কাজু বাদামঃ
খুব সুস্বাদু ও সুন্দর প্রোটিন সমৃদ্ধ বাদাম হলো কাজু বাদাম। কাজু বাদাম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হলো +Anacardium occidentale) যার প্রতিশব্দ (Anacardium curatellifolium A.St.-Hil). দেখতে সপুষ্পক অ্যানাকার্ডিয়েসি পরিবারের বৃক্ষ এটি । বাদাম হলো একটি অর্থকরি ফসল। যার বীজ থেকে চারা তৈরি করা হয়। বেলে দো আশঁ মাটি ঢালে ভাল জন্মে।
কাজু বাদামের উপকারিতাঃ
আসলে কাজুবাদাম দেখতে ছোট হলেও তা গুনে ভরপুর।ছোট কিংবা বড় আমরা সকলেই প্রায় মোটামুটি কাজুবাদাম খেতে ভালোবাসি। আবার ড্রাই ফ্রুটস এর মধ্যে অন্যতম বাদাম। এই উপাদানটি কেক, বিস্কিট, চকোলেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের আইটেম ফিন্নি, পায়েস ,সন্দেশ, চাটনি তৈরিতে সব কিচ্ছুতেই ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
সামান্য পরিমান কাজুবাদামের ব্যবহার খাদ্যের স্বাদকে করে তুলে আরো দ্বিগুণ এবং বাড়িয়ে তোলে এছাড়া শারীরিক পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে কাজু বাদামের উপকারিতার কোন তুলনা হয়না। কাজু বাদামে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।যা আমাদের শরীরের নানা ভাবে উপকারে করে থাকে । অনেকেই হয়তো জানে না কাজু বাদামে ভিটামিনের মাত্রা অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। তাই অনেকে একে প্রকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট বলেও মনে করে থাকে।
আরো পড়ুন!
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, সুস্বাদু এই কাজু বাদাম খাওয়ার নানাবিধ উপকারিতা গুলি।
- ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- হার্ট ভালো রাখে ও কোলেস্টেরল দূর করে।
- ত্বকের ও চুলের সমস্যা সমাধানের ও কাজুবাদামের উপকারিতা অনেক।
- আবার শরীরের হাড় শক্ত করতে ও অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে কাজু বাদাম খুব উপকারি।
- ক্যান্সার রোধে কাজুবাদামের উপকারিতা ও অনেক।
- স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজুবাদামের উপকারিতা রয়েছে।
তছাড়াও সংক্রামনের সঙ্গে লড়াই করতে কাজুবাদাম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই চলুন প্রত্যেকটির বিস্তারিত জেনে নেই।
১) ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেঃ
এখন বর্তমানে সব থেকে বড় সমস্যা বা জাতীয় রোগ হয়ে দাড়িয়েছে ডায়াবেটিস। প্রায় ডায়েবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে এক দুইজন থাকেই যারা এই রোগে আক্রান্ত। যার ফলে এই রোগ দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এতো চিন্তার কিছু নেই, কারণ আপনার কাছেই আছে এর সঠিক সমাধান। রক্তের সাভাবিক মাত্রা ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অতিরিক্ত রক্তচাপ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রোটিন এবং ফাইবারে বিদ্যমান কাজুবাদাম প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের থাকে।
কাজুবাদামে আছে ভিটামিন ও মিনারেল যা শরীরের গ্লুকোজের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং শরীরের কর্মক্ষমতা ও শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ টা বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিছুদিনের মধ্যেই এর উপকারিতা লক্ষ্য করতে পারবেন ।এছাড়া কাজুবাদামে সোডিয়ামের মাত্রা খুবই কম থাকে এবং পটাসিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি। যার কারণে রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কাজুবাদাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২) হার্ট ভালো রাখে ও কোলেস্টেরল দূর করেঃ
কাজু বাদামে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা করতে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে। তাই যাদের হার্টের বিভিন্ন সমস্যায় ভগছেন , তারা প্রতিদিন কাজুবাদাম খেতে পারেন ।কাজুবাদামে রয়েছে আর্জিনিন নামক উপাদান যা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয় এবং হার্টকে সবসময় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং হার্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে দ্বিগুণ সহায়তা করে।
কাজুবাদামে আছে প্রচুর পরিমানের ওলিসিক নামক এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা দেহের ভাল কোলেস্টেরল এর মাত্রা বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে অনেক সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করলে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে ।এর ফলে হার্টেরও বিভিন্ন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তাই বিভিন্ন ডায়েটিসিয়ান ও নিউট্রিসানিস্টরা কাজুবাদামের উপকারিতা পরিলক্ষিত করে এই বাদাম খাওয়া পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
৩) ত্বকের ও চুলের সমস্যা সমাধানে কাজু বাদামের উপকারিতাঃ
কাজুবাদাম শুধু মাত্র যে পুষ্টিগুনে ভরপুর থাকে তাই কিন্তু নয়। এটি আমাদের ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। কাজু বাদামের প্রচুর পরিমানে আছে জিঙ্ক, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস । তাছাড়াও এতে আছে প্রোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ। যা আমাদের ত্বককে সুস্থ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
আবার শুধু মাত্র ত্বকের নয় চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেও কাজুবাদামের গুরুত্ব অপরিসীম । কাজুবাদামের রয়েছে কপার যা চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চুলের গোড়াকে করে তুলে আরো মজবুত । কাজুবাদাম কিভাবে আমাদের ত্বকের ও চুলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।
৪) হাড় শক্ত করতে ও অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমাতে কাজু বাদামের উপকারিতাঃ
কাজু বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ উপাদান। হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করতে ও হারের ক্ষয় রোধ করতে যা সহায়ক । তাছাড়াও অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো হাড়ের রোগ হওয়ার আশঙ্কাকেও দূর করতে সাহায্য করে কাজুবাদাম ।
আবার বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কাজুবাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ।তাই আয়রনের মাত্রা কমে গেলে কাজু খাওয়া ফলে দেহের ভেতর থেকে আয়রনের ঘাটতি দূর হয়ে যাবে । কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই অ্যানিমিয়ার মতো রোগেরও সমাধান করতে সক্ষম।সেই সাথে কাজুবাদাম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি সাধন করে থাকে।
৫) ক্যান্সার রোধে কাজু বাদামের উপকারিতাঃ
বর্তমান সময়ে ক্যান্সার প্রায় ঘরে ঘরে ই পৌঁছে গেছে। তাই এই মারণ রোগ প্রতিরোধে কাজুবাদামের উপকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখা গেছে যেখানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, সেখানে ক্যান্সার সেলের খোঁজ পাওয়া যায় । তাই তো এই মারণ রোগ প্রতিরোধে কাজু বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে ডাক্তারেরা। এই কাজুবাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলার পাশাপাশি টিউমার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।কাজু বাদামে থাকা প্রম্যান্থোসায়ানিডিন নামক উপাদান থাকে যা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কাজুবাদাম।
আরো পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা কি? এবং কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম।
৬) স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজু বাদামের উপকারিতা জেনে নিনঃ
শিশুদের মধ্যে যারা নতুন স্কুলে ভর্তি করানো হয় এমন বাচ্চাদের জন্য খুবই উপকারি তাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে এবং বৃদ্ধদের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে অনেক চিকিৎসকরা কাজুবাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কাজু বাদাম কিভাবে খাবেন?
কাজু বাদাম কিভাবে খাবেন বা কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম বলতে হলে আগে দেখতে হবে আপনি কেন খাবেন।
যদি ডায়েট এর জন্য খান তাহলে আপনি সকাল ১১-১২টার মধ্যে খেতে পারেন। আবার বিকাল ৪-৫ টার মধ্যে খেতে পারেন। যখনি ক্ষুধা লাগবে কাজু বাদাম খেলে ক্ষুধা ও মিঠে যাবে। আপনার ডায়েট ঠিক থাকবে।
আর অন্য কারণে খেলে রাতে বিজিয়ে সকালে খাবেন ৫-১০ টি। বেশি খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
কাজুবাদামের দামঃ
কাজু বাদাম এর দাম একেক জায়গায় একেক রকম হয়ে থাকে। যায়হোক বর্তমান বাজার মূল্য কিছু বাড়তে বা কমতে পারে।
- Small size-850 Tk
- Medium size-1050 Tk
- Big size-1200 Tk
কাজু বাদাম কোথায় চাষ হয়ঃ
অনেকেই জানতে চান যে কাজু বাদাম কোথায় চাষ হয় তাই তাদের জন্য যুক্ত করা হল।
সাধারণত পাহাড়ে চাষের জন্য তৈরি করা হচ্ছে কাজুবাদামের চারা। পাহাড়ে পাহাড়ে চাষ হচ্ছে, আদা, হলুদ, কলা, আনারস এর সাথে জুমে হরেক রকমের ফসলের আবাদ। দীর্ঘকাল থেকেই পাহাড়ে চলে আসছে এসব ফসল আর ফলফলাদির চাষবাস। এখন পাহাড়ে কাজুবাদাম চাষ দেখাচ্ছে নতুন এক স্বপ্ন।এক দশক আগেও পাহাড়ে উৎপাদিত কাঁচা কাজুবাদাম ছিল ফেলনা। তবে এখনকার ছবি একেবারেই আলাদা।বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশিরভাগ পাহাড়ি এলাকায় এই বাদাম চাষ করা হয়।
শেষ কথা
কাজুবাদামের উপকারিতার শেষ নেই। যতই খাবেন ততই ভাল। তাই প্রতিদিন নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
ধন্যবাদ।
Leave a Reply