চিরতরে মাথার খুশকি দূর করার উপায়ঃ ছেলেদের চুলে বা মাথায় খুশকি হওয়া টা অস্বাভাবিক কিছু না। এটা ছেলে মেয়ে বা ছোট বড় সবার মাথায় খুশকি হয়ে থাকে।চুলে খুশকি হওয়াটা সব থেকে বড় এবং বিরক্তিকর একটি সমস্যা। খুশকি হলে চুলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। মাথায় প্রচণ্ড চুলকানি, চুল ঝড়ে পড়া, চুল পেকে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। আর তাই আমাদের জানতে হবে খুশকি হওয়ার কারণ কি? এবং চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় । আমাদের মাথার ত্বকে এক ধরণের ফাঙ্গাস বাসা বাঁধে যার ফলে আস্তে আস্তে চুলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।
খুশকি কি?
প্রাকৃতিকভাবে আমাদের মাথার ত্বকে কিছু নতুন কোষ উৎপন্ন হয় এবং পুরোনোগুলো ঝড়ে পরে । এই প্রক্রিয়াটি সাধারণ চক্র হিসেবে সবসময় চলতে থাকে। আর এই পুরোনো মৃত কোষগুলো যখন ঝরে পরে তখন ত্বকের সাথে কিছু জমে থাকে এবং সাদা আঁশের মত অস্তিত্ব প্রকাশ করে এবং পুরো মাথা ভরে যায় তখন আমরা এটাকে খুশকি বলি।
আরো পড়ুনঃ
🔵 শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন যেভাবে নিবেন। ছেলেদের ত্বকের সেরা ৫ টি ক্রিম।
🟣 চুল পড়ার কারণ কি ও তার আধুনিক চিকিৎসা ২০২২
খুশকি হওয়ার পর তা দীর্ঘদিন মাথায় থাকলে তা থেকে চুলকানির দেখা দেয় এবং এর থেকে চুল ঝড়ে পড়া এবং মাথায় ক্ষতস্থান তৈরি হওয়া চুলের সুন্দর্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আমাদের প্রথমেই উচিত খুশকি দূর করার উপায় জানা এবং সেই অনুযায়ী পরিচর্যা নেয়া।
মাথায় খুশকি হওয়ার কারণ কি?
খুশকি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। খুশকি হওয়াটা কোন রোগ বা কোন রোগের লক্ষণ নয় তারপর ও আমরা এটা নিয়ে সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি । মাথার ত্বকের পুরোনো মৃত কোষগুলো জমে থাকে এবং ছত্রাকের প্রভাবে খুশকি বা আবর্জনায় পরিনত হয়ে থাকে। এছাড়াও মাথায় আরো বিভিন্ন কারণে খুশকি হতে পারে তা নিচে উল্লেখ করা হলঃ
১. রুক্ষ-শুষ্ক ত্বক
শীতে আবহাওয়ায় আমাদের শরিরের ত্বক রুক্ষ ও শুস্ক হয়ে যায়। শীতে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় আমাদের দেহের ত্বকের পাশাপাশি মাথার ত্বকও রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। এর ফলে শীতের সময়ে অনেকের মাথায় খুশকি বেশী দেখা দেয় । এছাড়া এ সময় বাইরের ঠান্ডা বাতাস ও ঘরের উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে তাপমাত্রার যে সামাঞ্জস্যহীনতা লক্ষ্য করা যায়, এতেও খুশকি হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে।
২. অতিরিক্ত তেল ব্যাবহার
অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাথায় সবসময় তেল দেয় বা মাথায় অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করেন তাদের খুশকি হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি থাকে। মাত্রাতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলে তেল আস্তে আস্তে স্তুপ আকার ধারণ করে। চুলের গোড়ায় তেল জমা হয়ে শুকিয়ে পরবর্তীতে সেখানে ছত্রাক আক্রমণ করে । যার ফলে তেলের স্তুপ থেকে মাথায় খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়।
৩. চুলের যত্ন না নেয়া
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা চুলের যত্ন নেয়না। নিয়মিত চুল আঁচরায় না যত্ন নেয়না। যদি চুলের যত্ন না নেওয়া হয় এবং কম আঁচড়ানো হয় তাহলে মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলো আপনা আপনি ঝড়ে পরেনা মাথায় জমে থাকে । ফলে এগুলো ঝড়ে না পড়ার ফলে খুশকি তৈরি হয় অন্যদিকে চুলে নিয়মিত শ্যাম্পু না করলে মাথার ত্বক, চুল অপরিষ্কার থাকে। এর ফলেও মাথায় খুশকির প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।এর মধ্যে একটা মাথার খুশকি। আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে খুশকির প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। তারপর কিছু রোগের কারণেও খুশকির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
এক গবেষণায় দেখা যায়, যে প্রায় ১০.৬% মানুষ যাদের HIV সমস্যা আছে তাদের খুশকির সমস্যা ও বেশি হয়ে থাকে।
৫. খাদ্যাভাসের অনিয়মের কারণে
খাদ্যাভাসের অনিয়মের কারণে খুশকি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নিয়মিত খাবার না খেলে এবং খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ও জিংক না থাকলে খুশকি হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। পাশাপাশি অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাদ্য খেলে খুশকি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।
৬. ধুলাবালির কারণে
রাস্তায় বের হলে দেখা যায় ধুলাবালির অভাব নেই। এই ধুলাবালি মাথায় জমে থাকে যার থেকে মাথায় খুশকি হয়।
৭. অন্যান্য কারণ
তা ছাড়া ও বিভিন্ন কারণে খুশকি হতে পারে। একেকজনের একেক কারণে খুশকি হতে পারে।কখনো অতিরিক্ত মানসিক চাপ খুশকি সমস্যার একটি অন্যতম কারণ হতে পারো । আবার অনেক সময় গোসল বা খাবারের পানির সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে। যে পানিতে অতিরিক্ত ক্লোরিন আছে এমন পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বক খুব দ্রুত শুষ্ক হয়ে যায়। যার ফল মাথায় খুশকি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।
খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি দূর করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। আমরা বাজারে খুশকি দূর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রচলিত প্রচুর শ্যাম্পু ও প্রোডাক্ট রয়েছে। আপনি টাকা খরচ না করে ও ঘরোয়া উপায়ে কিছু নিয়ম অনুসরণ করে আপনি মাথার খুশকি দূর করতে পারবেন । এর ফলে আপনার অতিরিক্ত টাকা খরচ কম হবে এবং কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ও সমস্যা হবে না।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়
১. নারিকেল তেল ব্যবহার করুন
আমরা সবাই জানি নারিকেল তেল খুবই উপকারি মাথার জন্য এমনকি এই তেলই সকলের নিকট মাথার তেল হিসেবেই পরিচিত।আমাদের মাথার একাধিক স্বাস্থ্য উপকারের জন্য সুপরিচিত নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এই তেল খুশকি দূর করতে দারুণ কাজ করে থাকে। কেননা নারিকেল তেল ত্বকের মধ্যে থাকা হাইড্রেশন সহজেই উন্নত করতে পারে এবং শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে দারুণ ভাবে কাজ করতে পারে যা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
২. অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন
ত্বকের সুরক্ষায় অ্যালোভেরার ব্যবহারের উপকারিতা আমরা সবাই জানি। কেননা তা প্রাচীনকাল থেকেই ত্বক সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যালোভেরা তে রযেছে এমন কিছু উপাদান যা আপনার রুক্ষ-শুষ্ক ত্বককে মসৃণ ও কোমল ত্বকে পরিবর্তন করতে পারে ।
আমরা জানি যে এক ধরণের ফাঙ্গাস রয়েছে যা আমাদের মাথায় খুশকির উদ্ভব ঘটায়। অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যগুলো খুশকি উদ্ভব ঘটাতে বাধা দেয় এবং খুশকি থেকে রক্ষা করতে পারে।
৩. মানসিক চাপ কমান
মানসিক চাপ এমন একটি মারাত্মক সমস্যা যা শুধু মাথার খুশকি না আপনার শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে সাহায্য করবে এবং আপনার স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার অবনতি ঘটাবে। এই মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত টেনশন দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।আর মাথার খুশকি তৈরির ক্ষেত্রে মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত টেনশন সরাসরি প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। তবে এটি মাথার ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানির মতো লক্ষণগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা পরবর্তীতে খুশকিতে পরিনত হয় ।
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় । এর ফলে আপনার শরীরে কিছু ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেয় এবং আপনার ত্বকের অবস্থার সাথে লড়াইয়ের ক্ষমতা কমে যায়, যা খুশকি সৃষ্টি করতে সহায়তা করতে পারে।
৪. চা গাছের তেল ব্যবহার করে দেখুন
চা গাছের তেল এটার সাথে সবাই হয়তো পরিচিত না ও হতে পারি। কিন্তু এই চা গাছের তেল মুখের ব্রণ থেকে সোরিয়াসিস পর্যন্ত বিভিন্ন অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে । এতে রয়েছে বেশ শক্তিশালী অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কিছু উপাদান। যা আমাদের মাথার খুশকির লক্ষণগুলো হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে।
একবার একটি গবেষণাকারী দল এই চা গাছের তেল নিয়ে পরিক্ষা করে তারা দীর্ঘ ৪ সপ্তাহের পরীক্ষা চালায়। তারা চা গাছের তেল প্রতিদিন ১২৬ জনের মাথায় প্রয়োগ করে এর প্রভাব বা কার্যকারিতা লক্ষ্য করে। দেখা যায়, চা গাছের তেল মাথার খুশকি লক্ষণগুলোর তীব্রতা ৪১% কমিয়ে ফেলে এবং এর সাথে মাথার চুলকানি ও কমিয়ে দেয়।
৫. মাথায় অ্যাপল সিডার ভিনেগার লাগান
অ্যাপল সিডার ভিনেগার বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা বা রোগ মুক্তির জন্য তার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ব্যবহার হয় ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নতিকরণ এবং ওজন কমাতে । অ্যাপল সিডার ভিনেগার এর মধ্যে থাকা উপাদান আমাদের মাথার খুশকি থেকে মুক্তি পেতে প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে খুবই ভাল কাজ করে। এর মধ্যে থাকা উপাদান ছত্রাক এর বিরুদ্ধে লড়াই করে খুশকি উদ্ভব ঘটাতে বাধা প্রধান করে।
আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহারের নিয়ম হল, আপনি যখন শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন তখন এর সাথে কয়েক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার যুক্ত করতে পারেন। অথবা আপনি ব্যবহৃত তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন বা সরাসরি চুলে স্প্রে করতে পারেন।
৬. মেহেদি দিন
খুশকি দূর করতে মেহেদি পাতা খুবই উপকারি। মেহেদি পাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে রাখুন চাইলে সাথে দই ও দিতে পারেন তারপর কিছুক্ষণ পরে ধুয়ে ফেলুন শুধু খুশকি নয় মাথা ঠান্ডা হবে, চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুল শক্ত ও মজবুত হবে।
চুলের খুশকি দূর করার আরো কিছু উপায়
- যাদের মাথায় বা চুলে সবসময় খুশকি বেশি হয়ে থাকে তারা নিয়মিত গোসলের সময় চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
- যখন বাহিরে বের হবেন তখন ধুলোবালি থেকে রক্ষার জন্য মাথা ঢেকে যাবেন।
- চুলের খুশকি দূর করতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করতে পারেন । এজন্য শরীরের ত্বক বা মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খেতে পারেন এবং এরই সাথে অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
- নিয়মিত চুলের যত্ন নিন কেননা চুল অপরিষ্কার থাকলে খুশকি বেশি হয়। তাই নিয়মিত চূল পরিস্কার রাখুন।
- গোসলের পর যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। এবং চুল শুকানোর জন্য ফ্যানের বাতাস সব থেকে ভাল ।
ছেলেদের মাথার খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
- ক্লিয়ার অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
- হেডেন সোল্ডার অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
- ডাভ এন্টি ড্যানড্রাফ সুদিং শ্যাম্পু।
- ট্রেসেমি অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
- প্যান্টিন প্রো ভিটামিন b3 এন্টিড্যান্ড্রাফ শ্যাম্পু।
- লরিয়াল প্যারিস সিক্স অয়েল নারিশ অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
- পতঞ্জলি অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু।
- দ্যা বডি শপ শিয়া বাটার শ্যাম্পু।
শেষ কথা
ছেলেদের মাথায় খুশকি হওয়াটা সাভাবিক বিষয় । তাই খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করতে হবে । কেননা খুশকি থেকে মাথা চুলকানি, চুল পড়াসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিয়মিত চুলের যত্ন নিন এবং যদি বেশি সমস্যা দেখা দেয় মাথার ত্বকের তাহলে স্কিন এর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ধন্যবাদ
Leave a Reply