পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা: পাথরকুচি পাতাকে আমরা একটি ভেষজ ঔষধি পাতা হিসবেই চিনি। ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে যত ধরনের উদ্ভিদ আমরা চিনি তার মধ্যে পাথরকুচি অন্যতম। আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ বা ঔষধি গাছ এর উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এর মধ্যে অশ্বগন্ধা, থানকুনি, সোনা পাতা, চিরতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজকে আমরা পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা 

সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে পাথরকুচি পাতা গাছকে আমরা সবাই চিনি।আগেরকার মানুষ যে কোন রোগ বালাই থেকে মুক্তি পেতে ভেষজ ঔষধ এর উপর নির্ভর করতো। যে কোন সমস্যা হলে ভেষজ ঔষধ এর মাধ্যমে তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতো। বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির কারণে মানুষ তার উপর নির্ভরশীল হলে ও কিছু মানুষ আছে তারা এখনো ভেষজ ঔষধের উপর নির্ভর করে। কারণ ভেষজ ঔষধে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয় থাকেনা। যার কারণে অনেক মানুষ এখনো ভেষজ উদ্ভিদ এর উপর নির্ভর করে।

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন নানান ধরণের ভেষজ উদ্ভিদ। যা আমরা অনেকেই চিনিনা। অথচ এইসব উদ্ভিদ আমাদের নানান ধরনের উপকারে আসে। সাধারণত মানুষ ঔষধি গাছ হিসেবেই জানে। আজকের আর্টিক্যালে আমরা এমনি একটা ভেষজ উদ্ভিদ নাম হলো পাথরকুচি পাতা। তো চলুন জেনে নেই পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে।

পাথরকুচি পাতা কি?

পাথরকুচি পাতা আমরা অনেকেই চিনিনা। এই ঔষধি গাছ আমাদের বাড়ির আশেপাশে প্রায়ই দেখা যায়। এই উদ্ভিদ গুলো এমন যে পাতা থেকে খুব সহজে চারা করা যায়। কোন ধরনের যত্নের প্রয়োজন হয়না। তাকে সবাই পাথরকুচি বলেই চিনে সবাই। পাঠকুচি একটি বিরুৎ প্রজাতির ভেষজ উদ্ভিদ।

পাথরকুচি এর বৈজ্ঞানিক নাম হল  Kalanchoe pinnata Pers . অনেকেই বাড়ির পাশেপাশে সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে এই গাছ লাগায়। কেউবা ঔষধ এর জন্য লাগিয়ে থাকে। কারণ, এই উদ্ভিদ শুধু সৌন্দর্যের বর্ধনের জন্যই নয় পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে দারুণ কাজ করে। 

পাথরকুচি উদ্ভিদ আকৃতিতে দুই থেকে প্রায় তিন ফুট উচ্চতায় বড় হয়। এর পাতার আকৃতি বেশ পুরো দেখা যায় এবং পাতায় একধরনের খাজে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। পাথরকুচি পাতা রোপণ করলে এর থেকে চারা জন্মায় এবং গাছ হয়।

পাথরকুচি গাছের ছবি

পাথরকুচি এটা একটি ঔষধি গাছ। এই গাছের উচ্চতা সাধারণত দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়ে থাকে । এই গাছের পাতা গুলো খাঁজ বিশিষ্ট যা দেখে সবাই চিনতে পারে। পাতা থেকেই এই গাছের জন্ম হয়। এই গাছ গুলো সাধারণত ঝোপ ঝাড়ে বা বাড়ির আঙ্গিনায় জঙ্গলে এইসব জায়গায় পাওয়া যায়। নিচে পাথরকুচি পাতার গাছের ছবি দেওয়া হলঃ-

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার ছবি

পাথরকুচি পাতা দেখতে মাংসল ও মসৃণ, আকৃতি অনেকটা ডিমের মতোই বলা যায় ।পাতার চারপাশে আছে ছোট ছোট গোল খাঁজ। এই খাঁজ থেকে নতুন নতুন চারার জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের বয়স হলে ওই গাছের খাঁজ থেকে চারা গজাতে দেখা যায়। পাথরকুচি পাতা মাটিতে ফেলে রাখলেই অনায়াসে চারার জন্ম হয়। নিচে পাতার চবি দেওয়া হলঃ

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা

পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অনেক। আমাদের শরিরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য পাথরকুচি পাতার উপকারিতা বেশ চমৎকার। নিচে পাথরকুচি পাতার উপকারিতা দেওয়া হলঃ 

ঠান্ডা প্রতিরোধে:

এই শিতে বেশিরভাগ মানুষেরই ঠান্ডা লেগে থাকে। ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করার জন্য পাথর কুচি পাতার নস খেতে পারেন। এতে দ্রুত ঠান্ডা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

কিডনির রোগ প্রতিরোধে:

কিডনির যে কোন সমস্যায় পাথরকুচি পাতা বেশ উপকারী। আপনি যদি কিডনির সমস্যায় ভোগেন তাহলে পাথরকুচি পাতা হতে পারে আপনার জন্য চমৎকার উপাদান। নিয়মিত পাথর কুচি পাতার রস খাবেন এতে কিডনির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ফোড়া প্রতিরোধে:

আপনার শরীরের কোথাও যদি ফোড়া হয়ে থাকে তাহলে আপনি ফোড়া ব্যথা নিরাময় করার জন্য পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। এবং পাশাপাশি তা বেটে ওই জায়গায় লাগাতে পারেন এতে দ্রুত উপশম হবে।

শরীরের জ্বালাপোড়া প্রতিরোধে:

আমাদের শরীর বিভিন্ন কারণে জ্বালাপোড়া দেখা যায়। জ্বালাপোড়া দূর করতে নানান ঔষধ খায় তাতে ও অনেক সময় কাজ হয়না। শরীরের নানান ধরনের জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খান। এতে শরীরের জ্বালাপোড়া কমে যাবে।

পিত্তথলির সমস্যায়:

পিত্তথলিতে সমস্যা দেখা দেয় প্রায় মানুষেরই। কখনো পাথর ও হয়ে যায়। আপনি যদি পিত্তথলির কোন সমস্যায় ভোগতে থাকেন তাহলে নিয়মিত পাথরকুচির পাতার রস খান এতে বেশ উপকার পাবেন। 

শরীরের কাটা অংশে ব্যথা প্রতিরোধে:

শরীরের কোন অংশে কেটে গেলে রক্ত বোর হলে তাতে পাথরকুচি পাতা বেটে দিতে পারেন বা রস দিতে পারেন। এতে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হবে এবং তাড়াতাড়ি ভাল হবে।

মৃগীর সমস্যা সমাধানে:

কারোর যদি মৃগীর সমস্যা থাকে এবং তাহলে রোগ উঠার সময় তার মুখে কয়েক ফোটা পাথরকুচি পাতার রস দিয়েদিন। তাহলে এই মৃগী রোগ উঠবে না। 

পাকস্থলির সমস্যা সমাধানে:

আমাদের শারিরীকভাবে সব থেকে বেশি সমস্যা দেখা দেয় আমাদের পাকস্থলীতে। আপনার যদি পাকস্থলীতে কোন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খান। তাহলে দ্রুত উপকার পাবেন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে:

আমাদের একটু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়।  কারোর বেড়ে যায় আবার কারোর কমে যায়। কখনো কখনো কারোর বাড়ে আর কমে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। এতে অনেকটা উপকার পাবেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:

যারা ডায়বেটিসে আক্রান্ত রয়েছে তারা নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে:

পাথরকুচি পাতা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বা ত্বকের কালো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়মিত পাথরকুচি পাতা বেটে আপনার ত্বকে ব্যবহার করলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন দাগ, ডার্ক সার্কেল,  মেছতা ইত্যাদি দূর হবে।  

অর্শ রোগ কিংবা পাইলস রোগ প্রতিরোধে:

অর্শ বা পাইলস রোগ খুবই মারাত্মক সমস্যা। যাদের হয় তারা বুঝে কতটা কষ্টকর। তাই আপনার যদি এই ধরনের সমস্যা থাকে তাহলে নিয়মিত পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। এতে আপনার সমস্যা দূর হবে।

শিশুদের শারীরিক সমস্যা সমাধানে:

ছোট শিশুরা জন্মের পর থেকেই নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভোগতে থাকে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি দেখা দেয় পেটের পীড়া। শিশুর পেটের পীড়ার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে পাথরকুচি পাতার রস শিশুকে খাওয়াতে পারেন।এতে শিশুর পেটের পীড়ার জন্য খুবই উপকার হবে।

পানিবাহিত রোগপ্রতিরোধে:

আমাদের দেশে প্রায় সময়ই পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়। শরীরের নানা ধরণের পানিবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে পাথরকুচি পাতা বেশ কার্যকরি। তাই যেকোনো ধরণের পানিবাহিত রোগ দেখা দিলে পাথরকুচি পাতার রস বেটে খেলে দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

খোঁস পাচড়া প্রতিরোধে:

আমাদের শরীরের নানান ধরনের খোঁস পাচড়া দেখা দেয়। কারোর এলার্জির সমস্যা কারোর ছোট ছোট ফুসকুড়ি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পাথরকুচি পাতার রস খেতে পারেন। বা বেটে শরীরে লাগাতে পারেন।

পাথরকুচি পাতার অপকারিতা

পাথরকুচি পাতা ভেষজ ঔষধ হিসেবে এর উপকারিতা অনেক। সব জিনিসেরই উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা থাকে।তেমনি পাথরকুচি পাতার ও উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু অপকারিতা রয়েছে । স্বাভাবিকভাবে খেলে কোন সমস্যা নেই তবে প্রয়োজনের  অতিরিক্ত খেলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।  তো চলুন জেনে নেই পাথরকুচি পাতার অপকারিতা গুলোঃ-

অতিরিক্ত পাথরকুচি পাতার রস খেলে —

  • মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 
  • পেটের নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
  • পিত্তথলির সমস্যা হতে পারে।
  • ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
  • কলেরা কিংবা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পাথরকুচি পাতা কিভাবে খাবেন?

পাথরকুচি পাতা সাধারণত মানুষ রস বানিয়ে খায়। প্রতিদিন সকালে কয়েক চামচ রস খেতে পারেন। আবার বাজারে পাথরকুচি পাতার ঔষধ ও পাওয়া যায় তা ও খেতে পারেন। কখনো কখনো শরীরের কোথাও আঘাত পেলে তাতে বেটে লাগাতে পারেন।

উপসংহারঃ 

পাথরকুচিপাতা ভেষজ ঔষধ হিসেবে খুবই পরিচিত।পাথরকুচি পাতার উপকারিতা অনেক। আমাদের শরিরের নানান ধরণের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আশা করি আজকের আর্টিক্যালটি সবার ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ


Comments

One response to “পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা”

  1. নামহীন Avatar
    নামহীন

    nice??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *