গ্যাসট্রিকের লক্ষণ কি? ও গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম (দামসহ)

গ্যাসট্রিক নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। গ্যাস্ট্রিক কে জাতীয় রোগ ও বলা হয়। গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ আমরা সবাই খাই। তাই অনেকেই নাম জানেনা বা মনে না থাকার কারনে অনলাইনে অনেক মানুষই গ্যাসট্রিক এর ট্যাবলেটের বা ঔষধৈ্র নাম খোঁজ করে থাকে।তাই তাদের জন্য আজকের এই আর্টিক্যাল কেননা আমরা আলোচনা করবো গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ ও দাম সহ গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ এর নাম সম্পর্কে।

তাই বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিক্যালটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

গ্যাসট্রিকের লক্ষণ ও দামসহ গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম

বর্তমানে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা এতটাই কমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এর জন্য এখন আর মানুষ ডাক্তারের কাছে যেতে চায়না। হালকা সমস্যা হলেই নিকটস্থ কোন ফার্মেসি থেকেই গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ এর নাম জেনে কিনে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য। গ্যাসট্রিক এর সমস্যা সবারই আছে, ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই সমস্যা দেখা দেয়।

গ্যাসট্রিকের লক্ষণ কি? ও গ্যাসট্রিকের ঔষধের নাম (দামসহ)
গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নাম

গ্যাস্ট্রিক প্রকৃতপক্ষে বড় কোনো রোগ বলা যায়না, এই সমস্যা আমরাই তৈরি করি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ কিছু বদভ্যাসের কারণে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দেয়। তবে কখনো কখনো এটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই এর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার আগে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ জানা বেশি প্রয়োজন।

গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ কি?

গ্যাস্ট্রিক হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে হজম ঠিক মত না হওয়া। আর হজম হওয়ার একমাত্র কাজ করে হল আমাদের পরিপাকতন্ত্র। পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে যেসব রোগ দেখা দেয় তার মধ্যে গ্যাস্ট্রিক অন্যতম।আর  পরিপাকতন্ত্রের মূল কাজ হচ্ছে আমরা দৈনন্দিন যেসব খাবার খাই তা ভেঙে  ঠিক মত হজম করানো।

আরো পড়ুনঃ রোজায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার কার্যকরী উপায় 

আর হজম  বলতে বুঝায় জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার ভেঙে ছোট ছোট অংশ হিসেবে পরিপাকতন্ত্র থেকে রক্তে প্রবেশ করানো।
আমরা যখন খাবার খাই আমাদের পরিপাকতন্ত্র সেই খাবার সঠিক সময়ের মধ্যে ঠিকভাবে হজম করতে না পারে তখনই আমাদের পেটে গ্যাসট্রিকের সমস্যা তৈরি হয়।

দৈনন্দিন যেসব বদ অভ্যাসের কারনে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়

  • ঘুম থেকে সকালে দেরি করে ওঠা।
  • সময় মত নাস্তা না করা।
  • অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়া।
  • অতিরিক্ত মশলাদার খাবার খাওয়া।
  • বেশি বেশি অ্যালকোহল, মদ পান করা
  • দীর্ঘ মানসিক চাপ।
  • কম পানি পান করা।

গ্যাসট্রিকের কারণে যেসব সমস্যা দেখা দেয়।

গ্যাস্ট্রিকের কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তারমধ্যে হলঃ

  • ক্ষুধা কম পায়
  • পেটে গ্যাস হয়,
  • বুক জ্বালা করে
  • পেটের মাঝখানে চিনচিন ব্যথা
  • বুক ও পেটে চাপ অনুভূত হয়
  • হজমে অসুবিধা
  • বমি হতে পারে।
  • পেট ফুলে থাকা।
  • গ্যাসট্রিকে আলসর হয়
আরো পড়ুনঃ ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ১০টি প্রাকৃতিক উপায়

গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ এর নাম

গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় আমরা নানারকম গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ বা ট্যাবলেট খেয়ে থাকি। তবে এক নাগারে কোন ঔষধ দীর্ঘদিন যাবত ডাক্তাররা খেতে নিষেধ করে থাকেন । কেননা এতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।তারমধ্যে সকলের পরিচিত একটি ঔষধের নাম হচ্ছে রেনিটিডিন। এই রেনিটিডিন আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই পেটে গ্যাসের সমস্যায় আমরা খেয়ে থাকি ।  

তবে  যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওষুধ সংস্থা এফডিএ রেনিটিডিন দীর্ঘদিন যাবত খেতে নিষেধ করে একটি সতর্কবার্তা জারি করেন।আর সেটা হল দীর্ঘদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় রেনিটিডিন গ্রহণ করলে এই ঔষধের কারণে ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। তবে রেনিটিডিন ছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আরো বিভিন্ন কোম্পানির বেশকিছু ঔষধ বাজারে প্রচলিত রয়েছে। নিচে জনপ্রিয় ১০ টি গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের নাম ও দাম উল্লেখ করা হল।

গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নামের তালিকা

   ঔষধের নাম   =  প্রতি পিসের দাম

  • রেনিটিডিন    = ২ টাকা
  • এক্সিলক ২০ = ৫ টাকা
  • ইসোটিড ২০ = ৫ টাকা
  • ওপি ২০       = ৫ টাকা
  • লোসেকটিল  = ৫ টাকা
  • রাবিপ্রাজল   = ৫ টাকা
  • সেকলো ২০  = ৬ টাকা
  • সার্জেল ২০   = ৭ টাকা
  • মাক্সপ্রো ২০  = ৭ টাকা
  • ফিনিক্স ২০   = ৭ টাকা

এখানে সব থেকে কম পাওয়ারযুক্ত ঔষধের দাম উল্লেখ করা হল। যদি তাদের পাওয়ার বাড়ানো হয় তাহলে প্রতি পিসের দাম ও বাড়বে। আর তা ছাড়া ও গ্যাস্ট্রিকের আরো ঔষধ বাজারে পাওয়া যায়।

বিঃদ্রঃ উপরে উল্লিখিত সবগুলো গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ প্রায় একইভাবে কাজ করে থাকে। তবুও দীর্ঘদিন ধরে এর কোনটিই খাওয়া ঠিক নয়। এবং ডাক্তারের পরামর্শ  ছাড়া কোন ওষুধই খাওয়া উচিত নয়।alert-info

গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

গ্যাস্ট্রিক ঔষধ খাওয়ার সাধারণত নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন ২ বেলা খেতে হবে। সকাল ও রাতে খাওয়ার ২০ মিনিট আগে। তাহলে ঔষধ ভাল কাজ করবে।

আরো পড়ুনঃ হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় ও হজম শক্তি বৃদ্ধির ট্যাবলেট
 

গ্যাসের ঔষধ চেনার উপায়

গ্যাসের বা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ চেনার সব থেকে সহজ উপায় সর্ব সাধারণের জন্য সেটা হল গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের নামের নিচে ছোট্ট করে লিখা থাকে ওমিপ্রাজল অথবা ইসোমিপ্রাজল অথবা রেবিপ্রাজল।এই তিনটা লেখা থাকলেই বুঝে নিবেন এটা গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ।  যেমনঃ মাক্সপ্রো ঔষধের নিচে দেখবেন লেখা আছে -ইসোমিপ্রাজল ২০ মি.গ্রা. আবার সেকলো ঔষধে দেখতে পারবেন ওমিপ্রাজল ২০ মি.গ্রা.

গ্যাসের ঔষধ চেনার উপায়

গ্যাসের ঔষধ বেশি খেলে কি হয়?

গ্যাসের ঔষধ অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমনঃ

  • মাথা ব্যাথা বা মাথা ঘুরা
  • Hypersensitivity প্রতিক্রিয়া
  • ভিটামিন B12 অভাব দেখা দেওয়া।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • অস্বস্তি অনুভূতি হওয়া
  • কব্জি বা মেরুদণ্ড ফ্র্যাকচার হতে পারে
  • পেটে ব্যথা হতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়া
  • এলার্জি কারণে লাল লাল ফুসকুড়ি হওয়া
  • ত্বক বা শরীর ফোলা
  • হাত বা পায়ে পানি আসা বা ফোলা
  • খাদ্যনালীতে গ্যাস জমে থাকা
  • পেশীতে ব্যাথা হওয়া।

গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির প্রাকৃতিক উপায়

গ্যাসের সমস্যা দূর করতে শুধু ঔষধই নয়, ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করলে সেই সমস্যা থেকে ও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। গ্যাস্ট্রিক খুব সাধারণ একটি সমস্যা আমরা মনে করলে ও  অন্য যেকোন রোগের চেয়েও এটা  কখনো কখনো আরো খারাপ আকার ধারণ করতে পারে। তাই জেনে নিন ঘরোয়া বা প্রাকৃতিক উপায়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার উপায়।

কলা: পরিপাকতন্ত্র বা পেট পরিস্কার রাখতে দিনে ২/৩ টা কলা খেতে পারেন। গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

জিরা: জিরা যদিও মসলা বা রান্নার কাজে লাগে কিন্তু এই জিরা পেটের গ্যাস দূরীকরণে বেশ উপকারী। আখের গুড়ের সাথে ৫০ গ্রাম জিরা মিশিয়ে ১০ গ্রাম করে পাঁচটি আলাদা আলাদা বড়ি তৈরি করে নিন। এগুলো দিনে তিনবার করে খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

ঠাণ্ডা দুধ: আমরা সবাই গরম দুধ পান করতে পছন্দ করি। কিন্তু আপনার যদি গ্যাসের সমস্যা থাকে তাহল পাকস্থলির গ্যাসট্রিক দূর করার জন্য ঠাণ্ডা দুধ পান করতে পারেন। গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য ঠান্ডা দুধ বেশ কার্যকরী।

দারুচিনি: আমরা জানি গ্যাসের মূল কারণ হচ্ছে হজম। আর সেই হজমের জন্য দারুচিনি খুবই কার্যকরী । এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে অর্ধেক চামচ দারুচিনি মিশিয়ে শরবত করে দিনে ২ থেকে ৩ বার খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং গ্যাস্ট্রিক দূরে থাকবে ।

আদা-মধু: আদা আর মধু গ্যাসাট্রিকের জন্য সব থেকে বেশি উপকারী। আদা বেটে রস করে মধুর সাথে মিশিয়ে   দুপুর ও রাতের খাবারের আগে খেতে পারেন।আর যদি সম্ভব হয় তো একটু আদা চিবিয়েও খেতে পারেন। খুবই উপকার পাবেন।

পানি: গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পানির বিকল্প কিছু নেই।যত বেশি পানি পান করবেন তত বেশি আপনার পেট ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একদম খালি পেটে যতটুকু সম্ভব হয় পেট ভরে পানি পান করুন। এভাবে যদি প্রতিদিন পান করেন তাহলে গ্যাস্ট্রিক থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন।

শেষ কথা

গ্যাস্ট্রিক যন্ত্রণাদায়ক একটি সমস্যা। গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা দেখা দিলে অলসতা করবেন না। কেননা শুরুতেই সচেতন না হলে পরবর্তীতে গ্যাস্ট্রিক থেকে আলসার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকুন। আর হালকা গ্যাসের সমস্যা হলেই ঔষধ না খেয়ে চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক উপায়ে এই সমস্যা দূর করতে। যদি তাতে না কমে তারপর ঔষধ খেতে পারেন। কারণ অতিরিক্ত ঔষধ সেবন আমাদের শরীরের ক্ষতি হয়।

তাই আমাদের উচিত  নিজের খাবার-দাবার ও চলাফেরার প্রতি নজর রাখা । আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি হলে উপরে উল্লেখিত নিয়ম গুলো মেনে চলুন। ইনশাআল্লাহ গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি পাবেন। ধন্যবাদ

আরো পড়ুনঃ ঘন ঘন প্রস্রাব কেন হয়?  ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায় 


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *