অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ এখন চলছে গ্রীস্মকাল বা গরমের সময়। এই গরম আবহাওয়ার কারনে অল্প কাজ করলেই শরীর থেকে ঘাম ঝরে একটি স্বাভাবিক বিষয়। আর এই কারণে ঘাম হওয়া বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন মাথা ঘামায় না। আমাদের দেহে ঘামের সাথে শরীরের দূষিত পদার্থ ও বের হয়ে যায়। আবার ঘাম হলে শরীরের বাহিরে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। যার কারনে শরীরের তাপমাত্রা ও নেমে যায়। কখনো কখনো অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ হতে পারে। তাই সবসময় সাবধান থাকা উচিত।
অতিরিক্ত ঘামার কারণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ। গরম আর শীত বিদ্যমান। এদেশের মত উষ্ণ আবহাওয়া অতিরিক্ত শরীরে ঘামের সাথে সাথে আরো আছে শরীরে দুর্গন্ধ তৈরি হওয়া। যা একজন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে অনেক সময় মানুষের সামনে লজ্জায় ফেলতে পারে।
আসলে স্বাভাবিক মাত্রায় ঘাম আমাদের সবারই হয়ে থাকে। ঘাম আমাদের শরীরের অত্যাবশ্যকীয় একটি প্রক্রিয়া। বরং ঘাম না হওয়াও কখনো বড় ধরনের অসুস্থতার লক্ষণ হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ঘাম যেমন শারীরিক কিছু রোগের লক্ষণ হয়ে থাকে আবার না ঘামলেও শরীরে থাকতে পারে নানা রকমের অসুখ – বিশুখ । আবার যদি গরম ছাড়া কেউ যদি ঘামেন তাহলেও তা কিন্তু বড় কোন রোগের লক্ষণ।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার লক্ষণ
১/ ব্যায়াম করা ভাল শরীর ফিট থাকে কিন্তু অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে অথবা আমরা কোন কারনে নার্ভাস হয়ে গেলে কিংবা প্রচন্ড রোদে কাজ করলে বা হাটলে ও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
২/ অনেক সময় আমরা পরীক্ষার হলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকার ফলে শরীর অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
৩/ সাভাবিক এর চেয়ে যখন আমরা খাবারে অতিরিক্ত মশলাযুক্ত বা ঝাল দেই সেই খাবার খেলে ও ঘাম হতে পারে আবার তৈলাক্ত যুক্ত খাবার অতিরিক্ত খেলেও ঘাম হতে পারে।
৪/ যেসব খাবারে আয়োডিন থাকে সেই খাবার খেলে ও যেমন- ব্রোকোলি, পেঁয়াজ, এই সব খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে যা খেলেও শরিরে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে।
৫/ অনেক সময় শারীরিক দুর্বলতা কারনে ঘাম বেশি হয়।
৬/ আবার ঘার্মাক্ত শরীর এড়াতে পাউডার ব্যবহার করার কারণে ঘাম দূর করার পরিবর্তে অনেক সময় ঘাম আরও বাড়িয়ে দেয়। যা দেখতে অনেক বিশ্রী লাগে।
৭/ কখনো কখনো অতিরিক্ত ধূমপান করার ফলে তা ঘামের কারণ হতে পাতে।
আরো পড়ুন!
অতিরিক্ত ঘাম হলো করণীয় কী?
১/ সাধারণত ঘামের সাথে যেহেতু সোডিয়াম, পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট বেরিয়ে যাওয়া, শরীর অনেক দুর্বল ও অস্থির হয়ে যায়। তাই পানির সাথে লবণ ও লেবু মিশিয়ে শরবত খেলে তা ভালো হয়।
২/ বেশি গরমে দইয়ের ঘোল অথবা ডাবও খেতে পারেন।
৩/ অনেকেই কোল্ড ড্রিংকস পান করে থাকে। তাই কোল্ড ড্রিংকসের পরিবর্তে টাটকা ফলের রস খাওয়া ভালো।
৪/ হাইপার হাইড্রোসিস সাধারণত ভিটামিন বি-১২-এর অভাবে হয়ে থাকে। তাই বি-কমপ্লেক্স যুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ।
৫/ বেশি ঘাম হলে একবার রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া ভালো , যে থাইরয়েড হয়েছে কি-না।
কিছুক্ষণ গরমে থাকলে অথবা অনেক সময় ধরে শারীরিক পরিশ্রম করার ফলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম বের হওয়া তা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই শরীরের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় যদি অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়?
অতিরিক্ত ঘাম কেন হয়?
অনেক মানুষের আছে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়।যেমন বগলের নিচে, হাতের ও পায়ের তালুতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সমস্যা আজ কাল অনেকেরই দেখা যায় । আসলে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ % মানুষের শরীরে অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হয়ে থাকে।
যাকে ইংরেজিতে ‘হাইপারহাইড্রোসিস‘ বলে।
তাই আমরা এখন জানবো যেসব কারনে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম দেখা যায়
আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারন, যেমন যেকোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কারনে,আবার শরীরে উপস্থিত যেকোনো রোগের কারণে ও হতে পারে তাছাড়া কোনো কারণ ছাড়াও এই ঘামের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
মানুষের শরীরের যে কোনো জায়গায় অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এছাড়া ও শরীরের নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হতে পারে এ বিষয়টি পরিলক্ষিত।
ঘাম সাধারণত মানুষের বগলের নিচে, হাতের ও পায়ের তালুতে, ঠোটের উপরে, কপালে, নাকের উপরে,গলায়, ঠোঁটের নিচে, এবং ঘাড়ে ও অতিরিক্ত ঘাম হতে দেখা যায়।
তবে ঠিক কী কারণেই শরীরের নির্দিষ্ট কোন জায়গায় অতিরিক্ত ঘাম হয়, এ বিষয়টি এখনও ভালো ভাবে নিশ্চিত করে আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
তবে বিজ্ঞানীরা ধারণা করে থাকেন এটি হাইপারথ্যালামাসের ত্রুটির কারণে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়ে থাকে। হাইপারথ্যালামাস মস্তিষ্কের ঐ অংশ যেটি শরীরে ঘাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
অতিরিক্ত ঘামের কারনে যেসব সমস্যা দেখা দেয়
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে , ” ঘামের সমস্যার সব থেকে ক্ষতিকর দিক হল হাতের তালু ঘামা।”
অনেক মানুষ আছে যাদের হাত ঘামার কারনে অন্য মানুষের সাথে করমর্দন করতে অস্বস্তি বোধ করে । কারণ করমর্দনের পর যখন ব্যক্তি তার হাত মোছেন, সেটি অপমানজনক।
এছাড়াও এমন কিছু বিষয় আছে যার জন্য অনেক সময় লজ্জায় ও পড়তে হয় যেমন, অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ায় কাপড় ভিজে যায় ও বগলের নিচে ভিজে যায়,যা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় সময় তখন মানুষের সামনে যেতে ও লজ্জা হয়।
প্রায় অনেক মানুষ আছে যাদের বগলের নিচে, হাতের ও পায়ের তালুতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার মতো সমস্যা হয়ে থাকে ।
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ
হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘামা এটা ভাল লক্ষণ নয়। কেননা অতিরিক্ত ঘামা বিভিন্ন রোগের কারণ লক্ষণ হতে পারে। এরমধ্যে কয়েকটি রোগের লক্ষণ নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১। জ্বর হলে ও জ্বর ছাড়ার সময় দেহ তাপমাত্রা কমে যায় শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় ও প্রচুর ঘাম হতে পারে।
২। কোন বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করলে বা উদ্বেগ এর কারণে ঘামতে পারে।
৩। থাইরয়েড হরমোনের বেশি হলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
৪। ডায়াবেটিস রুগীদের রক্তের শর্করা কমে গেলে হঠাৎ ঘামতে থাকে।
৫। হঠাৎ বুকে ব্যথা ও ঘামতে থাকলে সতর্ক হতে হবে কারণ এটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ।
৬। কিছু ক্যানসার রয়েছে, যেমন লসিকা গ্রন্থির ক্যানসারে প্রচুর ঘাম হয়ে থেকে। এই ঘাম রাতের বেলায় বেশি হয়।
৭। যক্ষ্মা রোগীরও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
৮। মেনোপজের পর নারীদের হঠাৎ অতিরিক্ত গরম লাগা শুরু হয় ভাঁপ বোধ হয় তখন প্রচুর ঘাম বের হয়।
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যার সমাধানের চিকিৎসা
১/ কারো যদি অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা হয় তাহলে সে ডারমাটোলজিস্টরা ওষুধ গ্রহণ করতে পারে।
২/ বোটক্স ইনজেকশন নিতে পারে অথবা সার্জারি করার মাধ্যমে ঘাম তৈরি করা গ্রন্থিগুলো অপসারণের করতে পারে বিশেষজ্ঞ দের পরামর্শ নিয়ে।
তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে শরীরের কোন জায়গায় অতিরিক্ত ঘাম হয়, তার উপর নির্ভর করে যে তার কোন ধরণের চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
৩/ যদি আমাদের কারো বগলের নিচে খুব বেশি ঘাম হওয়ার সমস্যা থাকে তাহলে এর চিকিৎসা হিসেবে বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন কার্যকর হতে পারে এবং তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে।
৪/ বোটুলিন হলো এক ধরণের বিষাক্ত পদার্থ। যা ঘাম সৃষ্টি করা গ্রন্থিগুলোর সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলোর কার্যক্ষমতা একবারে বন্ধ করে দেয়, যার ফলে ঘাম তৈরি হয় না।তবে কিন্তু এই পদ্ধতি স্থায়ী হয় না, এই ওষুধের ডোজের ওপর নির্ভর করে যা প্রতি পাঁচ থেকে আট মাসে এই পদ্ধতির আবার পুনরাবৃত্তি করতে হবে।
৫/ অতিরিক্ত ঘামের সাথে মানুষের শরীরে দুর্গন্ধও হয়ে থাকে।
তাই এই অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর করতে সার্জারি করা যেতে পারে , যেটিকে বলা হয়ে থাকে এন্ডোস্কোপিক ট্রান্সথোরাসিক সিম্যাথেকটমি। এই সার্জারি করার মাধ্যমে ঘাম সৃষ্টি কারক গ্রন্থিগুলোর সাথে সংযুক্ত স্নায়ুর সংযোগ ছিন্ন করে দেয়।এই সার্জারি করার মাধ্যমে করে হাত ঘামার সমস্যা থাকলে তা সমাধানে প্রায় ৯৮% সফলতা দেখা যায়। অতিরিক্ত ঘাম দূর করনে সার্জারির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে।
একটি সমস্যা হলো, যে শরীরের যেসব জায়গায় ঘাম সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো, সার্জারি করার করার ফলে সেসব জায়গায় ঘাম সৃষ্টি হচ্ছে না । তবে ঘাম তৈরিকারি কিছু গ্রন্থিগুলো শরীরে ঘাম উৎপন্ন ঠিক করছে। যার ফলে ঘাম শরীরের অন্যান জায়গা দিয়ে নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
অর্থাৎ, হাতে অতিরিক্ত ঘামের জন্য সার্জারি করার কারনে, হাতে ঘাম তৈরি হলো না তবে শরীরের অন্যান্য জায়গায় ঘামের পরিমাণ সাধারণ সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলো।
৬/ আসলে ঘামের কারণে আমাদের জামা কাপড় নোংরা বা ময়লা হলেও এটি কিন্তু শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের একটি উপায় মাত্র।
৭/ সাধারণত মানুষের শরীরের নিচের অংশে বা ঘাড়ে, কপালে, নাকের নিচে অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি হয়ে থাকে।
★আরেকটা ঝুঁকি হলো, সার্জারির করার পর ফুসফুসের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক থাকে।তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তাই যত তারাতাড়ি বা কম বয়সে হাইপারহাইড্রোসিস ও অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা সমাধান করা যায় ততই ভাল হয়। তবে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরণের ঔষুধ গ্রহণ করা কোনভাবেই উচিত না।alert-info
অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়
অ্যাপল সিডার ভিনেগার
এক গ্লাস পানির মধ্যে দুই চা-চামচ অরগানিক অ্যাপল সিডার ভিনেগার এবং দুই চা চামচ মধু ভালভাবে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই পানি পান করুন। আস্তে আস্তে ঘাম কমে যাবে।
বেকিং সোডা
এক চা চামচ বেকিং সোডা সামান্য পানিতে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এর মধ্যে তিন-চার ড্রপ এসেনসিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর যে সব জায়গায় ঘাম বেশি হয় ওইসব জায়গায় এই পেস্ট লাগান। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর এটি ধুয়ে ফেলুন।
লেবু
এক গ্লাস পানির মধ্যে একটি লেবুর রস চিপে নিন।তারপর একটি পরিষ্কার কাপড় এর মধ্যে ভিজিয়ে গোসল করার আগে সারা শরীর মুছে দিন । ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন। কিছুদিন এভাবে করে যান ঘাম কমে যাবে।
আবার আরেকটি কাজ করতে পারেন তা হল লেবুর রস ও বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন । তারপর যেসব জায়গায় বেশি ঘাম হয় সেসব জায়গায় পেস্ট গুলো মাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি মেনে চলুন। এই পদ্ধতিটি অতিরিক্ত ঘাম দূর করতে বেশ ভাল কাজে দেবে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
যদি কখনো লক্ষ্য করেন যে আপনার শরীরের কোন জায়গা বা অংশ নিয়মিতভাবে ঘামলে এবং তা যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে চিকিৎসকের সাথে অবশ্যই পরামর্শ নেয়া দরকার ।
শেষ কথা
দেখা যাচ্ছে যে, ঘামের সমস্যা যদি কারো এতো বেশি থাকে, যে তার দৈনন্দিন কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
Leave a Reply