ওজন বাড়বে কিভাবে: বিশ্ব জুড়ে কত মানুষ আমরা দেখি। কেউ মোটা কেউ চিকন।এদের মধ্যে অনেক মানুষ চায় চিকন হতে আবার কেউ বা চায় মোটা হতে।সবার মাঝে মোটা আর চিকন হবার একটা প্রবনতা আছে। তাই আজকে আপনাদের মাঝে মোটা হওয়ার বা ওজন বাড়ানোর কিছু টিপস শেয়ার করবো।
এই কথা শুনে খুব অবাক হচ্ছেন তাই না ? আপনি অবাক হলেও,এমন অনেকেই আছে তারা কিন্তু মোটেও অবাক হবেন না। ওজন বাড়ানোর কিছু টিপস গুলো অনেকের জন্য এক অন্য রকমের আনন্দ বয়ে নিয়ে আসতে পারে। অতিরিক্ত ওজন যেমন একটা সমস্যা, ঠিক অপরদিকে চিকন বা কম স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়াটা ও একটি সমস্যা।আমরা সবাই জানি একটা প্রবাদ আছে যে স্বাস্থ্যই সুখের মূল।
আসলে চিকন বা স্লিম হওয়া মানেই কিন্তু সুন্দর নয়, বরং সৌন্দর্য হচ্ছে আমাদের শরীরের যে গড়ন অনুযায়ী ওজনের অবস্থান করার মাঝেই । সঠিক ওজনের চাইতে যদি কারো ৪ থেকে ৯ কেজি থাকে কারো ওজন, তাহলে বুঝতে নিতে হবে সে রুগ্ন মানুষ বা চিকন । একজন রুগা মানুষ বা “আন্ডার ওয়েট” মানুষের চেহারা স্বাভাবিক ভাবেই নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে । যেমন তার চাপা ভাঙ্গা হয়ে থাকে, চোখের নিচে কোলে কালি মতো হয়ে পড়ে, কাজ করায় মন লাগে না অথবা নিজের কাছে খুব ক্লান্ত মনে করে থাকে এই সব সময়।
খুব বেশী রোগা মানুষের শরীর আসলে সঠিকভাবে গঠিত হয়না, তাছাড়া বয়সের সাথে সঠিক ভাবে দেহের গঠন বৃদ্ধি হয়না। যার ফলে এই মানুষ গুলো নানা রকমের মানুসিক রোগে ভুগে থাকেন তার সাথে ভোগেন ভীষণ হীনমন্যতায়ও। অনেক সময় দেখা যায় যে অনেক চেষ্টা করে করেও কিছুতেই শরিরের ওজন বাড়াতে পারে না ।
ওজন বাড়বে কিভাবে। ওজন বাড়ানোর সহজ উপায়
আবার অনেকে হয়তো খুব বেশি খাওয়া দাওয়া শুরু করে, কিন্তু তাতে লাভ হলেও বেশী কিছু হয় না। যার ফলে অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যহানি হতে দেখা দেয়।শুধু মাত্র মোটা হলেই তো আর হবে না, তার সাথে হতে হবে সুগঠিত শরীরের অধিকারী। কি তাই না? তাহলে কি করনীয় থাকে,বা কি করবেন? আপনি যদি দেহের ওজন বাড়িয়ে সুগঠিত শরীর পাবার সকল সম্ভব-অসম্ভব সবকিছু চেষ্টা করেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছেন তাহলে তাদের জন্য উপকারে আসবে এই ধরনের টিপস গুলো।কিন্তু তা নিয়ম করে মেনে চলতে চেষ্টা করতে হবে , এতে খুব তারাতাড়ি নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
ওজন বাড়ে না কেন?
অনেকেই আছেন ওজন বাড়ানোর জন্য নানান চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। দৈনিক দুধ ডিম মাছ মাংস খেয়ে যাচ্ছেন কিন্তু ওজন যেমন ছিল তেমনই আছে। এর কারণ ও খুঁজে পাচ্ছেন না। এইরকম হলে আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন। আগে বুঝতে হবে আপনার শরীরে কোন জিনিসের অভাব। শরীরে কোন ভিটামিন বা প্রোটিনের অভাব তা জেনে প্রতিদিনের খাবারে তা বাড়িয়ে দিয়ে ওজন বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্ট
অনেকেই ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্ট জানতে চান। তাদের জন্য নিচে একটি ডায়েট চার্টের ছবি দেওয়া হল। দৈনিক সেই অনুযায়ী চলতে পারেন বা খেতে পারেন তাহলে আশা করা যায় দ্রুত আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। দেখে নিন ওজন বৃদ্ধির ডায়েট চার্টঃ-
ওজন বৃদ্ধির ঔষধ
ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেকেই ঔষধ খেতে চান। অনেকেই মোটা হওয়ার ক্যাপসুল বা অনেকেই জানতে চায় কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে। যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে ভুলেও ওজন বাড়ানোর ঔষধ খাবেন না। বাজারে ওজন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ইত্যাদি পাওয়া যায়। কিন্তু এইসব ঔষধে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। যার ফলে আপনার শরীরে নানান সমস্যা দেখা দিবে।
প্রথম দিকে দেখা যাবে আপনার শরীর ফোলে গেছে তখন মনে হবে ওজন বেড়েছে আপনি মোটা হচ্ছেন। কিন্তু তা সাময়িক। ১-২ মাস পর দেখা যাবে আপনি আবার ঠিক আগের মত হয়ে গেছেন। এইজন্য ডাক্তাররা ঔষধ খেতে নিষেধ করেন।
ওজন বৃদ্ধির ব্যায়াম
ওজন বাড়ানোর আরেকটি চমৎকার উপায় হচ্ছে ব্যায়াম। কিছু ব্যায়াম রয়েছে তা করলে আপনার ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি আপনার শরীরের মাংসপেশি সচল রাখতে সাহায্য করে। ওজন বৃদ্ধির জন্য সব থেকে ভাল ও কার্যকরি ব্যায়াম হচ্ছে স্ট্রেংথ ট্রেনিং। এ ধরনের ব্যায়াম নিয়মিত করলে আপনার শরীরের মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করবে।
এই ধরনের ব্যায়ামের জন্য জিমে যেতে হবে না। বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। তবে যদি সঠিক পদ্ধতি না জেনে থাকেন তাহলে ইউটিউবে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন। যে ধরনের ব্যায়াম করবেন নিচে কয়েকটি নাম দেওয়া হলঃ-
- Pushup
- Pullup
- Plank
- Squat
ওজন বাড়াতে কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন?
অনেকের মনে প্রশ্ন ওজন বাড়াতে কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে? স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন বৃদ্ধির জন্য ওজন বাড়ানোর ডায়েটের পাশাপাশি অবশ্যই নিয়মিত ওজন বৃদ্ধির ব্যায়াম করা বাধ্যতামূলক। একজন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা প্রয়োজন। যারা নতুন আগে ব্যায়াম করার অভ্যাস একদমই নেই তারা প্রতিদিন অল্প অল্প করে ব্যায়াম করবেন। তবে শারীরিক সুস্থতা ও ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কখন ব্যায়াম করলে ওজন বাড়ে
ওজন বৃদ্ধির জন্য ডায়েটের পাশাপাশি ব্যায়াম করা ও অপরিহার্য। কখন ব্যায়াম করলে ওজন বাড়ে তা জানতে চান অনেকেই। দিনের যে কোন সময়ই ব্যায়াম করতে পারেন তবে সঠিক সময় হল সকাল। সকাল বেলা ব্যায়াম করলে এর কার্যকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
দ্রুত ওজন বাড়ানোর ১০ টি ঘরোয়া উপায়
( ১ ) বাদাম ও কিসমিস-
আপনারা কি জানেন দ্রত ওজন বাড়ানোর জন্য বাদাম আর কিসমিস কতটা উপকারি। রাতে ঘুমানোর আগে আধা কাপ কাঠ বাদাম ও আধা কাপ কিসমিস এক সাথে ভিজিয়ে রাখুন অল্প পরিমান পানিতে। এর পর সকালে সেগুলো ভালো ভাবে দেখবেন ফুলে উঠেছে, পরে তা খেয়ে নিবেন । তাই সকাল শুরু করুন বাদাম ও কিসমিসের সঙ্গে ।এছাড়া বাচ্চাদের জন্যও এটি খুব ভালো একটা খাবার।
(২) আম ও দুধ
প্রতিদিন ২ বার ১টি করে পাকা আম খেতে হবে।এইগুলো খাওয়া পর আপনাকে অবশ্যই গরম দুধ ১ গ্লাস পান করতে হবে। ১ থেকে দেড় মাস আপনি নিজেই এর ফলাফল দেখতে পারবেন।
(৩) আলু
আলুতে আছে প্রচুর পরিমানের কার্বোহাইড্রেট।তাহলে এখানে কোন সন্দেহ নেই। তাই মনে করা উচিৎ না যে প্রতিদিন আলু খেলে এটি শরিরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। আলু গুলো লম্বা করে কেটে তা ডুবো তেলে ভেজে খাবেন। সপ্তাহে ৩ বার করে খাবেন।
(৪) কলা এবং দুধ
কলাতে আছে অনেক ক্যালরি। এটি আপনাকে খুব অল্প সময় শরিরের শক্তি সরবারহ করতে সাহায্য করে। আপনারা দেখে থাকবেন টেনিস খেলোয়াররা তাদের খেলার মাঝে কলা খেয়ে থাকে। প্রতিদিন সকালে একটি করে কলা এবং তার সাথে এক গ্লাস গরম দুধের সাথে ২ টেবিল চামচ চিনি মিশিয়ে তা খাবে।
(৫) বিশ্রাম করা
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬- ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।এতে শরিরের ক্লান্তি দূর হয়।তখন শরীরর ও ভাল থাকে।
(৬) খাবারের পরিমাণ বাড়ানো
খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। তবে এর মানে এই নয় তারাতাড়ি করে একবারে অনেক গুলো করে খেয়ে ফেলা তা না । যদি আপনি কম খাবার খাওয়ার কারণে রোগা বা চিকন হয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে।খাবারের তালিকায় সুষম খাবার রাখতে হবে। আপনি স্বাভাবিকভাবে যা খেয়ে থাকেন, তার ৩ ভাগের ২ ভাগ পরিমাণ খাবার বাড়িয়ে খাবেন প্রতিদিন।
আবার আপনাকে বারবার খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে।
আমরা আসলে অনেকেই ভাবি বারবার খেলে ওজন হয়তো বাড়বে। এই কথাটা মোটেও সঠিক না। নিয়ম মেনে পেট ভরে খেতে হবে । পেট ভরে খাওয়ার ফলে মেটাবলিজম হার কমে যায়, ফলে খাবারের ক্যালোরির অনেক বাড়তি ওজন হয়ে শরীরে জমবে। অল্প করে বারবার খাওয়া ফলে মেটাবলিজম হার বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ওজন কমে।
(৭) ডুবো তেলে ভাজা খাবার
সবাই হয়তো জানেন না যে ডুবো তেলে ভাজা খাবারের থাকে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট।যা আমাদের দেহের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে ।
(৮) বসা ভাত
যে ভাতে মাড় ফেলা হয় না তাকে বসা ভাত বলে জানি আমরা। ভাতের মাড় ফেলে দিয়ে ভাতের মধ্যে থাকা স্টার্চের অনেক টাই চলে যায় ভাতের মাড়ের সাথে। ওজন বাড়াতে চাইলে ভাতের মাড় না ফেলে ভাত রান্না করাই ভালো। এতে উপকার হবে ওজন বাড়াতে। এছাড়া পোলাও চালের বসা ভাত মজা লাগে খেতে।
(৯) দুধ ও মধু-
রাতের ঘুমানোর আগে অবশ্যই অনেকটা পুষ্টিকর খাবার খেয়ে নিবেন । খিদে লাগলে পেট ভরে খেয়ে নেবেন। খাওয়ার সাথে সাথেই ঘুমানেন । এর ফলে খাবারের ক্যালোরিটা খরচ হওয়ার মতো সময় পাবে না, যা বাড়তি ওজন হিসাবে শরীরে জমবে । তাছাড়া প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস দুধের সাথে অনেকটা মধু মিশিয়ে তা পান করবেন।
আপনারা প্রতিদিনের খাবারের পাশাপাশি কিছু ক্যালোরি যুক্ত খাবার তালিকায় যোগ করতে হবে। মাথায় রাখতে হবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যদি কারও না থাকে এই খাবার গুলো খেতে পারবেন । যেমন- ঘি/ মাখন, ডিম, পনির, কোমল পানীয়, গরু-খাসির মাংস, আলু ভাজা, মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকলেট, ইত্যাদি।
(১০) প্রচুর শাক সবজি ও ফল
ওজন বাড়াতে কিন্তু সাহায্য করে ফল এবং শাক, সবজি। আমাদের হাতের কাছেই এমন অনেক ফল এবং শাক সবজি আছে যা কিনা উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত। যেমন- আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পাকা পেঁপে, ডাল, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, কাঁচা কলা ইত্যাদি।
ফল ও শাক সবজি খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে,ঠিক তেমনি ওজনও বাড়াতে সাহায্য করে । উপরের নিয়ম মেনে যদি এইসব করে ও আপনাদের দেহের ওজন বৃদ্ধি না হয় ,তবে আপনাদের অবশ্যই একজন ভালো ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে । শরিরের মধ্যে অসুখ থাকলে এর কারনে ও শরির রুগ্ন চিকন ও ভগ্ন স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারে।
শেষ কথা
ওজন বাড়ানো অসম্ভব নয়। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। আশা করি এই সকল সহজ টিপস গুলো নিয়ম মেনে চললে অতি দ্রুত দেহের ওজন বাড়াতে সক্ষম হবেন। প্রতিদিন ওজন বাড়ানোর ডায়েট মেনে চললে পাশাপাশি অন্যান্য টিপস গুলো মেনে চললে দ্রুত ওজন বাড়বে। ধন্যবাদ
Leave a Reply