বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধ: বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা নিয়ে সকল মা বাবা-ই একটু বেশি চিন্তিত থাকেন। বিশেষ করে দিনের বেলায় একটু বেশি সমস্যা দেখা দেয়। যেহেতু বাচ্চারা একটু পর পর খেতে থাকে তাই দেখা যায় দিনে ১৫-২০ বার গ্যাস বের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ সময়ই এটা বাচ্চাদের জন্য অস্বস্তিকর। কখনো কখনো তা বাচ্চাদের পেটে যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। কারণ পেটের মধ্যে গ্যাস জমে থাকে, বাচ্চারা ঠিকঠাক মতো গ্যাস মুক্ত করতে পারে না। ফলে গ্যাস জমে সমস্যা সৃষ্টি করে।
বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধের নামের তালিকা ও দাম
তাই আজকের আর্টিক্যালে বাচ্চাদের কীভাবে গ্যাস মুক্ত রাখবেন এবং বাচ্চাদের গ্যাস দূর করার ঘরোয়া উপায় ও বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধের নামের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি সবার ভাল লাগবে।
শিশুদের কিভাবে গ্যাস হয়
সাধারণত বাচ্চারা যে মায়ের দুধ খায় বা প্যাকেট দুধ খায় তাতে থাকা প্রোটিন এবং ফ্যাটের হজম করা থেকে স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চাদের পেটে গ্যাস তৈরি হয়। গ্যাস সর্বদায় পেটে ভাসমান থাকে এবং পরিপাক নালীর উপর হালকা চাপ সৃষ্টি করে এবং তার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গ্যাস বাইরে বের হতে চায়। কখনও কখনও পেটে উৎপন্ন হওয়া অতিরিক্ত গ্যাস বা স্তন্যপান করার সময় টেনে নেওয়া গ্যাস অন্ত্রে আটকে যায় এবং শিশুর পেটে চাপ সৃষ্টি করে ফলে শিশু পেটে ব্যথা অনুভব করে এবং কখনো কখনো পেটে ব্যাথা বেশি হওয়ায় কান্না শুরু করে দেয়।
আরো পড়ুনঃ বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয়। বাচ্চাদের পাতলা পায়খানার সিরাপ।
শিশুদের পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ
- শিশুরা মায়ের স্তনদুগ্ধ বা বোতল থেকে দুধ পানের সময় ভুলভাবে পান করলে অনেক সময় পেটে অতিরিক্ত হাওয়া গিলে ফেলে, ফলে এই কারণে ও গ্যাস হয়।
- বাচ্চারা যখন অতিরিক্ত কান্নার করে এবং খাওয়ার আগে অনেক সময় হাওয়া গিলে ফেলে। কখনও কখনও অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা ও শিশুর পেটে গ্যাস তৈরী হবার কারণ হতে পারে।
- কখনো কখনো শিশুর খাদ্য সঠিকভাবে হজম না হলে পেটে গ্যাস এর সমস্যা তৈরি করে।
- অন্ত্রের মধ্যে বিদ্যমান অবিকশিত ব্যাকটেরিয়া ফ্লোরা ও শিশুদের পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ হতে পারে।
- মায়েরা এমন কিছু খায় যাতে পেটে গ্যাস হতে পারে বা মায়েদের পেটে গ্যাস হলে যখন তারা মায়ের থেকে দুধ পান করে তখন বাচ্চার পেটে ও গ্যাস সৃষ্টি হয়।
- শিশুদের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণও তাদের হজমশক্তিকে বাধা প্রধান করতে পারে।ফলে পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
শিশুদের মধ্যে গ্যাস হওয়ার লক্ষণ
বাচ্চাদের পেটে গ্যাস হলে সেটা বুঝা মুশকিল। কারণ, তারা কথা বলতে পারেনা। তাদের সব কিছু প্রকাশ করার একমাত্র ভাষা হচ্ছে কান্না। বাচ্চাদের ক্রন্দন বিভিন্ন কারণে ও হতে পারে তা হল, তাদের ক্ষুধা, ব্যথা, অস্বস্তি, ক্লান্তি, একাকীত্ব বা গ্যাসের কারণে। তবে তা বোঝার জন্য প্রয়োজন তীক্ষ পর্যবেক্ষণ। প্রতিটি কারণের জন্য আলাদা লক্ষণ রয়েছে।
যখন বাচ্চারা পেটের গ্যাসের ব্যথার কারণে কাঁদতে থাকে তখন বাহ্যিক কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে তাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি যেমনঃ
- দেহের এ পাশ ও পাশ করা,
- হাত মুষ্টি খোলা ও বন্ধ করা,
- জোরে জোরে হাত পা ছোড়া,
- হাঁটু বুকে ঠেকিয়ে হাঁসফাঁস করা,
- পেট ফুলা ফুলা মনে হওয়া,
- বার বার গ্যাস নিঃসরণ হওয়া ইত্যাদি।
বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধের নামের তালিকা
যে ঔষধ গুলোর কথা উল্লেখ করবো তা শিশুদের গ্যাস সমস্যাগুলি সমাধান করার জন্য খুবই কার্যকরি। এই ঔষধ গুলো বাচ্চাদের পেটের ছোট গ্যাস বুদবুদ গুলিকে একসাথে করে বড় একটা বুদবুদ তৈরি করে যাতে সেটি শিশুর পেট থেকে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারে। এবং সহজেই বাচ্চাদের গ্যাস দূর করে। তবে পরামর্শ হল ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে ঔষধ সেবন করাবেন।
Medicine — Company —Price
1. Flacol →Square →35
2. Flatunil →Acme →35
3. Gasnil →Eskayef→30
4. Lefoam →Incepta →30
5. Neodrop→Beximco →30
6. Pedicon →Orion →30
7. Semecon →Drug →46
8. Simet → ACI →30
9. Simethi →Zenith →30
10. Naunehal →Harbal →75
শিশুর গ্যাসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা ঘরোয়া ভাবে দূর করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। নিয়মিত এই গুলো মেনে চলতে পারলে আপনার বাচ্চা গ্যাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকবে। তো চলুন জেনে নেই।
১.খাওয়ানোর সময় সঠিক অবস্থান বজায় রাখুন
বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় বাচ্চার মাথা এবং ঘাড় এমন একটি কোণ করে রাখতে হবে যাতে মাথা পেটের তুলনায় উপরে থাকে। এতে দুধ নীচে পেটে যায় বায়ু যায়না আর বায়ু গেলে ও তা উপরে উঠে আসে। এই পদ্ধতি বোতলে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
২.খাওয়াবার সময় অবশ্যই ঢেঁকুর তোলানোর নিয়মটি ব্যবহার করুন
শিশুর খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত বায়ু গলাধঃকরণ বন্ধ করার বেশ কার্যকরি একটি মাধ্যম । শিশুকে খাওয়ানোর সময় 5 মিনিট পর পর একটু বিরতি নিয়ে খাওয়ান। এবং শিশুর পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে ঢেঁকুর তুলার চেষ্টা করুন। এই পদ্ধতিতে দুধ খাওয়ালে দুধ সরাসরি পেটে চলে যায় এবং গ্যাস বুদবুদ হয়ে উপরে উঠে আসে।
৩. বাচ্চাকে যথাসম্ভব কান্না ভুলিয়ে রাখবেন
বাচ্চাদের কাঁদাবেন না। কোন কারণে কাঁদলে তাড়াতাড়ি কান্না বন্ধ করতে হবে। কারণ, কাঁদলে বাচ্চারা বায়ু গিলে ফেলে এবং তারা যত বেশি কান্নাকাটি করে, তত বেশি বায়ু পেটে চলে যায়। তাই বাচ্চাদের কান্না সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে ।
৪. পেট মালিশ করুন
শিশুদের পেটে গ্যাস না হওয়ার জন্য পেট মালিশ করতে পারেন । প্রথমে বাচ্চাকে চিত করে শোয়াতে হবে তারপর আস্তে আস্তে তার পেটে ঘড়ির কাঁটার দিকের গতিতে ঘষতে থাকুন, এভাবে উপরে নিচে তলপেটে ও মালিশ করুন। এই পদ্ধতিে মালিশ করলে অন্ত্রের মাধ্যমে পেটের মধ্যে থাকা গ্যাস সহজে বেরিয়ে যায়।
৫. গ্রাইপ জল
এটা খুবই কার্যকরি একটি পদ্ধতি। শিশুদের পেটে গ্যাস সমস্যা এবং পেট ব্যথা উপশম করতে কয়েক দশক ধরে মানুষ গ্রাইপ জল ব্যবহার করে আসছে । গ্রাইপ জল হয়তো অনেকেই চিনে না। গ্রাইপ জল হল সোডিয়াম বাইকার্বনেট, ডিল (মৌরী জাতীয় গাছের) তেল এবং চিনি একসাথে মিশিয়ে একধরনের সরবতের মত বানানো হয়। এই দ্রবণ টি মাত্র 5 মিনিটের ও কম সময়ে গ্যাস থেকে কার্যকরীভাবে মুক্তি দেয়।
৬. সরিষার তেল মালিশ
বাচ্চার পেটে সরিষা তেল দিয়ে মালিশ করতে পারেন। মালিশ করার সময় সরিষা তেল হালকা গরম করে নিতে পারেন। এবং কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করালে ও পেটে থাকা গ্যাস বের হয়ে যায়।
৭. হিং
যদি আপনার শিশুর পেটে গ্যাসের সমস্যা বেশি থাকে, তাহলে সর্ষের দানার মতো দুটি হিং-এর দানা বানিয়ে নিন এবং গরম পানিতে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ান। হিং মূলত মশলা হিসেবেই আমরা চিনি। তাই বাচ্চাকে বেশি খাওয়াবেন না। যত টুকু বলা হয়েছে তার থেকে বেশি কখনো দিবেন না।
কখন আপনি ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যাবেন?
শিশুর অবস্থা বুঝে তাকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে যেতে হবে। যদি শিশু দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি করে এবং পাশাপাশি জ্বর,বমি, খেতে না চাওয়া বা কোনোপ্রকার অস্বাভাবিক আচরণ শিশুর থেকে প্রকাশ পায় তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। যাতে শিশু মারাত্মক কোন সমস্যায় না পরে। তাই ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাওয়াবেন।
উপসংহার
শিশুরা নিজের কোন সমস্যা হলে তা মুখে প্রকাশ করতে পারে না৷ তাই আপনার উচিৎ সর্বদায় বাচ্চার খেয়াল রাখা। বাচ্চাদের গ্যাসের সমস্যা বেড়ে গেছে কিনা বা বাচ্চা অস্বাভাবিক আচরণ করছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে। এবং বাসায় বাচ্চাদের গ্যাসের ঔষধ রাখুন। নিয়মিত বাচ্চার যত্ন নিন। ধন্যবাদ
Leave a Reply