কৃমি দূর করার উপায়: কৃমির সমস্যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। অনেকেই মনে করেন যে কৃমি শুধু ছোটদের ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করে। কিন্তু আসল কথা হলো কৃমি ছোট বড় সবারই হয়ে থাকে এবং সবার ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি করে। বড়রা ও কৃমির সমস্যায় ভোগেন কিন্তু তারা তেমন টের পায়না। পেট ব্যথা কিংবা যন্ত্রণা করলে তারা ভাবে যে হয়তো তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা হয়েছে। সবসময় তা সত্যি নয় হতে পারে তা কৃমির সমস্যার কারণে ও ।
কৃমি দূর করার উপায়। কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
তাই আজকের এই আর্টিক্যালে আমরা আলোচনা করবো বড়দের কৃমির সমস্যা নিয়ে। কৃমি হলে কিভাবে বুঝবেন? কৃমি দূর করার উপায় ও কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কৃমি কি?
কৃমি হল একধরনের ক্ষুদ্র পরজীবি। যারা মানব দেহে অন্ত্রে বসবাস করে থাকে। এই ক্ষুদ্র পরজীবি বা ব্যাকটেরিয়া মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। তারা মানব দেহে বাস করে এবং মানব দেহ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহন করে বেঁচে থাকে। এবং সেখানেই তাদের বংশ বিস্তার করে থাকে। ফলে আস্তে আস্তে মানব দেহের অন্ত্রে থেকে সমস্যা তৈরি করে।
ছোট বড় সকলের কৃমির সংক্রমণ হওয়া স্বাভাবিক বিষয়, তাই এটা নিয়ে এতো দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ সময় মত চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কৃমি কেন হয়
কৃমি হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। সাধারণত কৃমি হয় নোংরা পরিবেশে থাকলে এবং অনিরাপদ বা দূষিত পানি পান করলে, বেশির ভাগ সময় খালি পায়ে হাঁটলে এবং পায়খানা থেকে এসে ভালভাবে হাত পরিস্কার না করলে ইত্যাদি কারনেই কৃমির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।
অনেক সময় পায়খানা থেকে এসে ভাল করে হাত না ধৌত করলে নখের কোনায় মলমূত্রে থাকা কৃমির ডিম্ব থেকে কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। আবার খাবারের পানি যদি দূষিত হয় তাহলে তা নিয়মিত পান করার মাধ্যমেও কৃমির হতে হতে পারে।
আবার কখনো কখনো বাজার থেকে আনা শাকসবজি বা অন্যান্য তরু-তরকারী রান্নার সময় ভাল করে না ধুয়ে রান্না করলে তা থেকে ও কৃমি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কৃমির হওয়ার লক্ষণ
১. দুর্বলতা অনুভব হওয়া
২. তলপেটে ব্যথা করা
৩. ক্ষুধামন্দা লাগা
৪. শরীর ক্লান্ত লাগা
৫. কখনো কখনো কাশি হওয়া
৬. ডায়রিয়া ও বমি হওয়া
৭. শরীরের ওজন কমে যাওয়া
৮. পেটে গ্যাস বা পেট ফাঁপা।
কৃমির ঔষধের নাম
কৃমির জন্য সাধারণত Albendazole ঔষধ সব থেকে বেশি কার্যকর। নিচে কয়েকটি ট্যাবলেট এর নাম, কোম্পানি ও দাম দেওয়া হলঃ
- Albendazole→Albion → 4 Taka
Albazol DS →Centraln→4 Taka
Alphin DS →Beximco →4 Taka
Azole →Bio Pharma →4 Taka
Estazol →Ibn Sina →4 Taka
কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো
অনেকেই জানতে চান যে কৃমির ঔষধ কোনটা ভাল? সাধারণত সব ডাক্তাররাই Albendazole জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এজাতীয় ঔষধ বেশি কার্যকর। তাই এজাতীয় ঔষধই সব থেকে ভাল। এছাড়াও আছে মেবেনডাজল তা ও খেতে পারেন।
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
কৃমির ট্যাবলেট প্রতি তিন মাস পরপর পরিবারের সবাই একটি করে অ্যালবেনডাজল বড়ি সেবন করতে পারেন। এতে পরিবারের সবাই কৃমি থেকে মুক্ত থাকবে। কেননা অনেক সময় পরিবারের এক সদস্য হতে অন্যজনের সংক্রমন হতে পারে। তখন দেখা যায় একজন ঔষধ খেলে সেটা ভাল কাজ করেনা। তাই সবাই একসাথে খাওয়া উচিত।
আর মেবেনডাজল জাতীয় ঔষধ হলে পরপর তিন দিন খেতে হবে। এবং সাত দিন পর আরেকটা ডোজ খেতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এজাতীয় সিরাপ একই ভাবে খাওয়াতে হবে। দুই বছরের নিচে কোনো শিশুকে কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাওয়ান।
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে না পরে খেতে হয়
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার আগে ও খাওয়া যায় আবার পরে ও। তবে রাতে খাওয়ার ১০ মিনিট পর খেতে পারেন। চুষে ও খেতে পারেন আবার পানি দিয়ে গিলে ও খেতে পারেন। চুষে খাওয়া ভাল।
কৃমি দূর করার উপায়
কৃমি দূর করার জন্য শুধু ঔষধ নয় ঘরোয়া উপায়ে ও কৃমি দূর করা সম্ভব। তাই কৃমি হলে, কৃমি দূর করার ঘরোয়া ৫টি উপায় মেনে চললে দ্রুত কৃমি থেকে মুক্ত পাবেন। তো চলুন জেনে নেই কৃমি দূর করার ঘরোয়া ৫টি উপায়ঃ
১। মধু ও কাঁচা পেঁপে।
কৃমি দূর করার জন্য মধু ও কাঁচা পেঁপে খেতে পারেন। খাওয়ার নিয়ম হল এক গ্লাস হালকা গরম দুধের সঙ্গে এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ কাঁচা পেঁপের রস মিশিয়ে খালি পেটে খাবেন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে পারেন। এভাবে সপ্তাহখানেক খেলেই অনেক উপকার পেতে পারেন।
২। লবঙ্গ।
অন্ত্রে থাকা কৃমি ও প্যারাসাইট দূর করতে লবঙ্গ খেতে পারেন। এটা খুবই উপকারি।এজন্য এক কাপ পানিতে ৩-৪টি লবঙ্গ ফুটিয়ে নিন। তারপর সারাদিন অল্প অল্প করে ফুটানো পানি পান করুন। এতে কৃমির পাশাপাশি এর ডিমও দূর করে দিবে।
৩। কাঁচা হলুদ।
কৃমি তাড়াতে কাঁচা হলুদ খুবই উপকারি। কৃমি দূর করার জন্য খালি পেটে এক টুকরো কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা হলুদে থাকা জীবানুনাশক ও প্রদাহবিরোধী উপাদান কৃমি দূর করতে সাহায্য করে।
৪। নিমপাতা।
কৃমি দূর করার জন্য নিম পাতা বেশ উপকারী।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে আধা চা চামচ নিমপাতা বাটা মিশিয়ে পান করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে নিম পাতার মিশ্রণ খেলে কৃমির সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাবেন।
৫। কুমড়োর বীজ।
কৃমির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কুমড়োর বীজ খেতে পারেন। এতে বিদ্যমান উপাদান কৃমি ও প্যারাসাইট ধ্বংস করে এবং কৃমি থেকে মুক্ত পাবেন। এজন্য প্রথমে সমপরিমাণ নারকেল, দুধ ও পানি মিশিয়ে নিন। তারপর কিছু কুমড়ার বীজ ভেজে গুঁড়া করে নিন। তারপর এক চা চামচ কুমড়ার বীজ নারকেল দুধ ও পানির সাথে ভাল করে মিশিয়ে পান করুন।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে তা পান করুন। এভাবর সপ্তাহখানেক এই পানীয় খেলেই অন্ত্রের সব কৃমি থেকে মুক্তি পাবেন।
যেসব কাজ করলে কৃমি থেকে বেঁচে থাকা যায়
- শিশুদের এবং প্রত্যেকের কাপড় আলাদা আলাদা জায়গায় রাখুন। ধোয়ার সময় প্রয়োজনে পানিতে স্যাভলন ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত একবার গোসল করুন।
- জামা কাপড় ও আশে পাশে সবকিছু পরিস্কার পরচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
- সবসময় হেক্সিসল বা হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করুন।
- পায়খানা থেকে আসার পর ভাল করে সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন।
যে কাজগুলো থেকে বিরত থাকবেন
- যেখানে সেখানে ছোট বড়রা মল-মূত্র ত্যাগ করবেন না।
- যে কোন মরা বা অসুস্থ্য কোন পশুর মাংস খাবেন না।
- যখন তখন যে কোন কাজের পর মুখে হাত দিবেন না।
- খাবারের পাত্র খোলা রাখবেন না ।
- রাস্তার খোলা খাবার বা ভাজাপোড়া খাবার খাবেন না।
শেষ কথা
কৃমি একটি সাধারণ সমস্যা। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। প্রতি ৩ মাস পর পর পরিবারের সবাই একসাথে কৃমির ট্যাবলেট খাবেন। আশা করি সব কিছু মেনে চললে কৃমি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। ধন্যবাদ
Leave a Reply