চুল পড়ার কারণ ও তার প্রতিকার।

চুল পড়ার কারণ ও তার প্রতিকারঃ চুল মানুষের সুন্দরতম অঙ্গ গুলোর একটি। আজ কাল অনেক রোগী চিকিৎসকের কাছে চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে আসেন। তার মধ্যে চুল পড়ার  সমস্যা  অন্যতম।এছাড়াও আছে,অল্প বয়সে  চুল পেকে যাওয়া, চুলের আগা , গোড়া  ফেটে  যাওয়া  এবং  চুলের মাঝে  ভেঙে যাওয়া সমস্যা নিয়ে প্রায়  অনেক মানুষই  দুশ্চিন্তায় ভুগে থাকেন।

চুল পড়ার কারণ ও তার প্রতিকার।

চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

তাই আজকে আমরা চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার এবং চুলের সকল সমস্যার বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাই অনুরোধ করবো মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ুন। 

চুল পড়ার কারণ

চুল মানুষের সুন্দর্যের একটা অংশ। সুন্দর চুল মানুষকে আরো সুন্দর করে তুলে। কিন্তু চুল পড়ে গেলে সেটা আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। চুল পড়ার কারণ কি তা জানতে আমরা খুবই আগ্রহী। কেননা কারণ জানতে পারলে তার প্রতি কার ও বের করা সম্ভব। চুল বিভিন্ন কারণে পড়ে থাকে। সাধারণত অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, বংশগত কারণে, ভিটামিন এর অভাবে। কিন্তু কারণ বিশেষে চুল পড়ার কারণ ও ভিন্ন হয়ে থাকে । তাই আমরা সব গুলোই বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আরো পড়ুনঃ ছেলেদের ত্বক ফর্সা করার সবচেয়ে ভালো উপায়। এবং ছেলেদের ত্বক ফর্সা করার সবচেয়ে ভালো ১০ টি ক্রিম।

অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ

সব থেকে বড় দুশ্চিন্তা হল যদি অল্প বয়সে চুল পড়ে যায়। কারণ এই অল্প বয়সেই চুল পড়ে গেলে বেশি বয়স হলে তখন মাথায় আর একটা চুলও থাকবেনা। তাই আমাদের প্রশ্ন জাগে যে, অল্প বয়সে চুল পড়ছে কেন? এর কারণ কি? অল্প বয়সে চুল পড়ার অনেক কারণ রয়েছে নিচে দেওয়া হলঃ-

১.মানসিক চাপঃ  বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, অল্প বয়সেই চুল পড়ে যাওয়ার বড় একটা বড় কারণ হলো স্ট্রেস বা মানসিক চাপ।


২.সঠিক যত্ন না নেওয়াঃ 
অনেকেই চুলের প্রতি অবহেলা এবং চুলের সঠিক যত্ন নেয়না। যার ফলে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। 

৩. অতিরিক্ত ব্লিচিং বা ডাই করলেঃ  চুলে অতিরিক্ত পরিমাণে ব্লিচিং, ডাই করার ফলেও চুল পড়ে যায় । রিবন্ডিং করা এবং  ক্ষতিকর প্যাক ব্যবহার করার ও চুল পড়ার অন্যতম কারণ।


৪. অস্বাস্থ্যকর ডায়েটঃ
  কম বয়সে চুল পড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল অস্বাস্থ্যকর ডায়েট। দৈনন্দিন আমরা ডায়েটে এমন সব খাবার রাখি, যা মাথার ত্বককে দুর্বল করে দেয়। এতে করে ও চুল পড়ে যায়।


৫. দূষণঃ
  বর্তমান সময়ে আবহাওয়া, পরিবেশ দূষণ আমাদের স্বাস্থক্ষতির সবচেয়ে বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । টক্সিন এবং দূষণের ফলে চুলের গোড়া আস্তে আস্তে  দূর্বল হয়ে যায় । এর ফলেই আঁচড়ালেই চুল পড়তে থাকে। 

৬. ওষুধঃ  নিয়মিত অতিমাত্রায় শক্তিশালী কোন ওষুধ খেলে তার প্রভাবে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।


৭. হরমোনের পরিবর্তনঃ
হরমোনের পরিবর্তন হলে বা  থাইরয়েড এবং বিভিন্ন রোগের কারণেও চুল পড়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ 

অতিরিক্ত চুল পড়ে যাওয়া ও বিরাট সমস্যা। যা আমাদের অনেকেই ফেস করতেছেন।চুল অতিরিক্ত পড়ে যাওয়ার ও  কিছু কারণ রযেছে। নিচে দেওয়া হলঃ

  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা।
  • চুলে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘ডি’-এর অভাব হলে। অর্থাৎ  চুলে সূর্যের আলো না লাগলে এবং ভিটামিন-‘ই’ জাতীয় খাবার কম বা  না খেলে।
  • প্রোটিন জাতীয় খাবার না খেলে।
  • বংশগত কারণে।
  • দীর্ঘদিন যাবত কিটো ডায়েট অথবা লো-কার্বস ডায়েট করতে থাকলে।
  • চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল অর্থাৎ রিবোন্ডিং, হেয়ার স্প্রে ইত্যাদি ব্যবহার করা।
  • ঠিক মত না ঘুমানো এবং ঘুম কম হলে।
  • চুলের ঠিকমত যত্ন না নেয়া।
  • ঠিকমতো চুল না আঁচড়ানো।
  • হরমোনের দ্রুত পরিবর্তন হলে।
  • মেয়েদের গর্ভাবস্থায় ও বাচ্চা প্রসবের পর।
  • অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ সেবন ইত্যাদি।

ছেলেদের মাথার চুল পড়ার কারণ কি

 ছেলেদের  চুল পড়ার প্রধান  কারণ হচ্ছে  বংশগত। এটিকে৷  এন্ড্রোজেনিক এলোপেসিয়া বলা হয়ে থাকে। এছাড়া ও  পুষ্টিগত সমস্যাতে ও অনেক সময়  চুল পড়ে থাকে । বর্তমান সময়ে অনেকেই জাঙ্ক ফুট বা ফাস্ট ফুড এবং ফরটিফাইড ফুড খেতে  খুবই অভ্যস্ত। যার  ফলে পুষ্টিহীনতার কারনে ও  চুল পড়তে পারে। তাছাড়া  সুষম খাবার, যেমন শাক-সবজি, ফল, আমিষ  ভিটামিন  আমরা কম খেয়ে থাকি ।

 এর কারনে  ও চুল পড়ে। আমরা  সবাই সুস্বাদু খাবার খেতে চাই কিন্তু সুষম খাবার খেতে চাই না। শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে  চুল পড়ার অন্যতম কারণ। বসে বসে অনেক সময়  কাজ করা বা সিডেন্টারি লাইফস্টাইল চুল পড়াকে  ও ত্বরান্বিত করে থাকে । এদের ব্রেন ওয়ার্ক হয় বেশি,  কিন্তু দেহের মুভমেন্ট কম হয়ে থাকে ।

যার  একটি কারণ হচ্ছে,বাজারের  বিভিন্ন ধরনের  হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা।  যেমন,  হেয়ার জেল, কালার, ড্রায়ার ব্যবহার এইগুলো  থেকেও চুল পড়ে। যাদের খুশকির খুব বেশি  সমস্যা আছে তাদের প্রায় সময়  চুল পড়তে দেখা যায়।

মেয়েদের চুল পড়ার কারণ কি

মেয়েদের চুল পড়ার অন্যতম  প্রধান কারণ হচ্ছে  অপুষ্টি। গ্রামের মহিলারা  অল্প খাবার খেয়ে থাকে।  তাই তাদের মধ্যে অনকেই  অপুষ্টিতে ভোগে।  আর শহরের মেয়েরা ক্রাশডায়েট করে ফলে চুল পড়তে থাকে।

ত্বকের  ভিতর মৃত কোষ যখন স্বাভাবিকের  চেয়ে  অনেক বেশি হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মে পড়ে যায় না, তখন খুশকি বা ত্বকের আঁশ বা চালের গুঁড়ার আকারে স্কাল্প বা মাথায় জমতে থাকে । এটিই হচ্ছে খুশকি। শীতকালে সাধারন  নিয়মেই  খুশকি হয়, কারণ তখন  বাতাসে পানি পরিমান  কম থাকে।  

যার ফলে ত্বক ও চুল  খুব বেশি শুষ্ক  হয়ে যায়। এ সময় আমাদের উচিৎ  চিকিৎসকের পরামর্শে অনুযায়ী  ময়েশ্চারাইজার বা তেল লাগানো যেতে পারে। আবার  অনেক সময় ধরে গোসল করলে অথবা ৪-৬ দিন ধরে গোসল না করলে , এবং  অনেক বেশি সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহারের  ফলে চুল থেকেও খুশকি হতে পারে।

 আরেকটি সমস্যা হচ্ছে খুশকি। সাধারণত  খুশকি ত্বকের কিছু সিরিয়াস রোগের কারণেও হতে পারে। এর মধ্যে  সেবোরিক ডার্মাটাইটিস বা সোরিয়াসিস অন্যতম  ।   সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কিটোকোনাজল শ্যাম্পু সপ্তাহে ১ -২ বার ব্যবহার করা যায়।  এর সম্পর্কে রোগীকে ভালো ভাবে  জানতে হবে, এতে করে  খুশকি তার অতিরিক্ত চুল ধোয়া অথবা  মাথার তালু পরিষ্কার না করা,  আবার বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকার কারণে নাকি অন্য  কোন রোগের কারণে হচ্ছে তা জানা । 

ফলে এর  কারণ বুঝে চিকিৎসা নিতে হবে। যাদের মাথার ত্বক খুব  তৈলাক্ত,  নখ দিয়ে আচড়ঁ দিলে নখে ময়লা জমে তাদের ক্ষেত্রে ও  খুশকি হতে পারে। তাছাড়া এ খুশকি সাধারণত হতে দেখা যায় না।  যার ফলে এ রোগীরা খুশকি হয়েছে কি না  তা  বুঝতেও পারে না।

 সাধারণত শুষ্ক ত্বকে খুশকি  সবচেয়ে বেশি হয়ে  থাকে।এ  ধরনের  রোগীদের নিয়মিত  তেল ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী  এন্টিড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।   আমরা অনেকেই জানি শ্যাম্পু হচ্ছে এক ধরনের ক্লিনজার, যখন আমাদের  মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তেল বা ময়লা জমে যায়  তখনই আমাদের  শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হয়। 

এটি স্কাল্পের তেল পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ।  আবার যাদের মাথায় খুশকি বেশি হয়, তাদের ক্ষেত্রে শ্যাম্পু প্রতিদিন একবার করে, অথবা  কম হলে ও  একদিন পরপর আরও কম হলে সপ্তাহে ২ – ৪ বার ব্যবহার করা যায়।

খুশকি ভালো না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে,  শ্যাম্পু পর্যাপ্ত  সময়  ধরে মাথায় ব্যবহার না করা। অবশ্যই চার  মিনিট ধরে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।  আসলে আমরা অনেকেই জানি না যে তেল চুলকে বাইরে থেকে সুরক্ষা দেয়।   আসলে  জেল জাতীয় কেমিক্যাল চুলে  কখনো ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে  করে চুল ভেঙে যায়, চুল পরে যায়  ও চুলের রঙকে  ম্যাট করে দেয়।

 অল্প বয়সে চুল পেকে গেলে কি করবেন

চুল পেকে যাওয়ার  অনেক গুলো কারন আছে,  যার মধ্যে  অন্যতম কারণ  হলো অপুষ্টি ও আমাদের  পরিবেশ দূষণ। বর্তমানে  সুপার এন্টি অক্সিডেন্ট চুল পাকা চিকিৎসায় ব্যবহার করা  হয়ে থাকে ।  অনেকেই চুলের কালার বা কেমিক্যাল শখ করে ব্যবহার করে থাকে,  যা মোটেও   ঠিক নয়।

 এটি চুল্কে  ভেঙে ফেলে ও চুলের গোড়াকে নষ্ট করে দেয়।  আবার বেশি বয়সে চুল পাকলে কসমেটিক কারণে হেয়ার কালার ব্যবহার করা যেতে পারে । তবে এ কালার ব্যবহারে  ফলে চুলের ত্বকে অনেকেরি   অ্যাকজিমা হয়। এ রকম হলে  এ ধরনের রোগীদের হেয়ার কালার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। 

হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার ফলে  কারও কারও চুলের গ্রোথের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই  ড্রায়ারে দুটি মোড আছে। একটি হলো  হিট মোড যা আমাদের  কখনও ব্যবহার করা ঠিক নয়, অপরটি৷  হচ্ছে কুল মোড যা দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস বের হয়, সপ্তাহে ২-৩  বার ব্যবহার করা যায়।

আরো পড়ুনঃ কিটো ডায়েট কি? কিটো ডায়েট কিভাবে করবেন। ডা জাহাঙ্গীর কবির কিটো ডায়েট চার্ট

কোন ভিটামিনের অভাবে চুল পড়ে যায়

অনেকেই জানতে চান  যে চুল কেন পরে কোন ভিটামিনের অভাবে বা কোন হরমোনের কারনে চুল পড়ে । শুধু ভিটামিন না আরো কয়েকটা কারণ হতে পারে, যেমনঃ

  • ভিটামিন বি১২,
  • ভিটামিন ডি৩ 
  • লৌহ ঘাটতি 
  • রক্তশূন্যতা
  • হরমোন ভারসাম্যহীনতা
  • ইনসুলিন নিরোধক

 উক্ত কারনে চুল ঝরে যেতে পারে। তবে আমরা যে ভুল করি প্রথমেই ভিটামিন ট্যবলেট খাই চুলের জন্য এটা ঠিক নয়। আগে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খান। বেশি বেশি শাক সবজি খান চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। 

চুল পড়ার বন্ধের কার্যকরি উপায় 

প্রথমে আমাদের  বের করতে হবে চুল কেন বা কি কারনে  পড়ছে। এটি কী বংশগত কারনে  নাকি অ্যালার্জিজনিত, অথবা অপুষ্টি নাকি চুল পরিচর্যার ভুল টেকনিক অবলম্বন  করার জন্য  অর্থাৎ প্লাটিলেট রিচড প্লাজমা চুল গজানোর  ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসা। 

 সাধারণত আমাদের রক্তে তিন ধরনের কণিকা আছে। এর মধ্যে অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট আমাদের দেহের ক্ষয় পূরণ করে ও দেহের  বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পিআরপিতে রোগীর দেহ থেকে রক্ত নিয়ে সেন্ট্রিফিউজ মেশিনের সাহায্যে এই তিন ধরনের কণিকাকে  পৃথক করা হয়ে থাকে। 

 তাছাড়া  ডায়াবেটিসে ব্যবহৃত ইনসুলিন সিরিঞ্জের সাহায্যে এ প্লাটিলেট চুল পড়ে যাওয়ার স্থানে ইনজেকশন আকারে দেয়া হয়ে থাকে । এটি  হচ্ছে বিশ্বব্যাপী কার্যকরী ও আধুনিক চিকিৎসা। আমাদের মাথায় প্রায় দুই  লাখের ও বেশি  চুল আছে। প্রতিদিন ১৫০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এর চেয়ে যদি বেশি পরে  তা  হলো  অস্বাভাবিক।

আসলে কীভাবে বুঝবেন যে  আপনার চুল স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পড়ছে। দুই আঙ্গুল দিয়ে যদি  ৫০ থেকে ৬৫ টি চুল ধরে হাল্কা টান দিলে যদি ৬ থেকে ৮টি চুল উঠে আসে  আংগুলের সাথে তাহলেই  বোঝা যায় আপনার চুল পড়ার হার  কতটা বেশি। এক ধরনের ক্যামেরা  আছে যা  চুলের গোড়ায় বসিয়ে মনিটর দিয়ে দেখা হয়  যে চুল পড়ার হার স্বাভাবিক  আছে কী না। 

পিআরপি থেরাপি সাধারণত ৬টি সেশন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।  আর ১২টি সেশন করলে চুলগুলো স্টাবেল হয়ে থাকে। যার খরচ হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশনের তুলনায় অনেক  কম। যা  শতভাগ হচ্ছে  নিরাপদ। ১২ সেশনের পরও ৬-১১ ভাগ রোগীর মেইনটেনেন্স থেরাপি হিসেবে বছরে ২থেকে ৩ বার পিআরপি আবার  ও করা যেতে পারে।

আবার চিকিৎসা যদি যথাযথভাবে করা যায় তাহলে পিআরপি করলে সাফল্য আসবে।  এতে চুলের গ্রোথ বুস্টআপ করা হয়।  আবার এর সঙ্গে মুখে খাওয়া ও  মুখে লাগানোর ওষুধও ব্যবহার করতে হয়। যদি এতে  কাজ না হয়ে থাকে  তবে হেয়ার ট্রান্সপ্লানটেশন করতে হবে। এর ফলে  রোগীর শরীর থেকেই ২-৩  মিলিমিটার চুল নিয়ে যেই জায়গায় চুল নেই সেই জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হয়। এই চুল রোগীর সারা জীবনই থাকে যায় ।  চুল পড়ে যায় না।  সম্পপূর্ণ ফলাফল পেতে ৬-১৯ মাস সময় লাগে।

চুল পড়া বন্ধের ঔষধ 

চুল পড়া বন্ধের জন্য আমরা ভাল করে না জেনে না বুঝে ঔষধ খাই বা ব্যবহার করি এতে অনেক সময় বিপরিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ ব্যবহার করবেন না । আগে মাথার স্কিন পরিক্ষা করে তারপর ওষুধ ব্যবহার করা উচিৎ। 

তবে অনেক সময় বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুল পড়ে যায় কেউবা টাক হয়ে যায়। এই সমস্যার জন্য ডাক্তাররা যে ওষুধ ব্যবহার করতে বলে তার নাম মিনোক্সিডিল। এটি ক্রিম, ফোম বা স্প্রে আকারে বাজারে যে কোন দোকানে পাওয়া যাবে। আপনি যদি ভালভাবে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে চুল পড়া অনেকাংশ কমে যাবে। আর টাক থাকলে চুল গজাতে  সাহায্য করবে।

চুল পড়া বন্ধ করার ইসলামিক উপায়

চুল পড়া বন্ধের ইসলামিক উপায় জানতে চায় অনেকেই।নির্দিষ্টভাবে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য বিশেষ কোনও দুআ বা আমল কুরআন ও হাদিসের কোথাও বর্ণিত হয় নি। চুল পড়া রোধে ফেসবুকে একটি পাওয়া যায়। তা হল,
হাতের তালুতে তেল নিয়ে ‘মুসাল্লামা তুল্লা শিয়াতা ফী-হা’ এই দুআটা পড়ে তিনবার হাতে ফুঁ দিবেন। তারপর তেল গুলো মাথায় মালিশ করলে চুল পড়া বন্ধ হয়।

 আসল কথা হল এটা কুরআনের একটি আয়াতের অংশ। যা চুলের সাথে কোন মিল নাই। এই পদ্ধতি বানোয়াট ও মিথ্যা। ইসলামিক উপায় বললে আমাদের প্রিয় নবী সাঃ সবসময় মাথায় তেল দিয়ে আছড়িয়ে রাখতেন। আপনি ও তাই করুন।

চুল পড়া বন্ধ করার তেল

চুল পড়া বন্ধ করার জন্য (Vitamin-E) সমৃদ্ধ যে কোন তেল যেমন: নারকেল, অলিভ অয়েল,  সরিষার তেল, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদি-হালকা কুসুম গরম করে মাথায় মাসাজ করলে চুল পড়ার বন্ধ হয়।এই পক্রিয়াটির সম্পূর্ণ উপকার পেতে রাতে ঘুমানোর পূর্বে তেল দিয়ে মাথা মাসাজ করে তারপর ঘুমাতে যান।

যেসব খাবার খেলে চুল পড়া বন্ধ হবে

প্রোটিন জাতীয় খাবার

প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে নিয়মিত। নিয়মিত মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ডাল ইত্যাদি খাবার খাবেন । তাহলে চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি চুল গজাতে ও সাহায্য করবে।

ভিটামিন-ই ও বায়োটিন যুক্ত খাবার

ভিটামিন -ই জাতীয় খাবার খেতে হবে। ভিটামিন-ই বিভিন্ন খাবারে পাওয়া যায়। তারমধ্যে মাছের তেল,  ভেজিটেবল ওয়েল যেমন অলিভ ওয়েল, সরিষার তেল, সূর্যমুখীর তেল ইত্যাদিতে ভিটামিন-ই আছে।ভিটামিন-‘ই’ চুলের হরমোনাল বৃদ্ধি করে।
আবার  বায়োটিনযুক্ত খাবার চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য  করে। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট, টমেটো ও পালং শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে বায়োটিন রয়েছে । ভিটামিন ‘ই’ ও বায়োটিন যুক্ত খাবার চুলকে করে স্বাস্থ্য উজ্জ্বল, ঘন ও মসৃণ ও লম্বা।

ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার

ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া সূর্যের আলো ও চুলের জন্য উপকারী কেননা তাতে ভিটামিন -ডি রযেছে। এছাড়াও চুল পড়া বন্ধ করতে ভিটামিন -ডি জাতীয় খাবার যেমন, টকদই, পনির, ছানা, দুধ, কাঠবাদাম, পালং শাক, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি মাছ ইত্যাদি খেতে পারেন। ভিটামিন-ডি যুক্ত খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ ভিটামিন ডি  এর অভাব হলে কিভাবে বুঝবেন।

ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার

যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড রয়েছে এইসব খাবার খেলে চুলের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখে, চুল পড়া রোধ করে। খাবার গুলো হল, সামুদিক মাছ, কাঠবাদাম, আখরোট, ডিম, অলিভ ওয়েল ইত্যাদিতে

ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার

ভিটামিন -সি যুক্ত খাবার খেলে চুলের ফাংগাল ইনফেকশন রোধ করা সম্ভব হবে। চুল পড়া বন্ধের পাশাপাশি চুল সুন্দর ও মসৃণ হবে। ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার হল আমলকী, লেবু, কাঁচামরিচ, কাঁচা আম, লিচু, পেয়ারা, বাতাবী লেবু, তেঁতুল, যেকোনো টক জাতীয় ফল ইত্যাদি।

ভিটামিন-এ যুক্ত খাবার

চুল পড়া বন্ধের জন্য ভিটামিন-‘এ’ জাতীয় খাবার খেতে পারেন।  ভিটামিন-‘এ’ জাতীয় খাবারের মধ্যে মিষ্টিআলু, গাজর ইত্যাদি চুলের জন্য বেশ উপকারী। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার  চুল পড়া বন্ধ  করে নতুন করে চুল গজাতে সাহায্য করে।

চুলের যত্ন নেওয়ার ঘরোয়া উপায়

 চুলের যত্ন নেওয়ার সব থেকে ভাল উপায় হল ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা । ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে সেই সম্পর্কে কয়েটি পদ্ধতি আলোচনা করবো। অন্তত সপ্তাহে  দুবার  নিয়ম করে এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়ন। তাই চলুন জেনে নিই কিভাবে করবেন ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিবেন।

চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়

(১) ডিম ও তেল

ডিমের সাথে তেল মিক্সিং করে চুলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি আপনার চুল রুক্ষ হয় তাহলে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করা যাবেনা তখন শুধু কুসুমের সাথে তেল মিশিয়ে নেবেন। আর যদি আপনার চুল পাতলা  হয় তাহলে পাতলা চুলের জন্য শুধু ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করবেন। ভালভাবে মিশ্রণ তৈরি করে নিবেন তারপর  চুলে ভালোভাবে মেখে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলবেন। এটি চুলের জন্য খুবই কার্যকরী পদ্ধতি । খুব সহজেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।

(২) টকদই

আমরা অনেকেই শ্যাম্পু ব্যবহারের পর কন্ডিশনার ব্যবহার করি চুল ঝলমলে হওয়ার জন্য।   অনেকের চুলে কন্ডিশনার (conditioner) ব্যবহার করলে প্রচুর চুল পড়ে যায় । তাই প্রতিদিনই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না এর পরিবর্তে টকদই ব্যবহার করবেন। টক দই কন্ডিশনার এর বিকল্প হিসেবে কাজ করে। তাই টকদই চুলে মেখে রেখে দিন ১০ মিনিট  তারপর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে শ্যাম্পুর পর টকদই ব্যবহার করলে আপনার চুল হবে ঝলমলে ও চমৎকার ।

(৩) চা-পাতা

আমরা সাধারনত চা খাওয়ার পর চা-পাতা ফেলে দেই। চা পাতা ও আপনার চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। তাই চা খাওয়ার পর চা-পাতা কখনো ফেলে দিবেন না। সেটি আরেকবার ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে কিছুক্ষণ রেখে দিন। গোসলের শেষে চায়ের পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

(৪) কলা ও মধু

সিল্কি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কলা আর মধুর একসাথে  মিশ্রণ করে ব্যবহার করুন। তবে কলার এই পেস্ট ১০ মিনিটের বেশি চুলে মাখিয়ে রাখবেন না। শক্ত হয়ে  যাবে ফলে চুল ধুইতে কষ্ট হবে। ৫-৬ মিনিট রেখে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এতে চুুুুুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

 (৫) ক্যাস্টর অয়েল

চুল ঘনত্ব করার জন্য এবং দ্রুত বৃৃৃদ্ধির জন্য ক্যাস্টর অয়েল অনেক উপকারী। এই তেল অনেক ঘন হয়ে থাকে । তাই এই তেল অল্প করে চুলে ভালভাবে ম্যাসেজ করে ১০ মিনিট রেখে দিবেন। অথবা রাতে দিয়ে সারারাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলতে পারেন।

(৬) পেঁয়াজের রস

ঘরে হাতের নাগালে থাকা প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি জিনিস হল পেঁয়াজ । চুলকে মজবুত রাখার জন্য এটি চমৎকার উপকারী। পেঁয়াজের রস আলাদা করে সরাসরি চুুুুলে লাগাবেন। সিল্কি বা পাতলা চুলে পেঁয়াজের রস সরাসরি লাগাবেন তবে আপনার চুল রুক্ষ হলে পেঁয়াজের রসের সাথে লেবুর রস বা অল্প তেল মিশিয়ে নেবেন। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন। আপনার চুল শক্ত ও মজবুত হবে। চুল পড়া কমাবে।

প্রিয় বন্ধুরা। চুল হল আমাদের সুন্দর্যের একটি অংশ। তাই জেনে নিলেন খুব সহজেই  ঘরোয়া উপায়ে চুল কিভাবে  স্বাস্থ্যোজ্জল করবেন। এতে খরচও কম হবে বলতে গেলে খরচই নেই। একদম ঘরে থাকা উপকরণ দিয়েই চুল হবে ঝলমলে ও মজবুত। তাই এই কার্যকরী পদ্ধতি ব্যবহার করুন। 

শেষ কথা 

আসলে চুল পড়া নিয়ে  চিন্তা বা ভীত হওয়ার কিছুই নেই। যদি  চুল পড়া শুরু হয় ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন আর তারপর ও অতিরিক্ত চুল পড়লে  প্রাথমিক অবস্থাতেই বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করে,তবে তার যথাযথ   চিকিৎসা শুরু করাই  মঙ্গলজনক।