরিয়ডের  সময় এর ব্যথা বেশি অনুভব হয় না, আবার কোনো   সময় এর ব্যথা অতিরিক্ত অনুভব হয়। এর জন্য আমরা ঔষধের  পরিবর্তে ঘরে বসে কিছু নিয়ম অনুসরন করতে পারি।

ঘরে বসে যেসকল উপায়ের  মধ্যেমে আমরা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে পারি তা হলো___

১. সেঁক নিন

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সেক পদ্ধতি হলো খুবিই  উপকারি। প্রাচীন কাল থেকে এই পদ্ধতি চলে আসছে।   গবেষণায় প্রমাণিত যে,  সেঁক  পদ্ধতি হলো প্যারাসিটামলের চেয়ে বেশি উপকারী। আবার  আইবুপ্রোফেনের সমান  মতো কাজ করে থাকে।গরম সেক দিলে এর আরাম পাওয়া যায়, তেমনি ভাবে এর কোন ক্ষতিকর দিক ওহ নেই।
তাই পিরিয়ড হলো গরম সেক দিতে পারেন।

সেঁক  কিভাবে দিবেন:  ‘হট ওয়াটার   বতলে  গরম পানি নিয়ে সেটা  একটি  মোটা গামছা  বা তোয়ালে দিয়ে  তা ভালোভাবে মুড়িয়ে পেটের উপরে আর নিচে আস্তে আস্তে উঠা নামা করতে হবে।তবে মনে রাখতে হবে এই  ব্যাগ খুব সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। যেমন—

খুব বেশি গরম পানি ব্যাগে রাখতে যাবেন না, এক আঙুল পানিতে ডুবিয়ে রাখলে  যদি হাল্কা গরম হয় তবেই তা ব্যবহার করতে পারবেন।

বতলের মুখ ভালোভাবে আটকাতে হবে।

কিছুক্ষণ পর পর ব্যাগ এপাশ ওপাশ করে দিতে হবে।

‘হট ওয়াটার ব্যাগ’  ছাড়া ও যেকোনো ইলেকট্রিক হিটিং প্যাড’ দিয়ে ও সেকের কাজ করতে পারবেন।

২. আদা সেবন করুন

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে  আদা খুবিই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের প্রায়  পিরিয়ডের সময়  ব্যথা হয়ে থাকে,  তারা চাইলে পিরিয়ডের সময়  ব্যথা হলে আদা খেতে পারেন। আপনি চাইলে আদা কুচি  কুচি করে খেতে পারেন। আবার গরম পানির সাথে মিশিয়ে ও খেতে পারেন, এছাড়া চা তো আছেই। মাসিকের প্রথম  দিন থেকেই প্রতিদিন ২-৩ বার যেকোনো সময় আদা এভাবে কুচি করে খেতে পারেন।

৩. শ্বাসের ব্যায়াম করুন

শ্বাসের ব্যায়াম করা হলো পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর একটি মাধ্যম। আমরা  যেভাবে  এই  ব্যায়াম করতে পারি।

প্রথমে আমাদেরকে এক হাত বুকের ওপরে এবং অন্য  হাত আমাদের পেটের ওপরে রাখতে হবে। এর পর আমাদেরকে নাক দিয়ে বড় বড় করে নিশ্বাস নিতে হবে।এভাবে কিছুখন এই ব্যয়াম আস্তে আস্তে করতে হবে।এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস  ছাড়তে থাকুন যে, আমাদের সামনে একটা মোমবাতি আছে এবং সেটি আমরা নিভাবো। এভাবে আমরা এই ব্যয়ামটি করতে পারি।

৪. ব্যায়াম করুন

আসলে  ব্যায়াম  করলে যে শুধুমাত্র আমাদের পিরিয়ডের ব্যথা দূর হয় তা কিন্তু নয়। ব্যয়ামের কারনে আমাদের শরীরে ও ভালো থাকে।  তাই নিয়মিত ব্যয়াম করা উচিত। তবে পিরিয়ডের সময়   ব্যয়াম করলে পিরিয়ডের  ব্যথা অনেক খানি কমে যায়। তাই প্রতিদিন অন্তত সবারি উচিত ১ ঘন্টা ব্যয়াম করা। এতে শরীর ও ভালো থাকবে আর মন ও।তবে আপনি চাইলে যেকোনো ব্যয়াম করতে পারে।

অনেক সময় দেখা যায় যে, পিরিয়ডের সময় মন ভাল থাকে না।আর তাই মন ভাল না থাকলে কোন কিছু করতে ইচ্ছে ও করে না। আর তাই এই সময় ব্যায়াম  না করারি কথা। তবে আপনি চাইলে  হাটতে পারে।

৫. পেট ম্যাসাজ করুন

ম্যাসাজের মাধ্যমে ও ব্যথা দূর হয়। আপনি চাইলে পেটে হালকা   ম্যাসাজ  করতে পারেন।ম্যাসাজের মাধ্যমে আপনি কিছুটা হলোও আরাম পাবেন।পেটও এর আশেপাশে ম্যাসাজ করতে পারেন।

৬. রিল্যাক্স করুন

এই সময় যতটা পারুন  রিল্যাক্স  থাকুন। অযথা কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন না
মাথাকে ঠান্ডা রাখুন। নানা রকমের মজার বই পরুন।টিভি দেখুন। 

৭. কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন

পিরিয়ডের সময় চেষ্টা করবেন গরম পানি দিয়ে গোসল  করা। এতে আপনার শরীরে জীবানু দূর করবে। আবার পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। আপনাকে আরাম দিবে।

শেষ কথা

পিরিয়ড মেয়েদের একটা স্বাভাবিক বিষয়। প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর সব মেয়েদেরই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবো কখনো কখনো পিরিয়ড এর সময় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। পিরিয়ডের ব্যাথা দথার ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি সবাই উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *