গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ:বিয়ের পর কোন মাসে যদি মাসিক মিস হয় তখনি আমাদের টেনশন বেড়ে যায়। এর কারণ দুটি। প্রথমত কেউ চায়না এখন বাচ্চা নিতে তাই সে গর্ভবতী হলো কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত থাকে। আবার আরেকটি হল যারা বাচ্চা নিতে চায় হঠাৎ পিরিয়ড মিস হওয়াতে একটু চিন্তিত হয়ে পরে যে, মিস কেন হল বাচ্চার জন্য নাকি অন্য কোন সমস্যা।
যারা প্রথমবার গর্ভবতী হয়, বেশিরভাগই প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণের পর এক-দুই মাস চলে যায় তাদের অনেকেই বুঝতে পারে না যে তারা গর্ভবতী হয়েছেন। হয়তো শারীরিক কিছু পরিবর্তন হলেও তারা জানেনা এটা প্রেগন্যান্সির জন্য এমন হয়েছে। এর কারণ হল তারা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ গুলো জানে না।
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ
যেসকল নারীরা তাদের মাসিকের সময়ের হিসেব রাখেন, তাদের মাসিক মিস হলে এই সন্দেহটি করে থাকেন। আবার অনেক মহিলারা নিজের মাসিকের নির্দিষ্ট সময়ের প্রতি কোন খেয়াল নেই এবং মনে রাখতে পারে না। এটা একদমই ঠিক না। কারণ সবসময় নিজেই নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। কখন কি ঘটছে না ঘটছে বা কি সমস্যা হচ্ছে তা সবসময় খেয়াল রাখতে হয়।
কোন মাসে যদি আপনার মাসিকের নিদিষ্ট সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু মাসিক হয়নি তবে যদি সেটা প্রেগন্যান্সির কারণে হয়ে থাকে তাহলে মাসিক মিস হওয়ার ১-২ সপ্তাহের মধ্যে শরীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন, তা হলে মাসিক মিস হওয়ার ১-২ সপ্তাহের মধ্যে যদি এই লক্ষণগুলো আপনার মধ্যে পরিলক্ষিত হয় এবং আপনি সেটা বুঝতে পারেন, তাহলে অবশ্যই একবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। কারণ এইসব বিষয়ে নিজের সবসময় সর্তক থাকতে হবে। তো চলুন জেনে নেই প্রেগন্যান্সি বা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সমূহ।
গর্ভবতী হওয়ার প্রাথমিক দশটি লক্ষণ
১। মাসিক না হওয়া
গর্ভবতী হওয়ার সবথেকে বড় লক্ষণ হল মাসিক না হওয়া। নির্দিষ্ট সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পরে ও আপনার মাসিক না হয়,তা হলে বাকি সব লক্ষণ দেখা না গেলেও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন।তবে যাদের মাসিক অনিয়মিত তারা মাসিক না হওয়াতেই টেস্ট না করে যদি পাশাপাশি বাকি লক্ষণগুলো ও দেখা দেয় তাহলে টেস্ট করিয়ে নিন।
আরো পড়ুনঃ মাসিক না হলে কি করবেন? দাম সহ জেনে নিন মাসিক হওয়ার ট্যাবলেট এর নাম ২০২২
২। ক্লান্তি বোধ হওয়া
গর্ববতী হলে মেয়েদের শরীর ভারি হয়ে যায়। তখন শরীর সবসময় ক্লান্তি বোধ হয় এবং ঝিমুনি ভাব আসে। ঘুমও বেশি পায়। গর্ভবতী হওয়ার শুরু থেকেই এই লক্ষণ দেখা যায়। অনেক ডাক্তারই মনে করেন প্রোজেস্টেরন হরমোনের কারণে এই ঘুম ঘুম ভাব হয়ে থাকে।
৩। বমি বমি ভাব বা মর্নিং সিকনেস হওয়া
বমি বমি ভাব এটা সকলের নিকট পরিচিত একটি লক্ষণ। সাধারণত কনসিভ করার পরে ২-৪ সপ্তাহ পর থেকেই বমি বমি ভাব দেখা দেয়।বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব হওয়া ও মাথা ধরার সমস্যা বেশি দেখা দেয় বলে একে মর্নিং সিকনেস ও বলা হয়। মর্নিং সিকনেস বা এইরকম অবস্থা শুধু সকালে নয়, দুপুর বা রাতে যে কোন সময়ে হতে পারে। বেবি কনসিভ করার সাধারণত ৪ সপ্তাহ পর থেকে মর্নিং সিকনেস শুরু হয় এর আগেও মাঝে মধ্যে হঠাৎ হতে পারে এবং সেটা ১৪-১৫ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে । কারও কারও ক্ষেত্রে এই সমস্যা আরো বেশি বা কম ও হতে পারে।
৪। পেট ফুলে যাওয়া ও পেটে গ্যাস হওয়া।
সাধারণ অবস্থাতেও অনেক মেয়ের পিরিয়ডের আগে দেখা যায় পেট ফেঁপে যায় পেটে গ্যাস হয়।মেয়েদের পিরিয়ডের সময় শরীরে হরমোনের কিছু তারতম্য ঘটে, যার ফলে এমনটা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে হঠাৎ হঠাৎ ঠিক একই অনুভূতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এসময় দেখা যায় পেট ফুলে আছে এবং পেটে খুব গ্যাস তৈরি হয় এবং তা আস্তে আস্তে বেরিয়ে যেতে ও থাকে।
আরো পড়ুনঃ গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও দাম সহ গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম
৫। স্তনে ফোলা ভাব ও স্পর্শকাতরতা
অনেক মেয়েদের দেখা যায় তাদের মাসিকের আগে স্তন ফুলে যায় বা স্পর্শকাতর হয়ে যায় হাতে স্পর্শ করলে ব্যাথা লাগে। ঠিক সেরকমই গর্ভধারণ করার পরে এইরকম অনুভূতি হতে পারে। স্তন ফোলা ফোলা লাগা হাত দিলে ব্যথা অনুভব হওয়া। এক কথায়,ঐ সময় স্তন অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। পুরো প্রেগন্যান্সির সময়টায় স্তনের আকারে পরিবর্তন দেখা যায়। অনেক সময় নিপলে চাপ লাগলে এক ধরনের তরল বেরিয়ে আসে।
৬। খাবারে অরুচি হওয়া
প্রেগন্যান্সির আরেকটি লক্ষণ হল খাবারে অরুচি ভাব। তখন দেখা যায় কোন খাবারই ইচ্ছা করে না খেতে। খাবার কেমন যেন গন্ধ লাগে। নিজের প্রিয় খাবার ও তখন খেতে ইচ্ছা করবে না। কোন কিছু খেতে একদমই ইচ্ছা করবেনা খাবারের রুচি চলে যায়। এর কারণ হল বাচ্চা কনসিভ হওয়ার পর শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটে যার ফলে খাবারে অরুচি হয়ে থাকে। গর্ভবতী হলে, মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায়। যার ফলে খাবারে অরুচি দেখা দেয়।
৭। বার বার প্রস্রাব হওয়া।
গর্ভবতী হওয়ার আরেকটি লক্ষণ হল প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে বার বার প্রস্রাব দেখা দেওয়া। এর কারণ হল প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে হরমোনের কারণে কিডনিতে রক্ত সঞ্চালনের হার আগের তুলনায় বেড়ে যায়।যার ফলে সাধারণ অবস্থার থেকে বেশি দ্রুত হারে মূত্রথলি ভরে যায় এবং বারবার প্রস্রাব দেখা দেয় । গর্ভধারণের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায় কারণ শিশু যত বড় হয়, জরায়ুর আকার ও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এবং মূত্রথলির ওপর চাপ পড়ে ফলে বার বার প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয় ।
আরো পড়ুনঃ ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়? ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায়
৮। মুড সুইংস হওয়া।
বেবি কনসিভ হওয়ার প্রথম দিকে অনেক বেশি মুড সুইং হয়। কখনো মেজাজ ভাল থাকে আবার কখনো খারাপ হয়ে যায়। এর কারণ হল হরমোনের পরিবর্তন। কখনো অনেক ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন।
৯। অল্প রক্তপাত বা স্পটিং দেখা দেওয়া।
প্রেগন্যান্সির প্রথম দিকে হাল্কা রক্তপাত বা স্পটিং দেখা যায়। অনেকেই এটা কে মাসিক ভেবে থাকেন। এটা কোন মাসিকের রক্ত নয় তাই মাসিক ভেবে ভুল করবেন না। এটা আসলে ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং বা রক্তপাত । জরায়ুতে ভ্রূণ ইমপ্ল্যান্টেশনের সময় এই রক্তপাত দেখা যায়। কনসিভ হওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ইমপ্ল্যান্টেশন হয়ে থাকে। স্পটিং হওয়ার পরে প্রেগন্যান্সি কিট এনে বাড়িতে একবার টেস্ট করে দেখতে পারেন।
১০। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
গর্ভধারণের পর একটানা ১৮ দিন বা তার থেকে বেশি সময় ধরে দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকতে পারে। এটা প্রেগন্যান্সির লক্ষণ। তাই শরীরের তাপমাত্রা অন্য সময়ের তুলনায় যদি বেশি মনে হয় তাহলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে দেখতে পারেন।
এই লক্ষণ ছাড়া ও আরো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেটা তখন যদি শরীর স্বাভাবিকের তুলনায় কোন রকম পরিবর্তন মনে হলে বা ওপরের লক্ষণগুলি দেখা দিলে প্রথমে বাড়িতে বসে প্রেগন্যান্সি কিটের মাধ্যমে টেস্ট করে দেখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের সাদাস্রাব দূর করার ঘরোয়া ঔষধ
তবে উপরের লক্ষণ দেখার পরেও যদি কিটে নেগেটিভ আসে তারপর ও একবার ডাক্তার দেখিয়ে তবেই প্রেগন্যান্সি সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত হয়ে নিন। তাই সবসময় কিটের উপর ভরসা করে থাক ঠিক না। কারণ আপনি যে প্রেগন্যান্ট সেটা বুঝার আগেই বাচ্চার গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তাই সবসময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা উচিত।
সহবাসের কতদিন পর গর্ভবতী হয়
সাধারণত সহবাসের পর ১০ দিন থেকে ২ সপ্তাহ লাগে গর্ভবতী হতে। সহবাসের পর নারী ও পুরুষের ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু মিলিত হয়ে নিষিক্ত ডিম্বাণু গঠনের জন্য প্রায় ৬ দিনের মত সময় লেগে যায় । এরপর নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর আস্তরণে সম্পূর্ণরুপে বসতে আরো ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। আবার কখনো আরেকটু বেশি সময় লাগে।অর্থাৎ গর্ভধারণ শুরু হয় ৬ দিন পর থেকে এবং গর্ভবতী হয় সহবাসের ১০-১৪ দিন পর।
সহবাসের কতদিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হয়
সাধারণত সহবাসের ২১ দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করালে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া যায়। তবে যদি এর আগেই গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ দেখা যায় তাহলে এর আগে ও টেস্ট করতে পারেন।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিভাবে করবেন
সাধারণত ঘরে বসে ২ ভাবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। একটি হল প্রেগন্যান্সি কিট এর মাধ্যমে। বাজারে কিট পাওয়া যায় তার মাধ্যমে প্রস্রাবের মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। আরেকটি হল ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট। বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে যারমাধ্যমে গর্ভবতী হয়েছে কিনা বোঝা যায়। এর মধ্যে একটি হল লবন দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট।
সামনের কোন আর্টিক্যালে কিট দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
শেষ কথা
প্রথমবার গর্ভবতী হওয়ার সময় মহিলারা বুঝতে পারে না। তাই উপরোক্ত লক্ষণ গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি মাসিক না হয় উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তাহলে কিট দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হয়ে নিন। আর লক্ষণ না বুঝতে পারলে যদি পিরিয়ডের তারিখ চলে যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে পিরিয়ড না হলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করাতে পারেন। এবং সর্বাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন এবং সুস্থ থাকুন।
Leave a Reply