থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক মানুষই জানে। আবার অনেক মানুষ এর উপকারিতা না জানলে ও ভেষজ উদ্ভিদ বা ঔষধি পাতা হিসেবে সবার নিকট পরিচিত । থানকুনি পাতা আমাদের দেশে ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর উপকারিতা অনেক।সাধারণত এই ঔষধি গাছ লাগাতে হয়না। কেননা আমাদের বাসা বাড়ির ঝোপঝাড়ে বা এখানে সেখানে আপনা আপনি বেড়ে ওঠে এই গাছ। থানকুনি পাতায় রয়েছে এমন কিছু ঔষুধি গুণ যা জানলে আপনি ও অবাক হবেন ।
তাই আজকের এই আর্টিক্যালে আমরা থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যাতে আপনাদের খুবই উপকারে আসে। তো চলুন জেনে নেই।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
থানকুনি পাতা এক ধরনের বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ যা আয়ুর্বেদিক ঔষধ হিসেবে প্রাচীনকাল থেকেই থানকুনি পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান, নানান সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এর পাশাপাশি এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। থানকুনি পাতার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা ও থানকুনি পাতা সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় নিচে আলোচনা করা হল।
থানকুনি পাতার ছবি
থানকুনি পাতা অনেকেই হয়তো চিনেনা। তারা জানতে চায় থানকুনি পাতা দেখতে কেমন। আসলে থানকুনি পাতা হলো গুল্ম জাতীয় ছোট একধরনের উদ্ভিদ বা গাছ। এর পাতাগুলো দেখতে ছোট ও গোল আকৃতির। অনেকটা টাকার কয়েন বা মুদ্রার মতো বা তার আকৃতি পান এর মত।
থানকুনি পাতা গুলো সাধারণত পুকুর বা জলাশয়ের ধারে কিংবা ঝোপ ঝাড়ে বা ঘাসে এমন যায়গায় থানকুনি পাতা পাওয়া যায়। থানকুনি পতার বৈজ্ঞানিক নাম Centella asiatica একে ইংরেজিতে অনেকেই Indian pennywort বা ইন্ডিয়ান পেনিওর্থ নামে ডাকে। নিচে এর ছবি দেওয়া হল–
থানকুনি গাছ
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, আমরা জানতে পারি থানকুনি (বৈজ্ঞানিক নাম: Centella asiatica) এটা এক ধরনের খুব ছোট বর্ষজীবী ভেষজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক পরিবাবের নাম ম্যাকিনলেয়াসি যাকে অনেকে এর বৈজ্ঞানিক পরিবার এপিকেসি পরিবাবের উপপরিবার মনে করেন।
সাধারণত বাংলাদেশ, ভারত,শ্রীলংকা, উত্তর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি, এবং এশিয়ার অন্যান্য প্রান্তে এই উদ্ভিদ সব থেকে বেশি দেখা যায় । ভেষজ ঔষধ হিসাবে এর বহুল ব্যবহার আছে আয়ুর্বেদিক, প্রাচীন আফ্রিকীয়, চৈনিকসহ অনেক দেশের চিকিৎসা শাস্ত্রে। আমাদের দেশে ও ঔষধ হিসেবে এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। নিচে থানকুনি গাছ এর ছবি দেওয়া হল–
থানকুনি পাতার উপকারিতা
থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের বেশ কার্যকরি। নিচে থানকুনি পাতার উপকারিতা উল্লেখ করা হল–
১. হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে
হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য থানকুনি পাতা বেশ কার্যকর। যাদের হজম শক্তি কম বা কোন কিছু খেলে সহজে হজম হতে চায়না তারা প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খেলে খেতে পারেন। এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি পেটের অন্যান্য যে কোন সমস্যা দূরীকরণে থানকুনি পাতা বা পাতার রস খেতে পারেন।
২. সর্দি কাশি ও জ্বর সারতে
জ্বর, সর্দি কাশি দূর করতে থানকুনি পাতার ব্যবহার সব থেকে বেশি হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন যাবত কাশি অথবা শুকনো কাশি কিছুতেই ভাল হচ্ছে না তারা প্রতিদিন দুই চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক সপ্তাহ ধরে খেলে পুরনো কাশি বা শুকনো কাশি দ্রুত ভাল হবে।
হঠাৎ জ্বর দেখা দিলে এক চা চামচ থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চা চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জ্বর ভাল হয় এবং শরীরের দূর্বলতা দূর হয়।
৩. এসিডিটি দূর করে
এসিডিটির সমস্যা নেই এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ এসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন। এসিডিটির সমস্যা দূর করতে থানকুনি পাতা খেতে পারেন। এসিডিটি সমস্যায় থানকুনি পাতা বেশ উপকারে আসে এবং দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে থানকুনি পাতা খুবই চমৎকার কাজ করে থাকে। ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য বাজারে বিভিন্ন কেমিক্যাল পাওয়া যায়। এইসবে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও থাকে। তাই এইসব কেমিক্যালের পরিবর্তে থানকুনি পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এতে কোন ক্ষতি ছাড়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
নিয়মিত থানকুনি পাতা ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বলতার পাশাপাশি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, কালো দাগ, মেছতা ইত্যাদি সমস্যা ও দূর হয়।
৫. যৌবন ধরে রাখতে
বয়স্কের চাপ মুছে যৌবন ধরে রাখতে এবং তারুণ্য বজায় রাখতে থানকুনি পাতা ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত থানকুনি পাতা খেলে চেহারায় তারুণ্য ভাব ফিরে আসবে।
৬. ক্ষত নিরাময়ে
শরীরের যেকোনো ক্ষত, কাটা-ছেঁড়া নিরাময়ে থানকুনি পাতা দারুণ কাজ করে । কারণ এ পাতায় রয়েছে সাপোনিন্স নামক এক প্রকার প্রাকৃতিক উপাদান যা ক্ষত স্থানে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি করে দেয় ফলে দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যেতে সহায়তা করে। যেকোনো জায়গায় ক্ষত সারতে ক্ষতস্থানে থানকুনি পাতা থেঁতো করে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। দ্রুত সেরে যাবে।
৭. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে
যাদের রক্তচাপ বা প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকেনা তারা থানকুনি পাতা খেতে পারেন। থানকুনি পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে । এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাধা প্রধান করে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৮. পেটের সমস্যা সমাধানে
পেটের যে কোন সমস্যায় থানকুনি পাতা খেতে পারেন। আদিকাল থেকেই মানুষ পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা ব্যবহার করে আসছে। পেটের সমস্যা দেখা দিলে পুরো শরীরই অচল হয়ে যায়। তাই থানকুনি পাতা খেলে পেটের সকল সমস্যা দূর হয়ে যায় । যাদের অল্পতেই পেটের সমস্যা দেখা দেয় বা দীর্ঘদিন পেটের সমস্যায় ভোগছেন তারা নিয়মিত থানকুনি পাতা খেতে পারেন।
৯. চুল পড়া বন্ধ করে
চুল পড়েনা এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। ছেলে হোক বা মেয়ে সবারই চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে। থানকুনি পাতায় রয়েছে চুল পড়া বন্ধ করার গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। এক গবেষণায় রয়েছে, সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন ২-৩ টা করে থানকুনি পাতা খেলে চুলের স্ক্যাল্পে পুষ্টি জমে। ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়।
১০. শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে
আমরা প্রতিদিন যে সমস্ত খাবার গ্রহণ করি তাতে কিছু না কিছু ক্ষতিকর পদার্থ থাকে বা অনেক সময় বাহিরের রাস্তার পাশে দোকান থেকে বিভিন্ন ফাস্ট ফুড বা ভাজা পোড়া খেয়ে থাকি যা দেহের ক্ষতি করে। প্রতিদিন সকালে নিয়মিত থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়। এবং আমাদের শরীরে রক্ত পরিষ্কার হয়। ফলে আমরা ক্ষতিকর পদার্থ থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
আরো পড়ুনঃ অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা
যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে যৌবনে ও বাটা পড়তে শুরু করে। দেখা যায় বৃদ্ধ হওয়ার আগেই যৌবন শক্তি শেষ হয়ে যায়। যৌবন ধরে রাখতে থানকুনি পাতার উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন সকালে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। এতে যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
থানকুনি পাতার অপকারিতা
যে কোন খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। থানকুনি পাতার ক্ষেত্রে ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবেন না এতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেকেই আছে থানকুনি পাতা খেতে পারে না। যারা পারে না তারা জোর করে কখনোখবেন না এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।
যাদের লিভারের সমস্যা রয়েছে তারা এ পাতা খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। অন্যথায় সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত থানকুনি পাতা খেলে শরীরে খোস পাচরাসহ, মাথা ঘুরা এবং এলার্জি জনিত সমস্যাওও দেখা দিতে পারে তবে সবার না যাদের আগে থেকে এই ধরনের সমস্যা রয়েছে তারা সাবধানে খেতে হবে।
যাদের আগে থেকে যে কোন কিছুর অপারেশন করা আছে তাদের থানকুনি পাতা না খাওয়ায় ভাল।
থানকুনি পাতা খাওয়ার নিয়ম
থানকুনি পাতা আপনি যেভাবে ইচ্ছা খেতে পারেন এর বিশেষ কোন খাওয়ার নিয়ম নেই। বিভিন্নভাবে থানকুনি পাতা খাওয়া যায়।
- আপনি থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। অথবা শুধু পাতা ও চিবিয়ে খেতে পারেন।
- থানকুনি পাতা দিয়ে ভর্তা, বানিয়ে ভাতের সাথে খেতে পারেন।
- আবার অনেকে থানকুনি পাতা দিয়ে বড়ি বানিয়েও খেয়ে থাকেন।
- আবার থানকুনি পাতা শুকিয়ে পাউডার বানিয়ে ও খেতে পারেন।
- অনেকে আবার থানকুনি পাতা দিয়ে বড়া ও বিভিন্ন রেসিপি বানিয়ে ও খেয়ে থাকেন।
- থানকুনি পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে ও খেতে পারেন।
- সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেতে পারেন। এতে বেশ উপকার রয়েছে।
যেহেতু আপনি থানকুনি পাতা বিভিন্ন রোগের নিরাময় এর জন্য খাবেন। তাই আপনি যেভাবে ইচ্ছা খেতে পারেন।
শেষ কথা
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি । থানকুনি পাতার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতাই বেশি। তাই আপনি যদি বিভিন্ন সমস্যায় বা পেটের সমস্যায় ভোগেন তাহলে থানকুনি পাতা হতে পারে আপনার জন্য সেরা প্রাকৃতিক ঔষধ।
Leave a Reply