ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন: আমরা অনেক সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকি। বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের লোনের পদ্ধতি রয়েছে। যারা ব্যাংক লোন সম্পর্কে আগ্রহী তারা লোনের পদ্ধতি ও কি কি ধরনের লোন পাওয়া যায় তা জানার প্রয়োজন পড়ে। তাই আজকের আর্টিক্যালে ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (DBBL) বাংলাদেশের বহুল পরিচিত ব্যাংক গুলোর মধ্যে অন্যতম বেসরকারি বানিজ্যিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ডাচ বাংলা ব্যাংক। এটি এম. সাহাবুদ্দিন আহমদ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য ডাচ্ ফিনান্সিং সংস্থা নামক নেদারল্যান্ডের একটি কোম্পানির সাথে যৌথ উদ্যোগে ১৯৯১ সালে ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়।
এটি ব্যাংকিং সেবা দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং কোম্পানি আইন ১৯৯৪ দ্বারা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসাবে নিবন্ধিত হয়। ডিবিবিএল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ৩ জুন, ১৯৯৬ সালে। ব্যাংকটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এ ২০০৪ সালে নিবন্ধিত।
আরো পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট খুলার নিয়ম ও স্টুডেন্ট একাউন্ট এর সুবিধা।
এরপর থেকে এই ব্যাংকটি সারা দেশে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। তারপরে ২০১১ সালে তারা সর্বপ্রথম ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। পরবর্তিতে তা রকেট নামে পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ডাচ বাংলা ব্যাংক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ সকল ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংকের প্রধান সেবা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল ব্যাংক লোন। তারা বিভিন্ন ধরনের লোন সেবা দিয়ে আসছে। শিক্ষা লোন, হোম লোন, ব্যবসা লোন, স্যালারি লোন, প্রবাসী লোন ইত্যাদি দিয়ে মানুষের সেবা করে আসছে। তাই আজকের এই আর্টিক্যালে আমরা ডাচ বাংলা ব্যাংকের সকল লোন সেবা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
যেসব ক্ষেত্রে লোন নেওয়া যাবে তা হলঃ
- ব্যাক্তিগত লোন।
- হোম বা বাড়ি লোন।
- Car বা গাড়ি লোন।
- শিক্ষা লোন।
- ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রবাসী লোন।
- ডাচ বাংলা ব্যাংক ব্যবসা লোন।
- স্যালারি লোন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক পারসোনাল বা ব্যাক্তিগত লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে আপনি চাইলে ব্যাক্তিগত যে কোন কাজের জন্য লোন নিতে পারবেন। লোন নিতে হলে কিছু রেকোয়ারমেন্ট প্রয়োজন হবে। সব কিছু ঠিকঠাক হলে আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পারসোনাল বা ব্যাক্তিগত লোন নিতে পারবোন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে পারসোনাল বা ব্যাক্তিগত লোন নিতে হলে যা প্রয়োজন;
- বেতনভোগী ব্যক্তি হতে হবে।
- পেশাদার হতে হবে।
- কোন ব্যবসায়ী হতে হব।
- নিজস্ব বাড়িওয়ালা হতে হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক পারসোনাল লোনের সুবিধা সমূহ
- আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
- ব্যাক্তিগত লোনে ইন্টারেস্ট রেট ৮%।
- টেইক ওভারের করলে অর্থাৎ অন্য কোন ব্যাংক থেকে লোন হস্তান্তর করলে ইন্টারেস্ট রেট পরবে ৭.৫ শতাংশ।
- লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া এবং নিয়মাবলি খুবই সহজ।
DBBl Home বা বাড়ি লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংকের আরেকটি লোন পদ্ধতি হল হোম লোন। অর্থাৎ আপনি ডাচ বাংলা থেকে লোন নিয়ে বাড়ি কিনতে পারবেন বা তৈরি করতে পারেন। এই লোনের ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা রয়েছে তা হল:
- বাড়ি লোনের জন্য ডাচ বাংলা থেকে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন।
- ইন্টারেস্ট রেট ৮ শতাংশ।
- অন্য ব্যাংক থেকে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট ৭.৫ শতাংশ।
ডাচ বাংলা ব্যাংক গাড়ি লোন। DBBL Car Loan
ডাচ বাংলা থেকে লোনের মাধ্যমে কার ক্রয় করা যায়। কার লোনের সুবিধা আপনাদের জন্য নিচে উল্লেখ করা হল।
ডাচ বাংলা ব্যাংক কার লোনের সুবিধাসমূহ
- কার বা গাড়ি কেনার জন্য নিম্নে এক লক্ষ টাকা লোন নেওয়া যাবে।
- এবং গাড়ি কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ লোন নেওয়া যায়।
- কার লোনের ইন্টারেস্ট রেট ৮ শতাংশ।
- অন্য ব্যাংক থেকে হস্তান্তরেরর ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট ৭.৫ শতাংশ।
- মেয়াদ থাকবে সর্বোচ্চ ৫ বছর।
কার লোনের যোগ্যতা
আপনি যদি কার লোন নিতে চান তাহলে আপনার যেসব যোগ্যতা থাকতে হবে তা হলঃ
- আপনার বয়স ১৮ বছর এর উপরে হতে হবে।
- আপনার মাসিক আয় ২৫ হাজার।
- যে কোন পেশায় যুক্ত থাকতে হবে অর্থাৎ পেশাদার ব্যক্তি হতে হবে।
- ব্যবসায়ী হলে ও হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক শিক্ষা লোন স্টুডেন্ট লোন
শিক্ষা লোন সাধারণত ছাত্রদের নিয়মিত পড়াশোনার খরচ, টিউশন ফি, উচ্চশিক্ষা গমন ইত্যাদির সহায়তার জন্য শিক্ষা লোন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে । এই লোন মুলত শিক্ষার্থীর পক্ষে অভিভাবকের কাছে ঋণ অনুমোদন করা হয়ে থাকে। এই লোন নেওয়ার জন্য কিছু কাগজ পত্রের প্রয়োজন হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- জাতীয় পরিচয়/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স/জাতীয়তা/ওয়ার্ড কমিশনারের সার্টিফিকেট ফটো অ্যাটাচমেন্ট সহ।
- পরিষ্কার স্টুডিও ফটোগ্রাফ এবং বিজনেস কার্ড।
- গত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রয়োজন।
- টিআইএন সংক্রান্ত সকল নথির অনুলিপি।
- অভিভাবক বেতনভোগী হলে নির্বাহীদের জন্য পরিচয়পত্র (LOI) বা বেতন স্লিপ।
- অভিভাবক ব্যবসায়ী হলে তার জন্য ট্রেড লাইসেন্স/এমওএ প্রয়োজন।
- বাড়ির মালিক এবং জমিদার মহিলার জন্য বাড়ির মালিকানা এবং ভাড়া চুক্তির অনুলিপি।
- ঋণ বিভাগ অনুযায়ী অন্যান্য সকল কাগজ পত্র
- ব্যাংকের প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য কাগজ পত্র
ডাচ বাংলা ব্যাংক প্রবাসী লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে প্রবাসীরা ও চাইলে যে কোন প্রয়োজনে লোন নিতে পারেন। এর কিছু রেকোয়ারমেন্ট দরকার হবে।
রেকোয়ারমেন্ট সমূহঃ
- প্রবাসীদের জন্য যোগ্যতা হিসাবে অবশ্যই 18 বছর বয়সী হতে হবে। এর কম প্রযোজ্য নয়।
- আবেদনকারীকে অবশ্যই ব্যাংকের এখতিয়ারের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীর পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (পাসপোর্ট প্রস্থান এবং আগমনের সিলযুক্ত পৃষ্ঠা সহ) দরকার হবে।
- বিএমইটির স্মার্ট কার্ড বা কর্মরত দেশের আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি বা বৈদেশিক প্রস্থান বা বিদেশে কর্মসংস্থান চুক্তির প্রমাণ অথবা বৈধভাবে রেমিটেন্সের প্রমাণের কাগজ পত্র।
প্রবাসী লোনের ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়েছে যে ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন এমন একজন ন্যূনতম ব্যক্তি গ্যারান্টার হতে হবে। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীর বাবা, মা, স্বামী বা স্ত্রী, ভাই, বোন বা নিকট আত্মীয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যক্তি কে ও গ্যারান্টার হিসেবে রাখতে হবে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক ব্যবসা লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংক চালু করেছে ব্যাবসা লোন। ব্যববসায়ীরা তাদের যে কোন প্রয়োজনে ডিবিবিএল থেকে লোন নিতে পারবে।
ব্যবসা লোনের সুবিধা
- ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ব্যবসা ঋণের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৫০,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে।
- এই লোনের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত।
- ব্যবসা লোনের ইন্টারেস্ট রেট ৮% শতাংশ
- অন্য ব্যাংক থেকে হস্তান্তরেরর ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট ৭.৫ শতাংশ।
ব্যবসা লোনের শর্তাবলী
- ডাচবাংলা ব্যাংক থেকে এই ঋণ নিতে হলে একজন গ্রাহককে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- 18 থেকে 60 বছর বয়সী যে কেউ এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- এই লোনের জন্য আবেদনকারীর মাসিক আয় কমপক্ষে 20 হাজার টাকা হতে হবে।
ডাচবাংলা ব্যাংক থেকে ব্যবসা লোন গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হল:
- ভোটার আইডি কার্ড/ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি
- লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন (চাকরীজিবীদের জন্য) বৈ’ধ পাসপোর্ট
- বেতন হিসাবের বিবরনী, বিজনেস কার্ড
- অফিস আইডি
- ট্যাক্স সার্টিফিকেট
- ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স।
- সর্বশেষ ১ বছরের ব্যাংক হিসাব
- টিএন্ডটি
- মোবাইল ফোন
- অন্যান্য ইউটিলিটি বিলের কপি
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজে’র ছবি।
ডাচ বাংলা ব্যাংক স্যালারি লোন
ডাচ বাংলা ব্যাংক অন্যান্য লোনের মত স্যালারি লোন ও চালু করেছে। এই লোনে ও বেশ সুযোগ সুবিধা রয়েছে।
স্যালারি লোন নেওয়ার যোগ্যতা:
- পার্থীর বয়স 18 থেকে 60 বছরের মধ্যে হতে হবে।
- লোন চাওয়া কর্মচারীরা ন্যূনতম মাসিক বেতনের জন্য 10,000 টাকা আবেদন করতে পারেন।
- তবে আপনি সর্বোচ্চ 20 লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
- এই ঋণ নিতে হলে ডিবিবিএলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
- এবং ঋণগ্রহীতাকে এক ধরনের নিরাপত্তা দিতে হবে।
স্যালারি লোন নেওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্রের প্রয়োজন:
- একটি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
- ভোটার আইডি বা পাসপোর্টের ফটোকপি।
- আয় এবং পেশার প্রমাণ।
- অফিসের পরিচয়পত্রের কপি এবং পরিচয়পত্র / পে-স্লিপ / বেতন বা চাকরিপ্রাপ্তদের বেতন সনদ ইত্যাদি।
- পেশাদারদের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ডিগ্রির সার্টিফিকেট।
- ৬ মাসের ব্যাঙ্ক হিস্ট্রি / স্টেটমেন্ট।
- ব্যক্তিগত গ্যারান্টি।
- ই-টিন বা টিনের সার্টিফিকেট ।
- অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং নিরাপত্তা।
ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম
- প্রত্যেক গ্রাহক তার লোন এর পরিমান এর ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে নির্ধারিত মাসিক কিস্তির মাধ্যমে লোন পরিশোধ করবে।
- প্রত্যেক লোনের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা মাসিক কিস্তি নির্ধারিত হতে পারে।
- প্রত্যেক লোনের ক্ষেত্রে ইন্টারেস্ট রেট ভিন্ন হতে পারে।
ডাচ বাংলা ব্যাংক হেল্প লাইন
আপনি যদি যে কোন লোন নিতে চান তাহলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের যে কোন শাখায় সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারেন। অথবা লোন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় গুলো পরিপূর্ণভাবে জেনে নিতে চাইলে, ডাচ বাংলা ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার নাম্বারে কল করে ও জেনে নিতে পারেন। কাস্টমার কেয়ার নাম্বার 16216 অথবা 09666716216
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত সকল লোনের রিকোয়ারমেন্ট যদি আপনার সাথে মিলে বা আপনি যে লোন নিতে চান তার সমস্ত রিকোয়ারমেন্ট যদি আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে আপনি ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে লোন সেবা নিতে পারবেন। আশা করি ডাচ বাংলা ব্যাংক লোন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
তথ্য সুত্রঃ www.dutchbanglabank.com
Leave a Reply